সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক থেকে সংগৃহীত
মহিমান্বিত দশ দিন ও দশ রাত্রি (পর্ব-৮)
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র কুরবানী উনার বিধান:
وَالشَّفْعُ يَوْمُ النَّحْرِ
অর্থ: জোড় হচ্ছে ইয়াওমুন নহর তথা ঈদুল আদ্বহা উনার দিন”।
এই দিনের শ্রেষ্ঠ আমল হলো কুরবানী করা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ يَوْمُ الْعِيْدِ إِرَاقَةُ دَمُ الْقُرْبَاتِ
অর্থ : ঈদের দিন কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করা অর্থাৎ কুরবানী করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত”।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللّٰهِ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ بَهِيْمَةِ الْأَنْعَامِ
অর্থ : আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যই কুরবানীর হুকুম দিয়েছি। যেন তারা তাদের প্রদত্ত রিযিক গৃহপালিত পশুর উপর মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করে। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩৪)
অর্থাৎ এই পবিত্র কুরবানী মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং উনাদের প্রত্যেক উম্মতের উপর ফরয করেছেন।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অর্থ : আপনি আপনার রব উনার জন্য নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন”। (পবিত্র সূরা কাউসার শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ২)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছলাত তথা নামায দ্বারা পবিত্র ঈদের নামায উনাকে বুঝানো হয়েছে। আর এই সম্মানিত ছলাত আদায়ের পর কুরবানী করার কথা বলা হয়েছে।
স্মরণীয় যে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আদ্বহার নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা খাছ সুন্নত মুবারক। অর্থাৎ সূর্য উদয়ের ২৩মিনিট পর তথা মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পরপরই ঈদের নামায আদায় করা অতঃপর কুরবানী করা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং, পবিত্র ঈদুল আদ্বহার নামায দেরী করে পড়লে সুন্নত মুবারক আদায় হবে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পবিত্র কুরবানী ও ঈদের নামাযসহ সমস্ত আমলই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আন‘আম শরীফ উনার ১৬২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِىْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴿ ١٦٢﴾
অর্থ : (হে হাবীব পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার হায়াত-মউত সবই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য”।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَنْ يَنَالَ اللّٰـهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلٰكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট (কুরবানীর পশুর) গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছেনা। বরং উনার নিকট তোমাদের তাক্বওয়া, পরহেযগারী পৌঁছে”। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩৭)
সুতরাং, মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যে কুরবানী করা হবে শুধুমাত্র সেই কুরবানীর মাধ্যমে সীমাহীন ফযিলত, খায়ের, বরকত এবং কামিয়াবী হাছিল হবে।
আর কুরবানীর মধ্যে লৌকিকতা থাকলে অথবা হারাম উপার্জন দ্বারা কুরবানী করা হলে, এমন কুরবানী দ্বারা কোনো ফযিলত পাওয়া যাবে না।
কুরবানী- উনার সীমাহীন ফযিলত:
পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিনে কুরবানীর ফযিলত সম্পর্কে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ زَيْدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هٰذِهِ الْاَضَاحِيُّ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالُوْا فَمَا لَنَا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ
অর্থ: হযরত যায়িদ ইবনে আরকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানীটা কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটা হচ্ছে আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত মুবারক। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমাদের জন্য এর মধ্যে কি রয়েছে! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে নেকী রয়েছে। তারপর উনারা বললেন, পশম ওয়ালা পশুর কী হুকুম? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুর ক্ষেত্রেও প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে নেকী রয়েছে”। (মুসনাদে আহমাদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)