মহিলাদের মর্যাদা:
মহিলারা নিজেরাই জানে না, দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে মহিলাদের মর্যাদা ও অধিকার কতবেশি
, ১৪ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
মহিলাদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অথচ মহিলাদের মহিমান্বিত কে করেছে তা এখনো অনেক মহিলা নিজেরাই অবগত নন। ফলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পৃথিবীতে মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম সর্বপ্রথম মহিলাদের যথাযোগ্য সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। দ্বীন ইসলাম পূর্বযুগে মহিলাদের মানুষ হিসেবে গন্য করা হতো না। স্ত্রী হিসেবে তারা ছিল চরম অবহেলার স্বীকার। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণকে সামাজিক কলঙ্কের বোঝা মনে করে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সমাজে মেয়ে হিসেবে জন্ম নেয়া অভিশাপ হিসেবে ধরা হতো।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আগমনে মহিলাদের প্রতি এ জঘন্য অত্যাচারের অবসান ঘটে, জীবনে আসে অনেক পরিবর্তন। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাধ্যমে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ঘোষণা দেন। এভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম সর্বপ্রথম মহিলাদের সমাজে স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার পথ প্রদর্শন করে।
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে- যখন কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। তারা এসে বলে, পরিবারের সকলের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। অত:পর তারা তাদের বাহু দিয়ে কন্যা সন্তানটিকে আগলে রাখে এবং তার মাথায় হাত রেখে বলে এক অবলা হতে আর এক অবলা বের হয়েছে। যে ব্যাক্তি এর রক্ষনাবেক্ষণে মনোযোগী হবে সে কেয়ামত পর্যন্ত সাহায্য পাবে। (পবিত্র আবু দাউদ শরীফ)
কন্যা সন্তানের ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, যে লোক দুটি কন্যা সন্তানকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করবে সে ব্যাক্তি শেষ বিচারের দিন আমার সাথে অবস্থান করবে (পাশাপাশি একই হাতের দু’টি আঙ্গুলের মতো)। (পবিত্র মুসলিম শরীফ)
স্ত্রী হিসাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম মহিলাদের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন- তারা তোমাদের পরিচ্ছেদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছেদ। (পবিত্র সূরা বাকারাহ শরীফ, আয়াত শরীফ ১৮৭)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- “মহিলাগণ পুরুষদেরই সহোদর। (পবিত্র আবু দাউদ শরীফ)
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সবচেয়ে মায়ের মর্যাদা দিয়েছে। এত মর্যাদা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘোষণা মুবারক- “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” মহিলাদেরকে আরো মর্যাদাবান করেছে। একজন সাহাবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে এসে প্রশ্ন করলেন আমার নিকট খেদমত পাওয়ার বেশী হকদার কে? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমার মা, দ্বিতীয়ত তোমার মা, তৃতীয়ত তোমার মা, অতঃপর পিতা। (সহীহ বুখারী) একাধিকবার মায়ের কথা বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা জাতিকে সমাজে সম্মান দিয়েছেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম মহিলাদের প্রকৃত অধিকার দিয়েছেন। সুন্দরভাবে সমাজে আত্মসম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। অমর্যাদা আর গ্লানির হাত থেকে রক্ষা করে শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ আসন দান করেছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম মহিলাদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান- “পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের যেমন অংশ আছে মহিলাদেরও তেমনি অংশ আছে। (পবিত্র সুরা নিসা শরীফ, আয়াত শরীফ ৭)।
স্ত্রীরা তার স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে পুরুষকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় এবং এটা স্বামীর ওপর ফরয। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক বলেন- তোমরা স্বতঃপ্রবৃত হয়ে স্ত্রীকে তাদের দেনমোহর প্রদান কর। (পবিত্র সুরা নিসা শরীফ, আয়াত শরীফ ৪)
তাছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণ, বাসস্থান, চিকিৎসা, সন্তান সন্ততির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন, বাবা মা ও ভাইবোনদের দায়িত্ব অপরিহার্যভাবে পালন করতে হয়। অর্থাৎ স্ত্রীকে কোন প্রকার আর্থিক দায়িত্ব পালন করতে হয় না। একজন নারী তার পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার ভাইয়ের তুলনায় অর্ধেক পেলেও দাদা, স্বামী ও বৈপিত্রেয় ভাই থেকে সম্পদ লাভ করে থাকে, যা একত্র করলে ভাইয়ের তুলনায় অনেক বেশী হয়।
সুতরাং তথাকথিত নারীবাদীরা কি চায়? মহিলাদেরকে বিনোদনের সামগ্রী বানাতে চায়? ভোগের বস্তুতে পরিণত করতে চায়? না আবার জাহিলী সমাজের সেই নির্যাতিতা নারীর করুণ আত্মনাদ শুনাতে চায়? সেটাই আমাদের প্রশ্ন? পবিত্র দ্বীন ইসলাম মহিলাদের যে সম্মান মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে যা অন্য কোন ধর্মে দেয়নি। সুতরাং মহিলা সমাজ এ বিধানের বিধানাবলী মেনে জীবন পরিচালনা করলে দুনিয়া আখিরাত উভয় জগতে কল্যাণকামী হবে।
-আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত বিবি শা’ওয়ানাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)