মৃত ব্যক্তির কবরে তালক্বীন দেয়া খাছ সুন্নত মুবারক (৫)
, ১১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
যেমন, এ প্রসঙ্গে সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই বর্ণনা করেন, “আমার এক প্রতিবেশি পীর ভাই, যিনি তরীক্বার আইন-কানুন পুরোপুরী মেনে চলতেন না, হঠাৎ তিনি ইন্তিকাল করলেন। নিয়ম অনুযায়ী উনাকে কাফন-দাফন করে প্রত্যেকে যে যার কাজে চলে গেলেন। কিন্তু কৌতুহল বশতঃ আমি কবরের পাশেই দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে খানিকক্ষণ বসে রইলাম। এমন সময় আমি লক্ষ্য করলাম- দু’জন ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা এসে কবরে অবতরণ করলেন, দেখেই বুঝতে পারলাম উনারা আযাবের ফেরেশতা। কবরে নেমেই উনারা আমার পীর ভাইকে শাস্তি প্রদানে উদ্যত হলেন। এমন সময় আমি দেখতে পেলাম- আমার সম্মানিত পীর ও মুর্শিদ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই সেই কবরে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, “এ লোককে শাস্তি প্রদান করতে পারবেন না, কারণ এ আমার মুরীদ।” হযরত ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনারা তখন মহান আল্লাহ্ পাক উনার বন্ধুর সম্মানার্থে চলে গেলেন, কিন্তু একটু পরেই আবার ফিরে এসে বললেন, “হুযূর! এ লোক আপনার মুরীদ, একথা সত্য, কিন্তু সে আপনার তরীক্বার কাজ হতে বিরত ছিলো।” তখন আমার সম্মানিত পীর ও মুর্শিদ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তার কাজ যাই হোক, সে তার জাত বা অস্তিত্বকে আমার নিকট সমর্পণ করায় তার কাজ আমার কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে। অতএব, তার রক্ষণাবেক্ষণ আমার কর্তব্য।” আমার সম্মানিত পীর ও মুর্শিদ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফেরেশতাদেরকে উনার বক্তব্য মুবারক পেশ করার সাথে সাথেই ফেরেশতাদের প্রতি মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুম হলো, “তোমরা চলে এসো, তাকে শাস্তি দিওনা। আমি আমার বন্ধুর সম্মানে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ (আনিসুল আরওয়াহ্)
উপরোক্ত সকল দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরে তালক্বীন দেয়া মুস্তাহাব ও সুন্নত। আবার যখন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কবরে তালক্বীন দেয়া হয় তখন মুনকার ও নাকীর ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনারা পরস্পর পরস্পরের হাত ধরে বলেন যে, তাকে প্রশ্ন করে কি হবে, তাকে তো সব শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। চলুন আমরা চলে যাই। অর্থাৎ তালক্বীনের কারণে মৃত ব্যক্তি সুওয়াল-জাওয়াব থেকে নিস্কৃতি বা নাযাত লাভ করে।” সুবহানাল্লাহ্! কাজেই কোন ব্যক্তির ইন্তেকালের পরে তার আত্মীয় স্বজন যারা জীবিত, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা, ছাওয়াব রেসানী করা, তার ক্ষমার বন্দবস্ত করা। আর কবরের তালক্বীন তারই একটি অন্যতম মাধ্যম।
দলীলসমূহঃ (১) মুসলিম শরীফ, (২) তিরমিযী শরীফ, (৩) নাসাঈ শরীফ, (৪) আবূ দাউদ শরীফ, (৫) সুনানু ইবনু মাজাহ শরীফ, (৬) মুসনাদে আহমদ শরীফ, (৭) ইবনে আবী শায়বা, (৮) বাইহাক্বী শরীফ, (৯) বাগবী, (১০) আবূ নাইম, (১১) আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববরানী ১০/৩৯৬, (১২) ত্ববরানী ১২/২৫৪, (১৩) কানযুল উম্মাল, (১৪) মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মামবাউল ফাওয়ায়িদ ৩/৬৫) (১৫) শুয়াবুল ঈমান ১০/৩০১, (১৬) মেশকাতুল মাসাবীহ, (১৭) দায়লামী শরীফ, (১৮) তাফসীরে মাযহারী, (১৯) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (২০) তাফসীরে হাক্কী (২১) আছনাল মাত্বালিব ফী শরহে রওদ্বিত ত্বালিব ১/৩২৯, (২২) কাশফুল ক্বিনা’ আ’ন মাতানিল ইক্বনা’ ৪/৪০৩) (২৩) রদ্দুল মুহতার ৬/২২০, (২৪) হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার ২/১৯১, (২৫) শরহে তানবীরুল আবছার (২৬) মারাকিউল ফালাহ বি ইমদাদিল ফাত্তাহ শরহে নূরুল ইযাহ ওয়া নাজাতিল আরওয়াহ ১/২২৪ (২৭) আল ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহূ ২/ ৫৯৮, (২৮) শরহে ফতহুল ক্বাদির (২৯) তুহফাতুল হাবীব আলা শরহেল খতীব ৬/১৯৬) (৩০) আল আযকারুন নবুবিয়্যাহ (৩১) আদ্বওয়াউল বায়ান ফী ঈদ্বাহিল কুরআন ৬/১৪০, (৩২) ফতহুল আযীয, (৩৩) আল ইক্বনা’ ফী হিল্লি আলফাজি আবী সুজা’, (৩৪) আল মাজমূউ শরহিল মুহাজ্জাব, (৩৫) হাশিয়াতু ক্বালুবী ওয়া উমায়রাহ, (৩৬) দলীলুল মুহতাজ শরহিল মিনহাজ, (৩৭) আশ শারহুল কাবীর, (৩৮) রওদ্বাতুত ত্বালিবীন ওয়া উমদাতুল মুফতিয়ীন, (৩৯) শরহুল বাহজাতিল ওয়ারদিয়্যাহ, (৪০) আল ইক্বনা’ ফী ফিক্বহি হাম্বল, (৪১) ফাতওয়াল আযহার, (৪২) ফাতওয়া দারুল ইফতা আল মিছরিয়্যাহ (৪৩) আনিসুল আরওয়াহ্) (৪৪) আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ১/৩৯৮, (৪৫) দুরারুল হুক্কাম শরহে গুরারুল আহকাম ২/২৪৪, (৪৬) মাওয়াহিবুল জালীল লি শারহি মুখতাছিরুল খলীল ইত্যাদি)¬¬
-হাফিযুল হাদীছ মুহম্মদ ফজলুল হক্ব
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)