ভাষা আন্দোলনের ছয় দশক এবং স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উর্দূকে বাদ দিয়ে হিন্দি বা ইংরেজির প্রাধান্য ভাষা দিবসের চেতনা নয়। পাশাপাশি বাংলা ভাষা চর্চা মানে বিজাতীয় ও বিধর্মীয় সংস্কৃতির অনুকরণ ও অনুশীলন নয়। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আঙ্গিকে একুশ পালন করলেই সার্থকভাবে একুশের চেতনা প্রতিফলিত হবে।
, ১০ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সম্পাদকীয়
আজ ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা শহীদ দিবস। আজ মাতৃভাষার জন্য শহীদদের স্মরণের দিন।
মাতৃভূমিকে মুহব্বত করা পবিত্র ঈমান উনার অঙ্গ। মাতৃভাষাকে মুহব্বত করাও পবিত্র ঈমান উনার অঙ্গ। সুতরাং সে মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে তারা শহীদি দরজা পাবে। উল্লেখ্য, ভাষার জন্য শহীদ হওয়া ইতিহাসের বিরল ঘটনা; যা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ৬ হাজার ভাষা থাকলেও মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও মর্যাদার জন্য বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে আন্দোলনের উদাহরণ ও ইতিহাস নেই। এজন্যই আমাদের শহীদ দিবস পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনন্য মর্যাদা। বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের সংগ্রাম ও অবদানের কথা স্মরণ করে দিনটি এখন পৃথিবীর সব দেশেই পালন করা হয়। একুশের চেতনায় এবং এর অন্তর্গত তাৎপর্যে বিশ্বের সব দেশের মানুষই এখন উজ্জীবিত হয়। তারাও নিজেদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার তাগিদ বোধ করে। ভাষা আন্দোলন এই সফলতা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যার কৃতিত্ব এদেশের ভাষা-সংগ্রামী ছাত্র-জনতার।
আজকের দিনে গৌরবোজ্জ্বল সে ইতিহাস স্মরণ করার পাশাপাশি দুঃখ ও ক্ষোভের কথাও উল্লেখ করা দরকার। ১৯৪৮ ও ১৯৫২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয়টি দশক এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর ৫৩ বছর পেরিয়ে এলেও বাংলাভাষাকে এখনো যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। বরং এ বিষয়ে আমাদের রয়েছে শোচনীয় ব্যর্থতা। কারণ পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সবক্ষেত্রে বাংলাভাষার যথাযথ প্রচলন এখনো ঘটেনি। অথচ সবক্ষেত্রে প্রচলন ও প্রতিষ্ঠা ঘটানোর বুকভরা আশা নিয়েই ভাষাসৈনিকরা সংগ্রাম করেছিলেন, রক্ত ঝরিয়েছিলেন এবং জীবন দিয়েছিলেন। বিভ্রান্তিকর ও বিশৃঙ্খল এ পরিস্থিতির কারণে বাংলাভাষার ক্রম অগ্রগতি ও সুষম বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অথচ এই ভাষার প্রশ্নে ভিন্নমত ছিল বলেই বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা-সংগ্রামীরা জীবন পর্যন্ত দিয়েছিলেন, বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন তো করেছিলেনই। তারা নিশ্চয়ই উর্দুর স্থলে হিন্দিকে বা ইংরেজীকে নিয়ে আসার জন্য আন্দোলন করেননি। আমরা মনে করি, বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা ও পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। যে কোনো মূল্যে এখনই হিন্দির সর্বব্যাপী আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা চাইÑ হিন্দি ও ইংরেজির প্রভাব নির্মুল করা হোক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠিত হোক মায়ের ভাষাবাংলা। এভাবেই ভাষা শহীদদের প্রতি আপাত সম্মান দেখানো এবং ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনার আপাত বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন, ভাষা সংগ্রামী ও ভাষা শহীদদের অর্জিত বিজয়কে বিকৃত করা হয়েছে ও হচ্ছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার মানে এই নয় যে, বাংলা ভাষার চর্চাকে বিজাতীয় ও বিধর্মীয় সংস্কৃতির বলয়ে আবদ্ধ করতে হবে। অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের বিস্তার করতে হবে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটকে দ্বীন ইসলামবৈরী চেতনার স্ফূরণ করতে হবে। ভিনদেশী ও ভিনধর্মীয় ভাবনার প্রভাব বিস্তার করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, ভাষা সংগ্রামী ও ভাষা শহীদদের বিজয়কে ছিনতাই করা হয়েছে। ভাষা সংগ্রামী ও ভাষা শহীদরা ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কাজেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার মাধ্যমে ইসলামী উজ্জীবনের যে বিষয়টি কাঙ্খিত ছিলো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তা হতে দেয়া হয়নি। এটা দেশবাসীর জন্য দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাববার ও সক্রিয়ভাবে কিছু করাই রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতি মুহব্বত প্রকাশের প্রমাণ বহন করবে।
প্রসঙ্গত বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ভাষা শহীদদের প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখাতে হলে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, ‘শহীদ’ ও ‘মিনার’ প্রত্যেকটিই আলাদাভাবে সম্মানিত ইসলামী ভাবধারার শব্দ। বাংলা বিশ্বকোষেও তার সংক্ষিপ্ত বিবরণী আছে। লিখা হয়েছে, ‘শহীদ’- আরবী শব্দ; অর্থ- জীবন উৎসর্গকারী, সাক্ষী, প্রত্যক্ষকারী। সাধারণত প্রথমোক্ত অর্থই গ্রহণ করা হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জীবন উৎসর্গকারী (বা মৃত্যুবরণকারী)কেই শহীদ বলা হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক স্থানে ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে শহীদ উনাদের উচ্চ মর্যাদা মুবারকের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শহীদ উনাদেরকে মৃত বলিও না, বস্তুত উনারা জীবিত, তোমরা উহা বুঝতে পারো না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, হযরত মুনকার-নকীর ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে কোনো প্রশ্ন করে না, সমহিত করার পূর্বে গোসল এবং কাফনেরও প্রয়োজন হয় না। বরং রক্তমাখা অবস্থায়ই দাফন করতে হয়। মুসলমানগণ এজন্যই শাহাদাতবরণের আকাঙ্খা করেন।
