ফানা ফির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক (২)
, ৪ঠা জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো যে, মুয়ায্য্যিনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আগমন করেছেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং ছোট-বড় সকলেই একত্রিত হলেন। সকলের একটি আবেদন- ‘হে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! একবার আমাদেরকে ঐ আযান মুবারক শোনান যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে শোনাতেন। ’ সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘আমি অপারগ। কেননা যখন আমি আযান মুবারক দিতাম, তখন أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বলার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক লাভ করে ধন্য হতাম। তখন আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ উনার দিকে তাকাতাম আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানালা মুবারক উনার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুশ শক্ব মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আঙ্গুলি মুবারক) দিয়ে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ইলম মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সীনা মুবারক) উনার দিকে ইশারা মুবারক করে বলতেন, اَنَا اَنَا اَنَا ‘আমি, আমি, আমি। ’ তখন উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিয়ারত মুবারক লাভ করে আমার চক্ষুদ্বয় শীতল করে নিতাম। এখন ঐ বাক্য মুবারকখানা বলার সময় আমি কার প্রতি তাকাবো? ঐ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্মৃতি মুবারক স্মরণ হলে আমি সহ্য করতে পারবো না। ’
কেউ কেউ বললেন- ‘সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি এবং সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল খ¦মিস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা যদি আযান মুবারক দেওয়ার জন্য বলেন, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি জীবনের পরওয়া না করে অবশ্যই উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আদেশ মুবারক পালন করবেন। ’ এরপর কিছু লোকজন সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার এবং সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল খ¦মিস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের নিকট আরযু করলেন উনারা যেন সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে আযান মুবারক দেয়ার জন্য বলেন। তখন উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে বললেন-
يَا حضرت بِلالُ رضى الله تعالى عنه نَشْتَهِي نَسْمَعُ أَذَانَكَ الَّذِي كُنْتَ تؤَذِّنُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ
‘হে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আমরা আপনার কাছ থেকে ঐ আযান মুবারক শুনতে চাই যা আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ শুনাতেন। ’
তখন তিনি ঐ স্থান মুবারক-এ দাঁড়িয়ে আযান মুবারক দেওয়া শুরু করলেন যেখানে দাঁড়িয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আযান মুবারক শোনাতেন। পরবর্তী অবস্থা কেমন হলো তা সীরাতের কিতাবসমূহে এভাবে বর্ণিত রয়েছেন-
فَلَمَّا قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ إِرْتَجَتِ الْمَدِينَةُ فَلَمَّا قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ إِزْدَادَ رَجَّتَهَا فَلَمَّا قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُول اللَّهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) خَرَجَتِ الْعَوَائِقُ مِنْ خُدُورِهِنَّ وَقَالُوا بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا رُبِّيَ يَومٌ أَكْثَرُ بَاكِيًا وَلَا بَاكِيَةٌ بِالْمَدِينَةِ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ ذَالِكَ الْيَومِ
“অতঃপর তিনি যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বললেন, তখন পুরো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ কেঁপে উঠলেন। (তিনি যত আগে বেড়েছেন, তত আবেগ ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি পেতে লাগলেন। ) তিনি যখন ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ আরো জোরে কেঁপে উঠলেন। তিনি যখন ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদার রসূলুল্লাহ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত অধিবাসী এমনকি পর্দানশীন মহিলা উনারাও ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। (কান্নাকাটি ও রোনাজারীতে আকাশ ভারি হয়ে উঠলো। ) লোকজন বলতে লাগলেন- ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক এনেছেন। ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর পুরুষ-মহিলা উনাদের কান্নাকাটি ঐ দিনের চেয়ে বেশি আর কখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি। ” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, শারহুয যারক্বানী, মিরআতুয যামান, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ইত্যাদি)
আর এদিকে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদার রসূলুল্লাহ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলার পর যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ উনার দিকে তাকিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন না, তখন তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জুদায়ী মুবারক উনার কারণে বেহুঁশ হয়ে পরে যান। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা কতটুকু ফানা ও বাক্বা ছিলেন? তাহলে সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে উনার মাঝে কতটুকু ফানা ও বাক্বা হতে হবে? তাহলে উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল? এক কথায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, পরবর্তী উম্মত যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে চায়, তাহলে অবশ্যই আগে স্বীয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে হবে। উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা-বাক্বা হতে পারলে আপসেআপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে পারবে। সুবহানাল্লাহ! অন্যথায় কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খলীফা মনোনীত হওয়ার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (১৭)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়িয এবং বিদ্রোহীকে কতল করা বৈধ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত খলীফা উনার নিকট আনুগত্যতার বাইআত গ্রহণ করা ফরয
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)