ইতিহাস
বীর সিপাহসালার হযরত সাইয়্যিদ আহমদ কেল্লা শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঈমান জাগানিয়া উপাখ্যান
, ১৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১২ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
বাংলাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মুবারক অবদান অনস্বীকার্য। সম্মানিত আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে আগত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক নিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার ব্যাপকতা লাভ করে। উনাদের সম্মানিত ছোহবত মুবারক এবং ইনসাফপূর্ণ আচরণে মুগ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের বিধর্মীরা দলে দলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ছায়াতলে আসতে শুরু করে।
বাংলায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসারের মাধ্যম দাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। বরং অনেক প্রতিকূল পরিবেশে উনারা সম্মানিত জিহাদও পরিচালনা করেছিলেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসারের জন্য যে সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা জিহাদ মুবারক পরিচালনা করেছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত সিপাহসালার, মর্দে মুজাহিদ হযরত সাইয়্যিদ আহমদ গিয়াসু দারাজ কেল্লা শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন খাছ মুরিদ ছিলেন এবং ইয়েমেন থেকে উনার সাথে আগমন করেছিলেন।
সিলেটের অত্যাচারী শাসক গোবিন্দ যখন এ অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন শুরু করলো এবং গরু কুরবানী নিষিদ্ধ করলো তখন তাকে শায়েস্তা করার জন্য হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলেন। উনার সাথে জিহাদ করতে আসা ফৌজের অন্যতম একজন সিপাহসালার ছিলেন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ গিয়াসু দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
গোবিন্দের সাথে জিহাদ শুরুর পর মুসলিম বাহিনী বীরত্বের সাথে পাপিষ্ঠ গোবিন্দের সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। গোবিন্দ ছিলো একজন কুখ্যাত তান্ত্রিক এবং তার ‘জিয়ন কূপ’ নামের একটি পানির কুয়ো ছিলো। কূপটিতে কোনো আহত বা মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে ফেলে দিলে তৎক্ষনাৎ সে পূর্ণজীবিত হয়ে যেতো। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সেনাদের এনে কূপে ফেলে পুনরায় সুস্থ করতে লাগলো গোবিন্দ। এ অবস্থা দেখে সেই কূপের শক্তি নষ্ট করার উপায় খুঁজতে লাগলেন হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি। কূপের শক্তি নষ্টের পথে একটি বড় বাধা ছিলো। গোবিন্দ জানতো মুসলমানরা অশ্লীলতা এবং বেহায়াপনা থেকে সবসময় দূরে থাকেন। তাই সে কূপের পাহারায় চল্লিশ জন বিবস্ত্র নারী মোতায়েন রেখেছিলো। ফলে হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যান্য সিপাহসালারগণ সেই কূপের পাশে যেতে চাচ্ছিলেন না।
এমন পরিস্থিতিতে সম্মানিত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে এলেন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ গিয়াসু দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইজাযত মুবারক নিয়ে বেপর্দা থেকে বাঁচতে তলোয়ার দিয়ে এক কোপে উনার নিজের মস্তক মুবারক আলাদা করে ফেললেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারকে মস্তকবিহীন অবস্থায় ঘোড়া চালিয়ে সেই কূপের দিকে যেতে লাগলেন। মস্তকবিহীন অবস্থায় উনাকে আসতে দেখে কূপের পাহারায় থাকা বিবস্ত্র নারীরা ভয়ে পালিয়ে গেলো এবং উনি গিয়ে সেই কূপের শক্তি নষ্ট করে দিলেন। শক্তি নষ্ট হওয়ার পর মস্তকবিহীন অবস্থাতেই তিনি যুদ্ধ করতে লাগলেন। যুদ্ধে যখন মুসলমানরা বিজয় অর্জন করলেন তখন তিনি হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক উনার কাছে গিয়ে শহীদ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
উনি যখন মস্তক মুবারক আলাদা করেছিলেন তখন উনার মস্তক মুবারক গড়িয়ে গিয়ে তিতাস নদীতে ভেসে যায়। ফলে যুদ্ধ শেষে উনার মস্তকবিহীন শরীর মুবারক নিজ হাত মুবারকে সিলেটেই দাফন করেছিলেন হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার খিদমতে তিনি এতটাই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন, “কেউ যদি আমার মাযার শরীফ যিয়ারত করতে এসে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ গিয়াসু দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ যিয়ারত না করে তাহলে তার যিয়ারত অসম্পূর্ণই থেকে যাবে”। সুবহানাল্লাহ!
অন্যদিকে, সে সময় বি-বাড়িয়ার খড়মপুরের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরতো। একদিন চৈতন্য নামক এক জেলে এবং তার সঙ্গীরা উক্ত নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে উনার মস্তক মুবারক আটকে যায়। জেলেরা যখন উনার মস্তক মুবারকে হাত দিতে যাবে তখন উনার মস্তক মুবারক বলে ওঠেন, “আস্তিকের সাথে নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না।”
খন্ডিত মস্তক মুবারক উনার এ কথা শুনে উনার কাছ থেকে পবিত্র কালেমা শরীফ পাঠ করে সেই জেলে চৈতন্য এবং তার সঙ্গীরা মুসলমান হয়ে যায়। মস্তক মুবারক উনার নির্দেশ মোতাবেক খড়মপুরে উনার মস্তক মুবারক দাফন করা হয় এবং উনারই নির্দেশক্রমে সেখানে একটি পবিত্র মাযার শরীফ প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলমান হওয়া জেলেদের নাম হয় মুহম্মদ শাহবলা, মুহম্মদ শাহলো, মুহম্মদ শাহজাদা, মুহম্মদ শাহগোরা ও মুহম্মদ শাহর ওশন। মুসলমান জেলে এবং উনাদের বংশধররাই তখন থেকে পবিত্র মাযার শরীফ উনার খিদমত এবং রক্ষণাবেক্ষন করতে থাকেন।
পরবর্তীতে উনার পবিত্র দরগাহ শরীফ উনার খ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু শুধুমাত্র উনার পবিত্র মস্তক মুবারকই সেখানে পাওয়া গিয়েছিলো সেজন্য প্রচলিত ভাষা হিসেবে তিনি হযরত কেল্লা শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হিসেবে মশহুর হন। বি-বাড়িয়ার খড়মপুরে উনার পবিত্র মাযার শরীফ বর্তমানে ২৬০ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ উনার পবিত্র মাযার শরীফ যিয়ারত করতে যান।
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)