অমুসলিম মহিলাদের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা:
মার্কিন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক ‘আমিনা অ্যাসিলিমি’র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
সাংবাদিক “আমিনা অ্যাসিলিমি”। ছিলেন গোঁড়া খ্রিস্টান ও খ্রিস্টবাদ প্রচারক। একটা সময় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারের একটি ভুল তার জীবনের মোড় পুরোপুরি বদলে দেয়।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর মার্কিন নও-মুসলিম “আমিনা অ্যাসিলিমি” এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের মানুষ। তিনি বলেছেন, “আমার হৃদয়ের স্পন্দন ও আমার শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত রক্ত-ধারা এবং আমার সমস্ত প্রেরণার উৎস হল সম্মানিত দ্বীন ইসলাম। এ সম্মানিত দ্বীনের সুবাদে আমার জীবন হয়েছে অপরূপ সুন্দর ও অর্থপূর্ণ। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছাড়া আমি কিছুই নই।”
মার্কিন নও-মুসলিম “আমিনা অ্যাসিলিমি” কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন টার্মের ক্লাসে ভর্তি হওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে একটি ভুল বিষয়ের ক্লাসে ভর্তি হয়। কিন্তু এ সময় সফরে থাকায় ওই ভুল বুঝতে পারেনি। পরে যখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন জানতে পারে যে ওই বিষয়ের ক্লাসে যোগ দেয়া ছাড়া তার জন্য অন্য কোনো উপায় নেই। আর ওই ক্লাসের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আরব মুসলমান।
অ্যাসিলিমি আরব মুসলমানদের ঘৃণা করতো, কিন্তু বৃৃত্তির অর্থ বাঁচানোর জন্য তাদের সহপাঠী হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না তার। এ অবস্থায় তার মন খুব বিষণœ হয়ে পড়ে। কিন্তু তার স্বামী যখন বললো, হয়ত স্রষ্টা এটাই চেয়েছিলেন এবং তিনি হয়তো তোমাকে আরব মুসলমানদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য মনোনীত করেছেন; তখন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়েই অ্যাসিলিমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ক্লাসে গেলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ হলেই নানা অজুহাতে তাদের কাছে খ্রিস্ট ধর্মের দাওয়াত দিতো অ্যাসিলিমি। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে তার এইসব কথার কোনো প্রভাব পড়ত না। এ অবস্থায় অ্যাসিলিমি ভিন্ন পথ ধরতে বাধ্য হয়।
এ প্রসঙ্গে সে বলেছে, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মুসলমানদের বই-পুস্তক দিয়েই তাদের কাছে এ ধর্মের ভুল চিন্তা-বিশ্বাস প্রমাণ করব। অ্যাসিলিমি বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া শুরু করে। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে পাওয়া দুটি ইসলামী বইও পড়ে সে। এ সময় তিনি ইসলামী বই-পুস্তক পড়ায় এত গভীরভাবে নিমজ্জিত হন যে দেড় বছরের মধ্যে তিনি ইসলামী বই পড়েন ও কুরআন শরীফও দুই বার পড়া শেষ করেন। চিন্তাশীল হয়ে ওঠা অ্যাসিলিমি বদলে যেতে থাকেন। মদপান ও শুকরের গোশত খাওয়া ছেড়ে দেন তিনি। সব সময়ই পড়া-শুনায় মশগুল থাকতেন এবং নারী ও পুরুষের অবাধ-মেলামেশার সুযোগ থাকত এমন সব পার্টি বা উৎসব অনুষ্ঠান বর্জনের চেষ্টা করতেন।
সে সময়কার অবস্থা প্রসঙ্গে অ্যাসিলিমি বলেছেন, কখনও ভাবিনি যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে গেলে বিশেষ ঘটনা ঘটবে ও এমনকি আমার প্রাত্যহিক জীবন-ধারাও বদলে যাবে। সে সময়ও এটা কল্পনাও করতে পারিনি যে খুব শিগগিরই আমি আমার হৃদয়ের প্রশান্তির পাখাগুলো ও ঘুমিয়ে থাকা ঈমান নিয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিশ্বাসের সৌভাগ্যের আকাশে উড্ডয়ন করব।
এর পরের ঘটনা বলতে গিয়ে অ্যাসিলিমি বলেছেন, আমার আচরণে কিছু পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও নিজেকে তখনও খ্রিস্টানই মনে করতাম। একদিন একদল মুসলমানের সঙ্গে সংলাপের সময় আমি যতই তাদের প্রশ্ন করছিলাম তারা অত্যন্ত দৃঢ়তা ও দক্ষতার সঙ্গে সেসবের জবাব দিচ্ছিলেন। পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে আমার অদ্ভুত সব মন্তব্য ও বক্তব্যের জন্য তারা আমাকে একটুও পরিহাস করেননি। এমনকি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে আমার তীব্র আক্রমণাত্মক বক্তব্য শুনেও তারা মোটেও দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হননি। তারা বলতেন, জ্ঞান মুসলমানের হারানো সম্পদ। আর প্রশ্ন হল জ্ঞান অর্জনের একটি পথ। তারা যখন চলে গেলেন মনে হল আমার ভেতরে যেন কিছু একটা ঘটে গেছে। এ অবস্থায় মুসলিম আলেমের কাছে পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলাম।”
মুসলমান হওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ও সন্তানের মালিকানারও প্রশ্ন চলে আসে। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিচারক তাকে তার দুই সন্তান ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বললে মহাদ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন অ্যাসিলিমি। একজন মমতাময়ী মায়ের জন্য সন্তানের দাবী ত্যাগ করা তো দূরের কথা, তাদের কাছ থেকে একদিনের জন্য দূরে থাকাও অশেষ কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি ও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মার্কিন নও-মুসলিম অ্যাসিলিমি।
এই অবস্থায় দুই বছর ধরে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে তার গবেষণা ও মহান আল্লাহ পাক উনার ওপর নির্ভরতাই তাকে শক্তি যুগিয়েছে। তার মনে পড়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সন্তান কুরবানী দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পালনের ঘটনা।
এর কিছুকাল পর তার সাবেক স্বামীও জানান যে, তিনি চান তাদের মেয়েরা মায়ের ধর্মই অনুসরণ করুক। তিনি মেয়েদেরকে কেড়ে নেয়ার জন্য সাবেক স্ত্রী তথা অ্যাসিলিমির কাছে ক্ষমাও চান। আর অ্যাসিলিমিও তাকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণে একদিন যারা তাকে ত্যাগ করেছিল তারা সবাই তাদের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় ও সত্যকে স্বীকার করে নেয়। প্রাণপ্রিয় সন্তানদের ফিরে পাওয়াকে অ্যাসিলিমি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তার জন্য আরও একটি বড় বিজয় বলে মনে করেন।
-উম্মু রাহাত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)