ইতিহাস
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের ইতিহাস (১)
, ১৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৬ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আগমনের সূচনা:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আরব ভূমিতে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক আনয়ন করে আরববাসীসহ সমগ্র কায়িনাতকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নূর হাদিয়া করেন। তবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রসার শুধু আরব ভূমিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিশ্ব মানবতার একমাত্র কান্ডারী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা উড্ডিন হয়েছে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়, প্রতিটি ভূখন্ডে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়েই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরব ভূমির সীমানার বাইরে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সমৃদ্ধশালী পরিধি মুবারকের বিস্তার ঘটিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ঠিক সে সময় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ঘটেছে। আর তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশ।
বাংলাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের কথা বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে থাকে। তবে মশহুর মত হচ্ছে, বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ঘটে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাটে ৬৯ হিজরীতে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নির্মিত ‘ছাহাবী মসজিদ’ আবিস্কৃত হওয়ার পর বাংলাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আগমণের ইতিহাসের দৃশ্যপটই বদলে গেছে। ১২০৪ সালে বাংলা বিজয়ের প্রায় ৬০০ বছর আগেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দ্বারা বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও প্রচার প্রসার হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর সম্ভ্রান্ত মুসলিম আরব বণিকগণ এই উপমহাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার প্রসার করেছেন। তৎকালীন দক্ষিণ ভারতের মালাবার অন্তর্গত ‘চের’ রাজ্যের রাজা চেরামান পেরুমল সম্মানিত চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা মুবারক ‘চের’ রাজ্য থেকে প্রত্যক্ষ করেন। তখন তিনি আরব বণিকদের মাধ্যমে জানতে পারেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কথা। এরপর তিনি সরাসরি আরবে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে উনার নাম মুবারক রাখা হয়েছিলো মুহম্মদ তাজউদ্দিন। অর্থাৎ হিজরী প্রথম শতকেই দ্বীন ইসলাম ভারতের মালাবার তথা পশ্চিম উপকূলে পৌঁছে যায়। আর নিশ্চয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অগ্রযাত্রা ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি এটা মহাসত্য। ইতিহাসের আলোকে পাওয়া যায়, সপ্তম শতকে বঙ্গোপসাগর ছিলো বিশ্ব-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল। কাজেই সপ্তম শতকে অর্থাৎ হিজরী প্রথম শতকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জাহাজ বাংলার উপকূলে নোঙ্গর করেছিলো এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
মুসলিম ভূগোলবিদদের বর্ণনা:
আরব ও ইরানের ইতিহাস পাঠে হিজরী প্রথম শতক থেকে অষ্টম শতক পর্যন্ত শত শত খ্যাতিমান মুসলমান ভূগোলবিদ ও বিশ্ব পর্যটকের নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ ভূগোলবিদগণের অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আবার অনেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণীর সাহায্যে নিজেদের গ্রন্থ রচনা করেন। আরব ভূগোলবিদদের বর্ণনায় বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ‘সমন্দর’ নামক একটি বন্দরের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল মাসালিক ওয়াল মামালিক’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘কামরুত থেকে সমন্দরে চন্দন কাঠ মিষ্ট পানির মাধ্যমে (নদীপথে) পনের বিশ দিনের মধ্যে আনীত হয়। ঐতিহাসিক আল ইদ্রিসী তার ‘নুযহাতুল মুশতাক’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘সমন্দর একটি বড় শহর, বাণিজ্যকেন্দ্র ও সমৃদ্ধশালী স্থান’। পরবর্তীতে ড: আব্দুল করীম তার ‘চট্টগ্রামে ইসলাম’ গ্রন্থে এ সমন্দরকে চট্টগ্রামের সাথে অভিন্ন বলে প্রমাণ করেছেন।
তবে বিশেষভাবে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, ছুফী-বুযূর্গ উনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারের ভীত শক্তিশালী হয়েছে এবং পরবর্তীতে মুসলিম সিপাহসালারদের মাধ্যমে এ অঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয়েছে।
....(চলবে)
-মুহম্মদ শাহ জালাল
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)