বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
, ৩০ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মুসলমান উনাদের মধ্যে লিখিত প্রথম ও প্রধান বিষয় ছিল পবিত্র কুরআন শরীফ বা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে পবিত্র ওহী মুবারক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিল। এটি লক্ষ্যণীয় যে পবিত্র কুরআনুল কারীম উনার প্রথম বাণী মুবারক হচ্ছে-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
পড়ুন আপনার মহান রব তায়ালা উনার নাম মুবারকে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর বলেছেন-
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত থেকে। তারপর বলেছেন-
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ
পড়ুন আপনার মহান রব তায়ালা বড়ই মহিমান্বিত। যিনি কলম দিয়ে শিখিয়েছেন। তারপর বলেছেন-
عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন এমন জ্ঞান যা সে জানতো না।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও নায়েবে রসূল, ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া উনারা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুসন্ধান ও চর্চা করতে উৎসাহিত করেছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اُطْلُبُوْا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّيْنِ
“জ্ঞান অন্বেষণের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীন দেশেও যাও। ”
পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাসমূহ উপলব্ধি করা সমস্ত মুসলমানদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ, সাক্ষরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং দ্বীনি শিক্ষার বিদ্যাপীঠসমূহ স্থাপিত হতে থাকে। পবিত্র কুরআন শরীফ শেখানোর জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তির প্রয়োজন হচ্ছিল।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি চালু করা হয়েছিল, যার মধ্যে অধিকাংশগুলো মসজিদের সাথে সংযুক্ত ছিল।
আরবী-ইসলামী বইয়ের বিকাশের বড় প্রেরণা ছিল কাগজ তৈরির শিল্পের আমদানি। দ্বিতীয় হিজরী শতকের শেষের দিকের আরবী বইগুলি পার্চমেন্ট এবং প্যাপিরাসে লেখা হয়েছিল। কাগজ তৈরির কৌশলটি বাগদাদে ব্যবহৃত হচ্ছিল প্রায় ১৮০ হিজরী (১৬৭ শামসী, ৮০০ খ্রিস্টাব্দে) এবং কাগজ তৈরির প্রক্রিয়াটির জ্ঞান ইসলামী বিশ্বে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, একটি বিষয়ে লেখার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কাগজ পাওয়া যেত এবং লিখিত কাজের আরও কপি তৈরি করা হত, যাতে বিভিন্ন স্থানের মুসলমানদের কাছে সহজেই বিতরণ করা যেতে পারে।
কাগজের প্রচলনের সাথে সাথে ইসলামী শহরগুলিতে বইয়ের দোকান সংখ্যা বাড়তে থাকে। এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ তারা আজকের প্রকাশকদের ভূমিকা পালন করেছিল এবং এই বইয়ের দোকানগুলো ছাত্র, আলিম, স্কলার এবং বই-বিক্রেতাদের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া এসব দোকান ছিল লেখালেখি, অনুলিপি তৈরি ও অনুবাদের কেন্দ্র। উদাহরণস্বরূপ, চতুর্থ হিজরী শতকে বাগদাদে একশর বেশি বইয়ের দোকান ছিল।
পারস্য সাম্রাজ্যের উপর সম্মানিত ইসলাম উনার বিস্তার আরবী সংস্কৃতিকে সরাসরি ফারসি সাহিত্যের সংস্পর্শে নিয়ে আসে। প্রথম হিজরী শতকে পার্সিয়ান সাহিত্যের সাথে গ্রীক বিজ্ঞান ও দর্শনের সাথেও সংযোগ ঘটেছিল। এর ফলে বেঁচে থাকা অধিকাংশ গ্রীক পা-ুলিপির আরবী ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। মুসলমানগণ শুধু অনুবাদকই ছিলেন না; উনারা অনেক বিদ্যমান বিজ্ঞানের পাশাপাশি জ্ঞানের নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবনে উনাদের নিজস্ব নতুন অবদান রেখেছেন। উনারা মহাকাশবিদ্যা, চিকিৎসা, পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোনমিতি, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক শাখার ব্যাপকভাবে উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই অবদান ছিল মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে উনাদের প্রধান অবদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত অবদান। উল্লিখিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক শাখার কারণে, ইসলামী সভ্যতার প্রাথমিক যুগে প্রচুর পরিমাণে লিখিত সম্পদ সঞ্চিত হয়েছিল। এই লিখিত সম্পদ সংগ্রহ, ব্যবস্থা এবং সংরক্ষণের জন্য নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়েছিল। ফলে সে সময় অনেক মসজিদ লাইব্রেরির সৃষ্টি হয়েছিল এবং পাশাপাশি বেসরকারি, সরকারি ও একাডেমিক লাইব্রেরির বৃদ্ধি ঘটেছিল। যা ইসলামী সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
ছবি: বিন ইউসুফ মাদরাসা (১০ম হিজরী; ১৬শ ঈসায়ী), মারাক্কেশ
ছবি: বু ইনানিয়া মাদরাসা, ফেজ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)