মহিলাদের সুন্নতি পোশাক ও কতিপয় ব্যবহৃত সামগ্রীর বর্ণনা (২)
, ১৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
চিরনীর বর্ণনা: হাতির দাঁতের ও হাতির হাড়ের চিরনী ব্যবহার করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদের খাছ সুন্নত। মাথার চুলে তেল দেয়া, আঁচড়ানো এবং সিঁথি করা প্রত্যেকটিই সুন্নত। তেলের মধ্যে জয়তুনের তেল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত। আর পুরুষ হোক, মহিলা হোক প্রত্যেকের জন্যই মাথার মধ্য দিয়ে এবং ডান দিক দিয়ে মাথা আঁচড়ানো সুন্নত। যেমন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রতা অর্জন করতে, মাথা আঁচড়াতে ও না’লাইন বা সেন্ডেল পায়ে দিতে ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। (বুখারী শরীফ)
আর মেয়েদের চুল পুরুষদের বিপরীত তথা লম্বা রাখা সুন্নত। কাঁধের চেয়ে ছোট রাখা জায়িয নেই।
যেমন হাদীছ শরীফে রয়েছে, “ঐ মহিলাদের উপর লা’নত যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।” (বুখারী শরীফ)
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় যেহেতু আয়না ছিলনা তাই পানির পাত্রে তিনি চেহারা মুবারক দেখে পাগড়ি, টুপি, রুমাল ইত্যাদি গোছগাছ করতেন এবং মাথার চুল মুবারক ও দাড়ি মুবারক আঁচড়াতেন। সেমতে আয়না ব্যবহার করাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (সিরাত গ্রন্থ)
সেন্ডেল ও মোজা: মেয়েদের জন্য চামড়ার সেন্ডেল ও মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত। সেন্ডেল- ক্রস দুই ফিতা বিশিষ্ট এবং প্রতিটি ফিতা হবে ডবল। অর্থাৎ একটার উপর আরেকটা লাগানো।” (শামায়েলে তিরমিযী)
আর বর্তমান বাজারে পেন্সিল হিল বা হাইহিল ইত্যাদি ধরনের যে সেন্ডেল পাওয়া যায়, তা পরিধান করা জায়িয নেই। ইহা বিজাতীয় তাহযীব-তামাদ্দুনের অন্তর্ভুক্ত। তবে সামনে-পিছনে সমান (ফ্লাট বা স্বাভাবিক হিল) উচু সেন্ডেল ব্যবহার করা যাবে।
মোজা: চামড়ার ও খয়েরী রং হওয়া খাছ সুন্নত। (মিশকাত শরীফ, হিদায়া, ফতহুল ক্বাদীর)
মেহেদী ব্যবহার: মহিলাদের জন্য হাতে ও পায়ে মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহার করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, একদা এক মহিলা হাতে চিঠি নিয়ে পর্দার আড়াল হতে হাত বের করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে ইশারা করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের হাতখানা গুটিয়ে ফেললেন এবং বললেন, ইহা কি কোন পুরুষের হাত না কোন মহিলার? মহিলাটি বললেন, মহিলার হাত। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি যদি নারী হতেন তাহলে অবশ্যই মেন্দীর দ্বারা আপনার হাতের নখগুলো পরিবর্তন করে নিতেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
আর মেন্দী ব্যবহারে শেফাও রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কেউ মাথা ব্যথার অভিযোগ করলে তিনি তাকে শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দিতেন। আর পায়ে ব্যথার অভিযোগ করলে তিনি অভিযোগকারীর পায়ে মেন্দী ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন।” (আবু দাউদ শরীফ)
মাসয়ালা: পুরুষদের জন্য হাতে ও পায়ে মেন্দি ও রং ব্যবহার করা জায়িয নেই।
অলঙ্কার ব্যবহার: মহিলাদের জন্য অলঙ্কার ব্যবহার করা সুন্নত। স্বয়ং হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার যেমন, গলার হার, কানের দুল, আংটি ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈদের দিন বের হলেন এবং দুই রাকায়াত (ঈদের) নামায আদায় করলেন এর আগে এবং পরে আর কোন নফল নামায পড়েননি। অতঃপর মহিলাদের কাছে আসলেন এবং উনাদেরকে ছদকা করতে আদেশ করলেন। মহিলারা উনাদের গলার হার ও মালার ছদকা আদায় করলেন।” (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদেরকে ছদকা করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলারা তাদের নিজ নিজ কানের ও গলার অলঙ্কারে হাত বাড়ালেন তথা ছদকা আদায় করলেন। (বুখারী শরীফ)
মাসয়ালা: পুরুষদের জন্য স্বর্ণ এক রতিও ব্যবহার করা জায়িয নেই। পুরুষের জন্য সাড়ে চার মাসা অর্থাৎ ৬ আনা পরিমাণ রৌপ্য ব্যবহার করা জায়িয আছে। এর চাইতে বেশী ব্যবহার করা জায়িয নেই। তা হারাম ও কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবে। (হিদায়া, আলমগীরী)
উল্লেখ্য, পবিত্র সুন্নত মুবারক সম্পর্কে সঠিক ইলিম অর্জন এবং তা আমলে বাস্তবায়ন সাধারণ লোক তো দূরের কথা যারা মাদ্রাসায় পড়ে ও পড়ায় তাদের পক্ষেও সম্ভব হয়ে উঠেনা। এ কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি যুগে যুগে মুজাদ্দিদগণ উনাদেরকে পাঠিয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় মহান আল্লাহ পাক তিনি বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলত্বানুন নাছীর রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়েছেন।
কেউ যদি পরিপূর্ণরুপে সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ করতে চায় তাহলে অবশ্যই যামানার মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলত্বানুন নাছীর রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য আরো শুকরিয়ার বিষয় হচ্ছে, তাদের সব বিষয়ে জানার জন্য ক্বায়িম মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ও তা’লীম গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সুন্নত মুবারক সম্পর্কে জেনে সে মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (বিস্তারিত জানতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৫২তম সংখ্যা পড়–ন)
-উম্মু মুযযাম্মিল
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)