মুসা বিন আবী গাসসান: হার না মানা এক অকুতোভয় মুসলিম সিপাহী
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
এই যুবকদের নেতৃত্বে ছিলেন মুসা বিন আবী গাসসান নামক এক যুবক। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, খ্রিষ্টান শাসক জেনে রাখুক! আরবদের জন্মই হয়েছে বর্ষা নিক্ষেপ ও ঘোড়ায় আরোহনের জন্য। শত্রুদের বিলাসবহুল প্রাসাদে অবস্থান করার চাইতে তাদেরকে প্রতিরোধ করে গ্রানাডার কোনো ভাঙা দেয়ালের নিচে নিজের কবর নির্ধারণ করা আমার কাছে অধিক প্রিয়।
শুরু হলো যুবকদের প্রতিরোধ। এদিকে আল হামরা প্রাসাদে বসে ইতিপূর্বে করা নিজের ভুলের মাশুল দিচ্ছিলো দূর্বল শাসক সুলতান আবু আব্দুল্লাহ। টানা সাত মাস যুবকদের সাথে খ্রিষ্টান বাহিনীর লড়াই চলতে থাকে। ফার্ডিন্যান্ডের বাহিনী গ্রানাডার বাইরে থাকা গ্রামগুলোর উপর হামলা করে সব কয়টি গ্রাম দখর করে নেয়। শুধু ফাখখার নামক একটি গ্রাম তারা দখল করতে পারছিলো না। এই গ্রামের দখলকে কেন্দ্র করে মুসলিমবাহিনীর সাথে তাদের বেশ কয়েকটি লড়াই হয়। খ্রিষ্টানদের অনেক সেনা নিহত হয়। তবুও তারা গ্রামটির দখল নিতে পারছিলো না। মুসলমানরা কৌশলে খ্রিষ্টান শিবিরে গেরিলা হামলা চালাতে শুরু করলেন।
অবরোধ ও প্রতিরোধও দীর্ঘ হয়ে ওঠে। মুসলমানদের সেনা সংখ্যাও কমে থাকে। শীতের শুরুতে তীব্র তুষারপাত শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় বাশারাহগামী সড়ক। ফলে বাহির থেকে গ্রানাডায় রসদ আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য। সুলতান আবু আব্দুল্লাহ তখন সব ছেড়ে নিজের পরিবারের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল করতে শুরু করেন। অবরোধের শুরুতেই সুলতান ও তার চাটুকার আমীররা নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রানাডা থেকে পালাচ্ছিলো। গ্রানাডার পরিস্থিতি অনেক খারাপ হতে থাকে। তখন শহরের কিছু ব্যক্তি একত্রিত হয়ে সুলতানের কাছে গিয়ে তাকে আত্মসমর্পনের ঘৃণ্য আহ্বান জানায়। আবু আব্দুল্লাহ কাপুরুষতার সহিত এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফার্ডিন্যান্ডের কাছে দূত পাঠায়। উভয়পক্ষের মধ্যে ৬৭টি চুক্তি হয়। চুক্তিগুলোর মধ্যে ছিলো- খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের মসজিদে প্রবেশ করবে না, মুসলমানদের আদালত ও বিচারকার্য শরীয়াহ অনুসারেই হবে, কোনো মুসলমানকে ধর্মান্তরিত করা যাবেনা, মুসলমানদের সম্পত্তির মালিকানা থাকবে মুসলমানদের হাতেই, খ্রিষ্টানরা মুসলমান হলে তাকে বাধা দেয়া যাবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই চুক্তির সংবাদ পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মুসা বিন আবী গাসসান। তিনি তৎক্ষনাত সুলতানের প্রাসাদে উপস্থিত হয়ে সুলতান ও আমীরদের লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা কি নারী শিশুদের জন্য কান্না রেখে যাচ্ছেন? আমরা পুরুষ, আমাদের রয়েছে অন্তর, যা অশ্রু প্রবাহের জন্য নয়। বরং দুশমনদের রক্ত প্রবাহিত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। হায়! গ্রানাডার সম্ভ্রান্তরা আজ প্রতিরোধযুদ্ধে যেতে ভয় পাচ্ছে। এই বলে তিনি থামলেন। পুরো দরবারে পিনপতন নীরবতা। তিনি আবার বললেন, আপনারা নিজেদের ধোঁকা দিবেন না। খ্রিষ্টানরা কখনই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে না। এই নগরীতে নেমে আসবে ধ্বংস, লুণ্ঠিত হবে আমাদের বসতবাড়ি, সম্ভ্রম হারাবে আমাদের মা-বোনরা। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বন্দীশালা, চাবুক ও জিঞ্জির। আজ যারা সৌভাগ্যের শাহাদাতকে ভয় করছে তারা শীঘ্রই এই নির্যাতনের মুখোমুখি হবে। আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি কখনোই এসব প্রত্যক্ষ করবো না। কারণ আমি তোমাদের দলে নই।
এই বলে মুসা বিন আবী গাসসান দরবার ত্যাগ করলেন। তিনি বাড়িতে যান এবং অস্ত্রসজ্জ্বিত হয়ে বেরিয়ে আসেন এবং একাই খ্রিষ্টানদের ১৫ জনের একটি দলের উপর আক্রমন করেন। এরপর অনেককেই জাহান্নামে পাঠিয়ে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। উনার পুরো শরীর টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আর গ্রানাডারও পতন ঘটে। খ্রিষ্টানরা সকল চুক্তিই ভঙ্গ করে। ইতিহাস যার রক্তসাক্ষী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)