বাদশাহ মুহিউদ্দিন মুহম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি
, ০৬ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩১ সামিন, ১৩৯০ শামসী সন, ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৫ মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
সুলতান আওরঙ্গজেব আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, সেই কৈশোরেই মুঘল সালতানাতের সর্বত্র উনার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ ছিল, ১৬৩৩ সালের ২৮ মে সংঘটিত হওয়া হাতির লড়াই। উনার পিতা বাদশাহ শাহজাহান যমুনা নদীর তীরে বিশাল দুটি হাতির লড়াই আয়োজন করেন। লড়াই শুরু হলে শাহজাহানও লড়াই দেখতে ময়দানে টানানো শামিয়ানার নিচে ছুটে আসেন। দর্শকদের শামিয়ানা ছিল লড়াইস্থলের একেবারে নিকটে। শাহজাহানের সঙ্গে ছিলেন উনার অশ্বারোহী তিন ছেলে দারাশিকো, শাহ শূজা ও আওরঙ্গজেব। আগ্রহের আতিশয্যে আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সকলের চেয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘক্ষণ লড়াইয়ের পর হাতি দুটি খানিকটা পেছনে সরে যায়। একটি হাতি কিছুটা দমে গেলেও অন্যটি ছিল তখনো বেশ উত্তেজিত। হাতিটি তার প্রতিন্দ্বদ্বীকে দেখতে না পেয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে। আচমকা বাদশাহ শাহজাহানের তিন ছেলের দিকে তেড়ে আসে একটি হাতি। হঠাৎ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে সামনে থাকা কিশোর আওরঙ্গজেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেকে সামলে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। প্রথমে দানব হাতির তর্জনগর্জনে উনার ভীত ঘোড়াকে পালিয়ে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত করেন। তারপর সোজা হাতির মাথায় বর্শা ছুঁড়ে মারেন। এতে হাতিটি আরও উন্মাদ হয়ে ওঠে। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে বিপুল উত্তেজনা। চিৎকার, চেঁচামেচির কারণে পরিবেশ হয়ে উঠে বিশৃঙ্খল। উপস্থিত সভাসদরা হাতিকে থামাতে আতশবাজি ফোটান। এতে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চতুর্দিক। এরপরও উন্মাদ হাতিটার থামার নামগন্ধ নেই। সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে শুঁড় দিয়ে আঘাত করে বসে আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘোড়াকে। আঘাতের চোটে ঘোড়াটি উনাকে নিয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তিনি ত্বরিত তরবারি হাতে উঠে দাঁড়ান ক্ষিপ্ত হাতির সামনে। শাহ শুজা ঘোড়ায় চড়তে গেলে ঘোড়াটি লাকিয়ে উঠলে তিনিও ছিটকে পড়েন মাটিতে। দারাশিকো আগেই সেখান থেকে সরে গিয়েছিল। ততক্ষণে বর্শার আঘাত আর আতশবাজিতে আক্রান্ত হাতিটি সরে যায়। এতে রক্ষা পায় শাহ সুজা ও দারাশিকো। ছেলের এমন বীরত্ব দেখে আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভূয়সী প্রশংসা করেন বাদশাহ শাহজাহান। ভূষিত করেন ‘বাহাদুর’ উপাধিতে। পিতার প্রশংসার জবাবে আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই লড়াইয়ে যদি আমি মরেও যেতাম, তথাপি ভীত হয়ে পালানোর চেয়ে ভালোই ছিল। এটা আমার গৌরবের মৃত্যুই হতো। উনি কতটা সাহসের অধিকারী ছিলেন এই ঘটনার মাধ্যমে সে বিষয়টিও ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)