ইতিহাস
প্রেভেজার যুদ্ধে উসমানীয়দের কাছে খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত বাহিনীর পরাজয়
, ১৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
উসমানীয় সালতানাতের নৌ সেনাপতি খাজা খাইরুদ্দিন বারবারোসা ইতিহাসে স্বরণীয় একজন মুসলিম সামরিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে সফল একজন নৌ এডমিরাল। তিনি ও উনার নৌবাহিনী সম্মিলিত খৃষ্টানদের নৌশক্তিকে পরাজিত করেছিলেন অসংখ্যবার। ১৫৩২ সালে কথিত পোপ পলের আহ্বানে খৃষ্টান নৌ-বাহিনীর একটি লীগ গঠিত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উসমানীয়দের পরাজিত করে সমুদ্রে নিজেদের একক প্রভাব বিস্তার করা। কিন্তু তাদের এ আশা শেষ করে দেন এডমিরাল খায়রুদ্দিন বারবারোসা। উনার নির্দেশনায় তুর্কী নৌ-বাহিনী ভুমধ্যসাগরে ইউরোপীয় বন্দরে ও জাহাজে হামলা চালিয়ে তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন। এ হামলা ইউরোপকে এতটাই বিপর্যস্থ করে দিয়েছিলো যে, তারা শেষ পর্যন্ত পোপকে অনুরোধ করতে বাধ্য হয় বারবারোসার বিরুদ্ধে একটি নৌ-ক্রুসেড ঘোষনা করার জন্য। কিন্তু ১৫৩৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেভেজার যুদ্ধে খৃষ্টানদের সম্মিলিত নৌ-বাহিনী বারবারোসার নিকট শোচনীয় ভাবে পরাজয় বরণ করে।
অ্যাডমিরাল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর খাজা খাইরুদ্দিন দুই দশক ধরে উত্তর আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর এবং পূর্ব আটলান্টিকে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন। উনার কয়েক ডজন রণতরী ছিলো, সেই সঙ্গে নৌ ও স্থলবাহিনীর বিশাল এক বহর। এই বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে ভূমধ্যসাগরে উসমানীয় প্রভাবকে পাকাপোক্ত করে তোলেন তিনি। তারপর নজর দেন দক্ষিণ ইউরোপের উপকূলবর্তী এলাকায়। আমেরিকার সঙ্গে স্পেনীয়দের বাণিজ্যিক পথগুলো একে একে বন্ধ করে দিতে থাকে উনার বাহিনী। এসব নৌ অভিযান থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদও অর্জিত হয়।
১৫৩৮ সালে কথিত পোপের নেতৃত্বে পাপাল রাজ্য, স্পেন, জেনোয়া, ভেনিস প্রজাতন্ত্র এবং মালটার নাইটদের সমন্বয়ে একটি যৌথ নৌবাহিনী গড়ে তোলা হয়। এই বাহিনীর লক্ষ্য ছিলো যেকোনো মূল্যে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন উসমানীয় নৌবাহিনীকে পরাজিত করা। পোপের নৌবহরের দায়িত্ব দেওয়া হয় আন্ড্রে ডরিয়ারের হাতে। এই নৌবহরে ১৫৭টি রণতরী ছিলো। অন্যদিকে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন অটোমান বাহিনীর ছিলো ১২২টি রণতরী। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৫৩৮ সালে প্রেভায় সংঘটিত এই নৌ যুদ্ধে বারবারোসার বাহিনীর কাছে পোপের যৌথ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
উসমানীয়রা যৌথ বাহিনীর ১০টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলো। এছাড়া তাদের ৩৬টি জাহাজ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং আরও ৩টি জাহাজ উসমানীয়দের হাতে চলে যায়। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে উসমানীয়দের একটি জাহাজও হারাতে হয়নি। তবে ৪০০ মুসলিম সেনা শহীদ হন। অন্যদিকে, খ্রিস্টান যৌথবাহিনীর কয়েক হাজার সেনা নিহত এবং ৩,০০০ নাবিক বন্দি হয়। ফলে রাত না পোহাতেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায় ডরিয়া।
এমন চমৎকার একটি যুদ্ধ জয়ের পর তৎকালীন উসমানীয় সুলতান সুলায়মান আল কুনানী তিনি বারবারোসাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং উনাকে পুরষ্কার হিসেবে সমগ্র উসমানীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি দেন। সেই সঙ্গে উত্তর আফ্রিকা এবং রোডসের প্রধান প্রশাসক হিসেবেও নিয়োগ পান বারবারোসা। পরের বছরগুলোতে বারবারোসা তিউনিস এবং ত্রিপলি উসমানীয় শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন।
উনার জীবনকালে উনার আক্রমনের প্রধান টার্গেট ছিলো স্পেন। যখন কুখ্যাত মুসলিমবিদ্বেষী খ্রিষ্টান শাসক ফার্দিনান্দ গ্রানাডা দখল করে গনহত্যা চালায় এবং মুসলিমদের নির্বাসন দেয়, তখন তিনি ছোট ছিলেন। কিন্তু এর প্রতিশোধের কথা তিনি কখনো ভুলে যাননি। বড় হয়ে বারবারোসা একবার স্পেনের এক বন্দরে হামলা করে প্রায় ৭০ হাজার মরিসকো মুসলমানকে উদ্ধার করে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ায় নিয়ে আসেন। উনার জীবদ্দশায় তিনি ও তার বাহিনী ৭ লক্ষ মুসলিমকে স্পেনের খ্রিষ্টানদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার হাত থেকে রক্ষা করেন। আন্দালুস পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি অসংখ্যবার স্পেনে হামলা করে স্পেনের নৌ-বাহিনীকে হারিয়ে এর উপকূলীয় শহরগুলো জয় করেন।
-মুহম্মদ শাহজালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)