মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ঈমানদীপ্ত বেমেছাল আত্মত্যাগ
বীরঙ্গনা মহিলা ছাহাবী সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
, ২৩শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
পরবর্তী সময়ে একই গোত্রেরই সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তখনও আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি। তাই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি প্রথমে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। যেভাবে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান ইতিহাসের পাতায় তা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আহ্বান সংক্রান্ত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার কথোপকথন ছিল এরকম।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কি জানেন, আপনার মনিব এই মাটি হতে সৃষ্ট?
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ, তা তো বটেই। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি তখন বললেন, তাহলে আপনি বৃক্ষের পূজা কিভাবে করতে পারেন?
উনার যুক্তিপূর্ণ কথায় সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এতটাই প্রভাবিত হলেন যে, সাথে সাথে তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর উনাদের বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার অনেক যুদ্ধে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অংশগ্রহণ করেন। পবিত্র মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকেসহ আরো অনেক আনছারী মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে অনেক যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। যারা যুদ্ধের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ অবদান রাখতেন।
উহুদের যুদ্ধে মুসলমানগণ যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছিলেন, সেই কঠিন মুহূর্তেও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে মুজাহিদদের সাথে সহযোগিতা করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ উনার একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের সেই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দিকাহ আলাইহাস সালাম উনাকে ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দেখেছি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে এবং মশক ভরে পানি এনে আহত মুজাহিদদের পান করাতে। মুসলিম মেয়েরা এভাবে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুজাহিদদের উৎসাহ প্রদান করতেন।
হুনায়নের যুদ্ধে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি সঙ্গে ধারালো একটি খঞ্জর রেখেছিলেন। এ দৃশ্য দেখে উনার আহাল বা স্বামী সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে বিষয়টি জানালেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, যদি কোনো মুশরিক আমার নিকট আসে এর দ্বারা তার পেট চিরে দিব। একথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুত তাক্বরীর শান মুবারক (মুচকি হাসি মুবারক) দিলেন।
মুসলিম ইতিহাসের এই বীরঙ্গনা মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনার সন্তান সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকের জন্য স্থায়ীভাবে ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন।
উনার গৃহে অবস্থান মুবারক করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নির্যাতিত, নিরীহ মুহাজির ও উদারতার উজ্জ্বল প্রতীক আনছারদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত মুবারক করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়ই হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার গৃহে যেতেন এবং দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম মুবারক নিতেন। যখন তিনি বিশ্রাম মুবারক থেকে জেগে উঠতেন তখন হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র নূরুত ত্বীব বা ঘাম মুবারক শিশিতে ভরে রাখতেন। নূরুল ফাতাহ বা চুল মুবারক সংগ্রহ করে অত্যন্ত যতœসহকারে হিফাজত করে রাখতেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও উনাকে খুব মুহব্বত করতেন। হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ছোট একজন ছেলে ছিলেন। উনার নাম হযরত ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে খুব মুহব্বত মুবারক করতেন। উনাদের গৃহে গেলে শিশু হযরত ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হাশিখুশি করতেন। একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিশু হযরত ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের গৃহে গিয়ে দেখেন শিশু হযরত ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুব গম্ভীর মুখে বিষন্ন অবস্থায় বসে আছেন। পাশেই নুগায়ের মৃত পড়ে আছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে খুশী করার জন্য বললেন, হে হযরত ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার নুগায়েরের কি হলো? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই পবিত্র হাদীছ শরীফ গবেষণা করে পরবর্তী সময়ে আইম্মায়ে মুজতাহিদগণ ২০০ মাসয়ালা উদ্ভাবন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মহিলা। পুত্র সাইয়্যিদুনা হযরত ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশে যেই অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন ইতিহাসে এর উপমা বিরল।
খন্দকের যুদ্ধের পূর্বমুহূর্তে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সঙ্গে নিজ নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারকে) খন্দক খনন করছেন। করুণ অবস্থা বিরাজ করছিল তখন মুসলমানদের মধ্যে। আহারের কোন ব্যবস্থা নেই। অনাহারে অর্ধাহারে দিন-রাত বিরামহীন খন্দক খনন করে চলছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। একদিকে শত্রুর আগমনবার্তা। অপরদিকে ক্ষুৎ পিপাসা। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরীক্ষা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সামনে। অধিকাংশ ছাহাবী পেটে পাথর বেঁধে কাজ করছিলেন। একজন ছাহাবী ক্ষুধার কারণে হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার মহাসম্মানিত দরবার শরীফ উনার মধ্যে হাজির হয়ে পেটে একটি পাথর বাঁধা দেখালেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (নূরুত তাক্বরীর মুবারক) তাবাসসুমী মুচকি হাসি মুবারক প্রকাশ করে আস্তে করে নিজের চাদর তুললেন। সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো হতবাক। একি! স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পেট মুবারকে দুটো পাথর! এই করুণ অবস্থায় হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনার আহালকে বললেন, যান, ঘরে কিছু খাবার আছে। তৃপ্তিসহকারে দুজনের খাওয়া চলবে। আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আস্তে করে বলুন, তিনি যেন তাশরীফ মুবারক আনেন।
হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গেলেন দাওয়াত করতে। কিন্তু কাছে গিয়ে তিনি হয়রান হয়ে পড়লেন।
এত মানুষের ভিড়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিভাবে বলবেন দাওয়াতের কথা। তবুও ধীরে-ধীরে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ঘরে আপনার জন্য কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনি যদি দয়া করে তাশরীফ মুবারক রাখতেন!
