ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কটের ৮ দিক
, ২৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) তাজা খবর
এরমাঝে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা এ সংঘাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এবারের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে তেমন আটটি বিষয় তুলে ধরা হলো।
হামাস কারা?
হামাস-এর পূর্ণাঙ্গ নাম ‘হরকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন।
হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে। এ গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল যখন প্রথম ইন্তিফাদা বা সংগ্রামের অংশ হিসেবে ১৯৮০'র দশকের শেষের দিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে।
গাজা উপত্যকায় ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দল ফাতাহকে পরাজিত করে হামাসের প্রার্থীরা। ২০০৭ সালে ইসরাইলকে হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে হামাস গোষ্ঠী।
ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে তখনো পর্যন্ত প্রাধান্য ছিল সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাত ও তার ফাতাহ পার্টির।
হামাস ২০০৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সেই প্রথম ফাতাহ পার্টির প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী একটি দল নির্বাচনের মাঠে নামে।
এরপর থেকে গাজার ক্ষমতায় তারাই আছে এবং ইসরাইলের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে।
ইসরাইলে এবারের হামলার পেছনে ইরানের কথা বারবার উঠে আসছে কারণ হামাসের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা আসে মূলত ইরান থেকে।
ইসরাইল, আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করে।।
হিজবুল্লাহ কারা?
৮০ দশকের শুরুর দিকে হিজবুল্লাহ গঠন করেছিল ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস। উদ্দেশ্য ছিল লেবাননে ইসলামিক আন্দোলনের প্রসার ও সেখানে হামলা করা ইসরাইলিদের সাথে লড়াই।
হিজবুল্লাহ ইসরাইলের সাথে সবচেয়ে বড় আকারের যুদ্ধ করেছে ২০০৬ সালে। ইসরাইলের সাথে ৩৪ দিনের সেই যুদ্ধে লেবাননের এক হাজার ১২৫-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। যাদের বেশিরভাগ ছিল সাধারণ নাগরিক। বিপরীতে ইসরাইলে মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের যাদের বেশিরভাগই ছিল সেনা। এরপর থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছে গোষ্ঠীটি।
ইসরাইলসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ নিষিদ্ধ করেছে এই গোষ্ঠীকে।
গাজা উপত্যকা:
ইসরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। এটি ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি অঞ্চল। অথচ সেই ছোট্ট অংশে প্রায় ২২ থেকে ২৩ লাখের মতো লোক বসবাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এটাই।
১৯৪৮ সালে মিশর এই অঞ্চলের পরিচালনা শুরু করে। ১৯৬৭ সালের ছয়-দিনের যুদ্ধে এর দখল নেয় ইসরাইল। ২০০৫ সালে সেখান থেকে নিজেদের সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার করে নেয় ইসরাইল।
তবে এখনো ইসরায়েল গাজা এবং এর উপকূলীয় এলাকার আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে কারা যাতায়াত করবে ও কী ধরনের পণ্য প্রবেশ করতে পারবে সেসব তদারকি করে। একইভাবে মিশরও গাজা সীমান্ত দিয়ে কারা প্রবেশ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
পশ্চিম তীর:
পশ্চিম তীর নামটি এসেছে মূলত জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের অংশ হওয়ার কারণে। এর উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে ইসরাইল, আর পূর্বে জর্ডান। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে এই অংশটিরও দখল নেয় ইসরাইল।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন হলেও এই অংশকে পুরোপুরি ছাড়েনি ইসরাইল। ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ মনে করে। তবে গত ৫০ বছরে ক্রমাগত এই অংশে বসতি বাড়িয়ে গেছে ইসরাইল। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পশ্চিম তীরে যেখানে এক লাখ ১০ হাজারের মতো ইহুদি ছিল, যে সংখ্যা এখন প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ। বিপরীতে ফিলিস্তিনি থাকে প্রায় ২৮ লাখ।
জেরুজালেম এবং আল-আকসা:
আরবদের সাথে যুদ্ধে জিতে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমও দখল করে নেয় ১৯৬৭ সালে এবং পুরো জেরুজালেম শহরটিকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে।
ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী মনে করে।
ইসরাইলও জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করে এবং ২০১৭ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর স্বীকৃতি দেয়।
প্রাচীন এই শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর কারণ মুসলমান, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনার অনেকগুলোই এই শহরে।
বিশেষত আল-আকসা মসজিদ ছিল সবসময়ের বিরোধের কেন্দ্রে। যেটা ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত।
পূর্ব জেরুসালেম ইসরাইল অধিকৃত হলেও আল-আকসা বা টেম্পল মাউন্ট এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে একটি জর্ডনী-ফিলিস্তিনী ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।
ইন্তিফাদা কী:
