ইতিহাস
প্রাচীন বাংলার মুসলমান মুদ্রার ইতিহাস
, ১৯ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ৫ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস

আপনারা জানেন কি? একসময় বাঙ্গালাহ সালতানাত অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে মুসলমান মুদ্রা প্রচলিত ছিলো। মুসলমান শাসন ব্যবস্থায় শাসকের নামে মুদ্রা প্রচলন সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। ১২০৫ খ্রি: গৌড় বিজয়ের স্মরণে সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুলতান মুহম্মদ বিন সামের নামে গৌড় থেকে মুদ্রা জারি করেন।
এটিই ছিল বাংলায় জারি করা প্রথম মুসলমান মুদ্রা। গৌড় বিজয়ের সময় থেকে বাংলায় স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৩০ বছর বাংলা দিল্লির সুলতানদের অধীন একটি প্রদেশ হিসেবে এবং পরে ২০০ বছর স্বাধীন সুলতানি হিসেবে শাসিত হয়। বাংলার প্রাদেশিক গভর্নররা দিল্লি সালতানাতের মুদ্রার অনুকরণে বাংলা থেকে শাসকদের নামে মুদ্রা জারি করেন।
বাংলার টাকশাল থেকে জারি করা এযাবৎ গৌড়ের একজন ও দিল্লির ছয়জন সুলতানের নামাঙ্কিত মুদ্রা পাওয়া গেছে। প্রাদেশিক গভর্নররা এ মুদ্রা জারি করতেন। যাদের মুদ্রা পাওয়া গেছে তারা হলেন-
(১) মুইজউদ্দীন মুহম্মদ বিন সাম (২) সুলতান শামসুদ্দীন ইলতুতমিশ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩) সুলতান জালালউদ্দীন রাজিয়া (৪) সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ (৫) সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবন (৬) সুলতান গিয়াসউদ্দীন তুঘলক ও (৭) সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক। উনাদের মধ্যে মুহম্মদ বিন সাম ও ইলতুতমিশ রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা জারি করেন। বাকি সবার রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া গেছে। একমাত্র মুহম্মদ বিন তুঘলকের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তামার মুদ্রা পাওয়া গেছে।
সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদের মুদ্রার পা-ুলিপিতে ‘তানকাহ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছে। এসব রৌপ্যমুদ্রার সব কটি ছিল পূর্ণ টাকা, মোটামুটি এক ভরি ওজনের। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণভাবে বাংলায় কোনো অর্ধ, সিকি প্রভৃতি নিম্নমানের মুদ্রা পাওয়া যায়নি।
এসব মুদ্রার একদিকে কখনো কখনো সুলতানের নাম এবং অন্যদিকে গভর্নরের নাম অথবা একদিকে দিল্লির সুলতানের এবং অন্যদিকে উপাধিসহ গভর্নরের নাম এবং প্রান্তে টাকশাল ও তারিখ স্থান পেয়েছে।
বাংলার মুসলমানদের মুদ্রা সাধারণত গোল আকৃতির। অবশ্য জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহর একটি ষড়ভুজ আকৃতির ব্যতিক্রমী মুদ্রা পাওয়া গেছে। ওজনের দিক থেকে বাংলার সুলতানি মুদ্রা প্রথমত দিল্লির মুদ্রার অনুকরণে ১১.৬ গ্রাম ওজন মূল্যমান গৃহীত হয়েছিল; কিন্তু পরে মুদ্রার ওজন কমে দাঁড়ায় ১৬৬ গ্রেন বা ১০.৮ গ্রামে।
বাংলার মুদ্রায় মুসলমান শাসনের কয়েক ধরনের প্রকাশ দেখা যায়-
* মুদ্রায় পবিত্র কালেমা শরীফ এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আনুগত্য বা সম্পর্কসূচক লিপির উদ্ধৃতি। যেমন- আলাউদ্দীন হোসেন শাহর ৮৯৯ হিজরীতে উৎকর্ষ মুদ্রার মুখ্য দিকে রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নাম মুবারক এবং গৌণ দিকে রয়েছে পবিত্র কালেমা শরীফ।
* মুদ্রায় সরাসরি শাসকের নাম উল্লেখ। যেমন-গিয়াসউদ্দীন খিলজির ৬১৯ অথবা ৬১৭ হিজরী ও ৬২১ হিজরীর মুদ্রা।
বাংলার সুলতানি শাসকরা মুদ্রাকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে টাকশালের বিকেন্দ্রীকরণ নীতি গ্রহণ করেন। রাজধানী ছাড়াও দেশের প্রশাসনিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাকশাল স্থাপন করে সেখান থেকে তারা মুদ্রা প্রকাশ করেন। সুলতানি আমলের ২৭টিরও বেশি টাকশালের নাম পাওয়া যায়।
সংকলনে: মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলদিজ প্রাসাদে ইফতার আয়োজনের স্মৃতিকথা
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়সমূহ
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসমানীয় আমলে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস যেভাবে পালন করা হতো
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জানা আছে কি? আজকের সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একসময় মুসলমানদের কর দিয়ে চলতো
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মোগল সেনাপতির ডায়েরী প্রকাশ ও বিধর্মীদের প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাস ফাঁস
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলিম কর্তৃক অমুসলিম-বিধর্মীদের ক্ষমতায়িত করার করুণ পরিণতি
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস পাঠ: পবিত্র মসজিদের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের ধারাবাহিকতা
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস পুনঃপাঠ: দাঙ্গায় হিন্দু পুলিশের ভূমিকা
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শুধু স্পেন কিংবা বাগদাদ থেকে নয়, ভারতবর্ষ থেকেও মুসলমানদের লাইব্রেরীর কিতাবাদি লুট করেছিল ব্রিটিশরা
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৩)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শের আলী খান আফ্রিদী: ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া একজন মুসলিম বীর
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১২)
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)