এই কঠিন অনাহারের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট খাবারের দাওয়াত এল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিভাবে উনার ক্ষুধার্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেকে রেখে একাকী যাবেন?
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পার্শ্ববর্তী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, সবাইকে আসতে বলেন। আজ হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে দাওয়াত আছে।
এদিকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা তো পেরেশান। এত লোকের আয়োজন তিনি কিভাবে করবেন? অথচ ঘরে বড়জোড় দু-তিনজনের খাবার হবে।
গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন উনারা। এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ডাকলেন, আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! খাবার হাজির করেন। আমি গোশত দিতে থাকব আর আপনি রুটি দিয়ে যাবেন। তবে পাতিলের মধ্যে তাকাবেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতে সেই দু-তিনজনের খাবার প্রায় দুই হাজার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তৃপ্তিসহকারে খেলেন। এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক মহান মুজিযাহ শরীফ।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ফযীলত সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘আমি জান্নাতে গিয়ে কারো যেন পদধ্বনি শুনতে পেলাম। জানতে চাইলাম এটা কার পদধ্বনি? উত্তরে বলা হল, এটা আমাদের মাতা গুমাইছা বিনতে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার পদধ্বনি। (মুসলিম শরীফ)
-উম্মু ফারজানা।
সাইয়্যিদুল কাওনাইন, ছাহিবু ক্বাবা ক্বাওসাইনি আও আদনা, ফখরুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত মুসলমান উনাদের ইহকালীন ও পরকালীন নাজাত লাভের সর্বোচ্চ মাধ্যম মুবারক (৪)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফতকারী ব্যক্তির জন্য তৃতীয় বিশেষ নিয়ামত মুবারক হচ্ছেন- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফতকারী ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুরূপ নাজাত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা, এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ
অর্থ: “ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা আপনার মত এরূপ আমল করবেন অর্থাৎ আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করবেন, উনারাও আপনার অনুরূপ নাজাত লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করবেন, উনারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুরূপ নাজাত মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ। অর্থাৎ উনারা সর্বোচ্চ জান্নাতী হবেন এবং অনন্তকাল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী নিসবত মুবারক-এ থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে বুঝা গেলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করলে, ৩টি বিশেষ নিয়ামত মুবারক লাভ করা যাবে-
১. সম্মানিত রহমত মুবারক উনার সমস্ত দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং আযাব-গযবের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হবে। অর্থাৎ সম্মানিত মুসলমান উনারা সমস্ত আযাব-গযব, বালা-মুছীবত থেকে মুক্তি পাবেন এবং শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবেন। অর্থাৎ কুদরতীভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা লাভ করবেন, রোগ-শোক অর্থাৎ দুনিয়াবী সমস্ত আপদ-বিপদ, বালা-মুছীবত থেকে মুক্তি লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
২. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফতকারী ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক শুরু করার পূর্বেই মা’ছূম বা নিষ্পাপ হয়ে যাবেন এবং মা’ছূম অবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ!
৩. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফতকারী ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুরূপ নাজাত লাভ করবেন অর্থাৎ সর্বোচ্চ জান্নাতী হবেন এবং অনন্তকাল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী নিসবত মুবারক-এ থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
একজন মুসলমান যদি উপরোক্ত ৩টি বিশেষ নিয়ামত মুবারক লাভ করে, তার আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।
তাই আমাদের দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের সমস্ত মুসলমান উনাদের জন্য ফরয হচ্ছেন- দায়িমীভাবে ২৪ ঘণ্টা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করা। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে দায়িমীভাবে ২৪ ঘণ্টা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করার তাওফীক্ব আমাদেরকে দান করুন। আমীন!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক্ব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসান মুবারক
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)