আরব-ইসরাইলি যুদ্ধের ২০ বছর পর ১৯৮৭ সালের শেষদিকে শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের এক সংগ্রাম। সে সময় থেকে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে সে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রথম ফিলিস্তিনি সংগ্রামের সময়কাল। এটিই ‘প্রথম ইন্তেফাদা’ বা প্রথম গণজাগরণের আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। ওই আন্দোলনে ১৪০০ জন ফিলিস্তিনি আর ২৭১ ইসরায়েলি নিহত হয়।
১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মধ্য দিয়ে সে দফায় ইন্তিফাদার অবসান ঘটে। হামাস অবশ্য তখন থেকেই সেই চুক্তির বিরোধিতা করেছে।
২০০০ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার ইন্তিফাদা। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলা দ্বিতীয় সে ইন্তিফাদায় মারা যায় ৩,৩৯২ জন ফিলিস্তিনি আর ৯৯৬ জন ইসরায়েলি।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র:
১৯১৭ সালে অটোমানদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনি ভূখ-ের দখল নেয় ব্রিটেন। তখন ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করার।
১৯৩০-এর দশকে ইহুদিরা ইউরোপ থেকে এসে কৃষি খামার গড়ে তুলতে থাকে। প্রাথমিকভাবে ইহুদিদের সাথে ফিলিস্তিনি আরবদের মোটামুটি ভালো সম্পর্ক থাকলেও ধীরে ধীরে মুসলিমরা বুঝতে থাকে যে ইহুদিরা দলে দলে এসে জমি ক্রয় করছে। আর তারা তাদের জমি হারাচ্ছে। বিশেষত ১৯৩৩ সালের পর যখন জার্মানির শাসক হিটলারের কঠোরতার প্রেক্ষিতে হাজার হাজার ইহুদি সেখানে আসতে শুরু করে।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে ইহুদি ও আরবের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভোট দেয় যেখানে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক শাসনে থাকবে।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটেন যখন ফিলিস্তিন ছেড়ে যায়, সেদিনই ইহুদিরা নিজস্ব রাষ্ট্র ইসরাইলের ঘোষণা দেয়। দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘আল-নাকবা’ বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে দেখে।
ফাতাহ, পিএলও, পিএনএ:
৫০ দশকে গঠন হওয়া ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক দল ফাতাহ। দলটি গঠনে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন ইয়াসির আরাফাত।
পিএলও বা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন। এটি গঠন হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। ইয়াসির আরাফাত এর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন ১৯৬৯ সালে।
ফিলিস্তিনের মুক্তির উদ্দেশ্যে সশস্ত্র প্রতিরোধ দিয়ে ফাতাহ দলটির শুরু হলেও পরবর্তীতে তাদের দ্বিরাস্ট্র তত্ত্বে সমর্থন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা আপস করতে দেখা যায়। যা মানতে পারেনি হামাস।
প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়েছিল ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মধ্য দিয়ে। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে আপসের এই শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল অত্যন্ত গোপনে। এজন্য তৎকালীন পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন নোবেল শান্তি পুরষ্কারও পেয়েছিলো।
ফাতাহ, পিএলও এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অনেকটাই একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পিএলওর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ফাতাহ। আর ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির আওতায় পিএলওর সাথে ইসরাইলের সমঝোতার ভিত্তিতে গঠন হয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যাদের বলা হচ্ছে তারা প্যালেস্টাইন অথরিটি বা প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল অথরিটি (পিএনএ) নামেও পরিচিত। যদিও এই কোনো পক্ষই ফিলিস্তিনের জন্য খুব কার্যকর বা জনপ্রিয় কিছু করতে পারেনি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্ত্রাসীদের সামরিক অবস্থানে রকেট ফায়ারিং
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আফ্রিকার মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কাজাখস্তানে বিমান দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত, ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ভারতের সংসদে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান, ওয়াইসিকে আদালতে তলব
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জাহাজে ৭ জনকে হত্যা করেছে ইরফান, দাবি র্যাবের
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চিকিৎসার জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাড়ে ৪ মাসেও সরকারের কাজ প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি -নুর
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় কমলা চাষে সফলতা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কম আয়ের মানুষের কাছে মূল্যস্ফীতি মানেই প্রতিদিনের লড়াই
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সরকারি হাসপাতালে কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের মেশিন, একই রোগের দুই রিপোর্ট
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘বদনাম’ ঘোচাতে কঠোর হচ্ছে বিএনপি
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
এক বছরে ২ সরকার, বিলম্ব’ পিছু ছাড়েনি ট্রেনের
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)