মিনার শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও বাংলা বিশ্বকোষে দেয়া হয়েছে, মিনার (গরহধৎবঃ) : মুসলিম স্থাপত্যে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র টাওয়ার বা বুরুজ (অপেক্ষাকৃত স্বল্প দৈর্ঘ্য-প্রস্ত বিশিষ্ট্য উচ্চ অট্টালিকা)। মিনার প্রায় সকল মসজিদেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উল্লেখ্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ ও সত্য দ্বীন এবং স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, সেহেতু সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে উল্লিখিত শহীদ মিনার সংক্রান্ত সংস্কৃতিটি পর্যালোচনা করা সচেতন মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
প্রথমত বলা যায়, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পরিভাষায় মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা পবিত্র ঈমান উনার অঙ্গ বিধায় সে উদ্দেশ্যে জীবন দানকারীকে শহীদ বলা যায়। তবে হ্যাঁ, শহীদ হিসেবে ফায়দা পেতে হলে কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যই সে জীবন দান আবশ্যক, নতুবা নয়।
আর শহীদদের শহীদ দিবসে স্মরণ করাও যেতে পারে, কিন্তু কথা হলো স্মরণ করার পদ্ধতি নিয়ে। অর্থাৎ স্থাপিত যে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে শহীদ দিবস পালিত হচ্ছে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে তা সঙ্গত কিনা, তা আমাদের যুক্তিযুক্তভাবে ফিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এ ধরণের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা এবং তার পাদদেশে ইউরোপ-আমেরিকার মতো তথা বিধর্মীদের মতো ফুল প্রদান করা যে আদৌ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মত নয়, তা সম্মানিত ইসলামিক নীতি অনুযায়ী কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, তার পক্ষেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুমোদিত কোনো যুক্তি দেখাতে পারবে না।
কাজেই, ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে প্রচলিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী যাবতীয় কার্যক্রম হতে বিরত থাকা এবং ইসলামী রীতি-নীতির প্রচলন ও অনুশীলন ভাষা দিবস ও ভাষা শহীদদের আন্তরিক দাবি।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্যাংক গ্রাহকদের খালি হাতে বা নাম মাত্র অর্থে ফেরানো যাবে না কথিত অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিশ্চয়তার পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা প্রদান করতে হবে ইনশাআল্লাহ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিশ্বে জ্বালানীর দাম এমনেই কমছে পাশাপাশি শুধুমাত্র কাঠামো সংস্কারই ১৫ টাকা কমানো সম্ভব হলেও সেদিকে নজর দিচ্ছে না কেন অন্তর্বর্তী সরকার? জ্বালানী তেলের দাম কমালে দ্রব্যমূল্যের দাম সহজেই কমবে
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলাদেশে মিডিয়াগুলো ইহুদীদের অদৃশ্য ইশারায় দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের উচিত- দেশের সব মিডিয়া বর্জন করে আলাদাভাবে সম্মানিত ইসলামী মিডিয়া গঠন করা।
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হুমকী স্বরূপ আরাকান আর্মিকে এক্ষুনি প্রতিহত করতে হবে ইনশাআল্লাহ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দেশে সাড়ে ৩ কোটি শুধু শিশুই সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত এবং সব প্রাপ্ত বয়স্করাও ক্ষতিগ্রস্থ সিসার ক্ষতি থেকে বাঁচতে সুন্নতী তৈজসপত্র ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্রের জিনিস ক্রয়ে নিবেদিত হতে হবে ইনশাআল্লাহ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাব্যার্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আরো ক্ষমতা দিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জ্বালানী তেলের দাম এক্ষুনি কমাতে হবে ইনশাআল্লাহ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অনেক কিছু করার প্রচারনা চালালেও জিডিপি এবং দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি অর্থনীতির লাইফ লাইন এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই করছে না
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, মুসলমানের দ্বীনি অধিকার, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনের আবহ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়।
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সিঙ্গাপুর, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ বাংলাদেশেও বিভিন্ন মহলে ইসকন নিষিদ্ধের দাবী জোরদার হচ্ছে, সংস্কারের দাবীদার সরকার কী করে নির্বিকার থাকতে পারে?
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্যাপকভাবে বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ও হয়রানী জান-মাল এবং সম্মান হিফাজতে সরকারকে এক্ষুনি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পাচারকৃত ১৭ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে শামুকের মত ধীর গতি বরদাশতের বাইরে
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)