ইতিহাস
মুশরিক জমিদারীর বিভৎসতা: আমেরিকার স্লেভ মাষ্টারদের পরেই বাংলার জমিদাররা ছিলো ইতিহাসের নৃশংসতম শাসক গোষ্ঠী
, ১৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১০ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস
বাংলার মুশরিক জমিদাররা যেসব কর গরীব প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করতো তা ছিলো অবিশ্বাস্য। ভার্চুয়ালী সাধারণ মানুষ ছিল জমিদারদের দাস। স্বপন বসু তার “গণ অসন্তোষ ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ“ বইতে তার কিছু নমুনা উল্লেখ করেছে। যেমন-
১. গরুর গাড়ি করে মাল পাঠালে ধুলো উড়তো, তাই গাড়ির মালিককে যে কর দিতে হত তার নাম ‘ধুলট’।
২. প্রজা নিজেদের জায়গায় গাছ লাগালেও তাকে একটি কর দিতে হত, তার নাম ‘চৌথ’।
৩. গরীব প্রজারা আখের গুড় তৈরী করলে যে কর লাগত তা ‘ইক্ষুগাছ কর’।
৪. কোন প্রজার গরু মোষ মরে গেলে ভাগাড়ে সেই মৃত পশু ফেলার পর যে কর লাগত তা হল ‘ভাগাড়ে কর’।
৫. নৌকায় মাল উঠালে বা নামালে সে করের নাম ছিল ‘কয়ালী’।
৬. ঘাটে নৌকা ভিড়ালে একটি কর লাগত তার নাম ‘খোটাগাড়ৌ কর’।
৭. জমিদারের সঙ্গে দেখা করতে হলে একরকমের কর দিয়ে সম্মান জানাতে হত, তার নাম ‘নাজরানা’।
৮. জমিদার কোনও কারণে হাজতে গেলে তাকে ছাড়িয়ে আনতে প্রজাদের একটি কর দিতে হত, তার নাম ‘গারদ সেলামি’ ইত্যাদি।
৯. মুসলমান দাড়ি রাখলে কর দিতে হত।
১০. কোন মুসলমান গোঁফ খাটো করলেও কর দিতে হত।
১০. যে কোনো প্রকারের মসজিদ নির্মাণের আগে মসজিদের আকারের বিচারে নূন্যতম পাঁচশত থেকে এক হাজার টাকা হারে কর দিতে হত।
১১. মুসলমান নাম রাখলে নামের জন্য কর দিতে হত।
১২. মুসলমানদেরও বাধ্যতামূলকভাবে কালি পূজায় চাঁদা দিতে হত।
এছাড়া জমিদারের বাড়ির সামনে দিয়ে ছাতি মাথায় দিয়ে কিংবা জুতা/স্যান্ডেল পরে হাঁটার অনুমতি ছিল না।
পবিত্র কুরবানীর সময় আসলে কুরবানী করতে বাধা দেওয়াতো ছিলো স্বাভাবিক ঘটনা।
১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাবার পরে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারদের এই অনাচার জারি ছিলো। ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগ সরকার গঠন করে। তাদের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিল জমিদার তন্ত্রের অবসান।
১৯৫০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল পাশ হয়। পরদিন এ খবর ছাপিয়ে দৈনিক আজাদ শিরোনামে লেখে-
❝ পূর্ববঙ্গের সাড়ে ৪ কোটী অধিবাসীর বুকের উপর হইতে জমিদারী প্রথার জগদ্দল পাথর অপসারিত; দেশের শোষিত ও নিগৃহীত জনসাধারণের অর্থ-নৈতিক মুক্তির সূচনা; বৃহস্পতিবার পূর্ববঙ্গ পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল গৃহীত; মুসলিম লীগ এর বহু আকাঙ্খিত স্বপ্নসাধ বাস্তবে রূপায়িত। ❞
এই গৃহীত বিলটিই ১৯৫১ সালের ১৬ মে গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন এক সরকারি আদেশে অ্যাক্টে পরিণত করেন।
২০০ বছর পরে বাংলার মুসলমানেরা আবার জমির মালিক হয়। ২০০ বছর পরে বাংলার মুসলমানেরা কলকাতার মুশরিক জমিদারের প্রজা থেকে নাগরিক হোন।
মূলত মুশরিকদের আধিপত্য যেখানে নস্যাৎ হয়েছে সেখানেই মুসলমান মুক্তি পেয়েছেন।
-মুহম্মদ কুররাতুল আইন হায়দার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (১)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নেপোলিয়নের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ এবং ১২ই শরীফ পালন নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক একটি ঘটনা
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (৪)
২৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (৩)
২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (২)
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের ইতিহাস (১)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩৮)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার বরকতময় ইতিহাস
২১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সতীদাহ প্রথা নির্মূলে মুসলিমরাই প্রথম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, রামমোহন নয়
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)