বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন
, ২৩শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আনুষ্ঠানিক সূচনাপর্ব থেকেই মহাপবিত্র ১২ই শরীফ মহা জাকজমকের সাথেই পালিত হয়ে আসছে। সারা পৃথিবীর মতো ভারতীয় উপমহাদেশেও রয়েছে পবিত্র ১২ই শরীফ পালনের সমৃদ্ধ ইতিহাস। আজ আমরা ভারতীয় উপমহাদেশে; বিশেষ করে বাংলায় মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানবো-
নবাবী আমল: ১৫০০ ঈসায়ী সালের দিকে বাংলার নবাবী শাসনের প্রতিষ্ঠাতা নবাব মুর্শিদকুলী খান ব্যাপকভাবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতেন। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত “বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস” বইয়ের ২য় খন্ডে ১৯৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, বাংলার মুসলমানগন অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে ও ধুমধামের সাথে পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন। নবাব এ দিনকে বিশেষ থেকেও বিশেষ উৎসবের দিন হিসাবে পালনের ব্যবস্থা করেন। মহাসম্মানিত পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনার প্রথম ১২ দিন বিশেষভাবে পালনের ব্যবস্থা করেন। এ উপলক্ষ্যে তিনি সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদ শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা আলোকমালায় সজ্জিত করতেন। ১ লক্ষ মানুষ শুধু আলোকসজ্জার কাজে নিয়োজিত থাকতেন। কামান গর্জনের মাধ্যমে সড়ক ও নদীপথ আলোকিত হয়ে উঠতো। আওলাদে রসূল ও আলেম উনাদের উপহার দেয়া হতো। রাজপ্রাসাদে শাহরুল আযম শরীফ মাসের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত উলামায়ে কিরাম উনাদের মজলিস হতো। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা হতো।
ব্রিটিশ ঢাকা: ড. মুহম্মদ আলমগীরের লেখা ‘এই ঢাকা সেই ঢাকা কত স্মৃতি কত কথা’ বইয়ে বর্ণিত হয়েছে- ঢাকায় ব্রিটিশ আমলেও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হতেন। পথঘাট ব্যাপকভাবে সাজানো হতো। সারা শহরে ঘটা করে পালন হতো। মহল্লায় মহল্লায় পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হতো। ঢাকার নবাব পরিবারগুলোও মীলাদ শরীফ মাহফিল করতেন। বিশেষ প্রতিযোগিতা মাহফিল উনার আয়োজন করা হতো। অসংখ্য মানুষ এ অনুষ্ঠান দেখতে আসতেন।
কবি-সাহিত্যিকদের সক্রিয়তা: পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস আসার সাথে সাথে বাংলায় কবি-সাহিত্যিকগণের মধ্যে ১২ই শরীফ নিয়ে কবিতা-প্রবন্ধ লেখার ধুম পড়ে যেতো। মুসলিম সাহিত্যিকদের মতে, পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের মাধ্যমেই বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতির জাগরণ ঘটেছে। এজন্যই ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ‘এক জাতি গঠন’ প্রবন্ধে বাঙালি মুসলিমদের পক্ষ হতে পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মীর মোশাররফ, শান্তিপুরের কবিখ্যাত মোজাম্মেল হক, ইয়াকুব আলী চৌধুরী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, কবি দাদ আলী মিঞা, কাজী নজরুল ইসলাম, সুফি মোতাহের হোসেন, সুফি জুলফিকার হায়দার, মুহম্মদ বরকতউল্লাহ, ফররুখ আহমদসহ আরও অনেক বাঙালি-মুসলিম সাহিত্যিকের নাম আনা যাবে যাঁরা পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ উপলক্ষে স্বতন্ত্র কবিতা-প্রবন্ধ লিখে প্রকাশ এবং প্রচার করেছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, প্রাচীন বাংলায় মুসলমানরা বছরে দুই ঈদ, পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র শবে ক্বদরসহ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অন্যান্য বিশেষ দিবসগুলো ব্যাপকভাবে পালনের করলেও সবারই দিবস পালনের মূল আগ্রহ গ্রথিত ছিলো প্রতি বছরের পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ উনাকে কেন্দ্র করে। পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস আগমন করলে বাংলার মুসলমানদের মধ্যে এতটাই জজবা ও জোস লক্ষ্য করা যেতো যে, সে সময় সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ উনাকে কেন্দ্র করে যে কিতাবাদিই প্রকাশিত হতো তা নিমিষেই শেষ হয়ে যেতো। যেখানেই এ উপলক্ষ্যে মাহফিল হতো তা লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)