বন্যা কেড়ে নিয়েছে সব, মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে আকুতি হাজারো মানুষের
, ০৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) দেশের খবর
কুমিল্লা সংবাদদাতা:
ভারতের ডম্বুর লেকের বাঁধ খুলে দেওয়া ও কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণের ফলে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। বানের পানি নামতে শুরু করলে দৃশ্যমান হতে থাকে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় শতশত পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোমতীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া অংশের মানুষ। বাঁধ ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়েছে বহু মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই, গ্রোতে ভেসে গেছে ঘরের আসবাবপত্র। বানের পানি চলে যাওয়ার পর সেসব পরিবারের এখনো পুনর্বাসন হয়নি। ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি নিয়ে অনিশ্চিত জীবনের মুখে নিম্ন আয়ের বাসিন্দারা।
বুড়বুড়িয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত দুলাল মিয়া বলেন, বাঁধ ভাঙার সময় ট্রেনের মতো একটা শব্দ হয়েছে। কোনোরকম জীবন নিয়ে দৌড় দিয়ে বাঁধের ওপর গিয়ে উঠি। পরে এসে দেখি ঘরের সব ভেসে গেছে। আমাদের দুইটা ঘর ভেঙে পড়েছে। আমরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে চার বান টিন পেয়েছি। আর বিভিন্ন মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু এই অনুদান আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
একই এলাকার আনিসুর রহমান বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। আমাদের ৭ ছেলে-মেয়ে। বন্যায় ঘরের একপাশের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ঘরের আসবাবপত্র সব ভেসে গেছে। সরকারের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়বুড়িয়া, গাজিপুর, ইছাপুরা, ইন্দ্রাবতী এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকা নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুরের কাজ করেন। কেউ কেউ আবার বিত্তশালী হলেও সেই সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। এসব এলাকার সিংহভাগ মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস চরের জমিতে কৃষিকাজ ও অটোরিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করা। বন্যার পানির করাল গ্রাস সেসব মানুষদের ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে দীর্ঘশ্বাস।
সম্প্রতি বুড়বুড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়িহারা মানুষ একচালা টিনের ছাউনি দিয়ে ত্রিপলের বেড়া দিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছেন। পাশেই পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন। ঘরবাড়ি, গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ, টয়লেট, হাঁস-মুরগির খোয়াড় থুবড়ে পড়ে আছে। কেউ কেউ সেসব পরিষ্কারের কাজ করছেন। সেসব মানুষদের জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে টিন ও নগদ অর্থ দিলেও তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা।
তারা জানান, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে চার বান করে টিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতি পরিবারকে নগদ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে সেসব অনুদানে পুনর্বাসন কাজ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা। অপরদিকে এখন পর্যন্ত বানভাসি সেসব মানুষদের সরকারের তহবিল থেকে পুনর্বাসনের কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। বানের পানি শুধু ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়েছে তা নয়, পানির স্রোতের সঙ্গে ঘরের মেঝে ও ভিটার মাটিও ভেসে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। ভিটা তৈরির মাটির ব্যবস্থা না করলে কোনোভাবেই পুনর্বাসনের কাজ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সেসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন।
অপরদিকে সেনাবাহিনীর দেওয়া টিন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দেওয়া অনুদান থেকেও বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই। তাদের দাবি, স্থানীয় একটি চক্র পূর্ববিরোধের জের ধরে তাদের নাম বাদ দিয়েছেন। তবে ভয়ে তাদের নাম বলতে রাজি হননি বঞ্চিতরা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলাজুড়ে ৮ হাজার ৬৭৪টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বুড়িচং উপজেলায়। এ উপজেলায় ৪ হাজার ১৪৩টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৫০০টি, আদর্শ সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০টি, চৌদ্দগ্রামে ১ হাজার ৪৫টি, মনোহরগঞ্জে ১ হাজার ৩০০টি, সদর দক্ষিণে ১৩২টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৫টি এবং তিতাস উপজেলায় ৪৯টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে বন্যায়। জেলাজুড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮২টি ঘরবাড়ি।
জেলায় ভয়াবহ এই বন্যায় ঘরবাড়িতে ১ হাজার ৮৪ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে তার অনুমোদন এখন অবধি হয়নি। ঠিক কবে নাগাদ এই তালিকার অনুমোদন মিলবে তাও জানা নেই সংশ্লিষ্টদের। ঘরবাড়িহারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ডেঙ্গুতে মারা গেলো আরও ৯ জন -হাসপাতালে ভর্তি ১২১৪ জন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ভরা মৌসুম ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, তবু কমছে না চালের দাম
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দুর্ঘটনায় ৪ শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নির্বাচনের সময় জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জেনারেল ওয়াকারের সঠিক সিদ্ধান্তে সশস্ত্র বাহিনী আবারও আস্থার প্রতীক
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জ্বালানি তেলের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব -সিপিডি
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নারিকেল দ্বীপে কড়াকড়ি আরোপ, হতাশ দ্বীপবাসী -‘নিজ দেশে ভিসা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করার মতো সিদ্ধান্ত’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপরাধে শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদ- করার পরামর্শ হাইকোর্টের
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চাঁদের দূরবর্তী অংশে অগ্ন্যুৎপাত
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরলেন অপহৃত দুই জেলে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দুর্বল কারখানা বন্ধ করবে সরকার, বাছাই করতে হচ্ছে কমিটি
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)