প্রসঙ্গ: সিডও সনদ ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস
, ২৬ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
নারী অধিকারের অনেক আইন বাস্তবায়নে নারীবাদীরা নিস্ক্রিয়
তবে ‘সিডও’ সনদের দ্বীন ইসলাম বিরোধী ধারা বাস্তবায়নে অতি সক্রিয়!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরুদ্ধবাদী এনজিওদের অর্থায়নে পরিচালিত নারীবাদীদের চাপে সরকার ২০১১ সালের ৭ই মার্চে কথিত ‘সিডও’ সনদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী সকল সংরক্ষিত ধারা উঠিয়ে পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দিয়েছে। যদিও পূর্বে কোন সরকারই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী এসব ধারা সমর্থন করেনি। এমনকি জাতিসংঘের চাপ সত্ত্বেও এসব ধারায় সংরক্ষণ দিয়ে রেখেছিলো।
সিডও সনদ অনুমোদনের আগে নারীবাদীরা সরকারকে হুমকী দিয়ে যাচ্ছিল। এর প্রেক্ষিতে সরকারের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টিতে ২০১১ সালের ১২ই জানুয়ারী রাজধানীর ইস্কাটনের ‘বিয়াম অডিটরিয়ামে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভস অন সিডও’ বাংলাদেশ, আয়োজিত 'সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন' শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরুদ্ধবাদী নারীবাদী সংগঠনগুলো।
সম্মেলনে ৩৮টি এনজিও এবং কথিত মানবাধিকার সংস্থার লোকেরা ছাড়াও সারাদেশের প্রায় ৫০০টি সংগঠন অংশগ্রহণ করে বলেছে, “দরকার হলে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে সিডও সনদে পূর্ণ অনুমোদন দান ও বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে। সরকার ওই সনদ অনুমোদনে কিছু লোকের ধর্মীয় মনোভাবকে প্রাধান্য দিচ্ছে। নারীর অধিকার ও অনুভূতিকে আমলে নিচ্ছে না।’
নারী অধিকার নিয়ে করা অনেক আইনেরই বাস্তবায়ন নেই। এসব আইন বাস্তবায়ন নিয়ে নারীবাদীদের তেমন কোন তৎপরতা নেই।
যেসব আইন বাস্তবায়নে নিস্ক্রিয় নারীবাদীরা!
* গণিকাবৃত্তি’ নিরোধে সাংবিধানিক আইন,
* নারী পাচার দমন এ্যাক্ট,
* নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,
* পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন
* পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন
* পিতামাতার ভরণপোষণ আইন
* The Family CourtÕs Ordinance,
* The Muslim Family LawÕs Ordinance
* The Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act
* যেমন, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী : অনুচ্ছেদ ১৮(২) ও ৩৪(১)-অনুযায়ী গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ ও আইনত দন্ডনীয়।
আইনি বিধান : দেহ ব্যবসা নিরোধ দ-বিধি ১৮৬০-ধারা ৩৭২; অবৈধ নারী পাচার দমন এ্যাক্ট ১৯৩৩; নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পতিতালয় রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে কম-বেশী সবাই অবগত। আইনানুযায়ী পতিতাদের উদ্ধার করে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করার কথা। সারাদেশে গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলার রমরমা বাণিজ্য হলেও এই আইনের প্রয়োগে বিদেশীদের পোষ্য নারীবাদীদের কোন তৎপরতা নেই। কোন আন্দোলন নেই।
* আমাদের দেশে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ, খুন, এসিড নিক্ষেপ, প্রতারণা ও লাঞ্চনার খবর পাওয়া যায়। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং নারী পাচার দমন আইনও আছে।
* প্রতি মাসে ৫০০ নারী-শিশু বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ১০০ শিশু (০-১৮ বছর বয়সী) ও ৪০০ নারী প্রতিবেশী ভারতসহ পাকিস্থান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। গত ১০ বছরে শুধুমাত্র ভারতেই প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি নারী-শিশু পাচার হয়েছে। ভারতের কলকাতা, হায়দ্রাবাদ ও মুম্বাইভিত্তিক একটি চক্র দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে একটি শক্তিশালী পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এসব দেশে প্রায় ১০ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে পিসিটিএসসিএন নমের একটি কনসোর্টিয়াম। (বাংলানিউজ টোয়েন্টি ফোর.কম ২২ নভেম্বর, ২০১৮)
* দেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২৪টি জেলার ৫ হাজার নারীর ওপর চালানো একটি জরিপ থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। (ডেইলী স্টার, ২৬আগস্ট, ২০২২)
২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এ সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ বলে ধারণা করা হয়। (ঢাকা পোস্ট ১৩ আগস্ট ২০২১)
উল্লেখ্য, সাংবিধানিকভাবে দেশে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ হলেও এই অপকর্ম নিরোধে নারীবাদীরা কোন ভূমিকা রাখেনা। বরং এই অপকর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারকে উৎসাহিত করে। কর্মক্ষেত্রে হরহামেশাই নারীরা সম্ভ্রমহরণসহ নানাবিধ শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়। পরকিয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়। অধিকাংশ কারখানাতেই নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানীয়ের ব্যবস্থা নেই। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গার্মেন্টেসে কর্মরত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগ পেটের পীড়ায়, ২০ ভাগ মূত্রনালীর সংক্রমণ, ২৫ ভাগ চোখের অসুখ ও মাথাব্যথা এবং ১৫ ভাগ দুর্বলতায় ভোগে। এসব সমস্যাকে কথিত নারীবাদীরা কোন সমস্যাই মনে করেনা। কোন তৎপরতাও দেখায়না।
* নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে নারীকে ভোগ্যপণ্য বা যৌন সামগ্রীরূপে দেখানো হয়। এসব মাধ্যমে অশ্লীলতা চরম মাত্রা অতিক্রম করেছে। নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, ফ্যাশন শো ইত্যাদিতে পুরুষের কাছে আকর্শনীয়ভাবে নারী দেহ উপস্থাপনের মহড়া দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে নারীদের সম্মান মর্যাদাহানী করা হচ্ছে। ফলে নারীরা ব্যাপক মাত্রায় নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। এসব অশ্লীলতা বন্ধে কথিত নারীবাদীদের কোনও চিন্তা-মাথাব্যাথা নেই। তারা বরং এসব অশ্লীলতাকে উৎসাহ দেয় এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে।
নারী অধিকার নিয়ে অনেক আইন থাকার পরও উল্লেখিত অপরাধ দমনে তারা নিস্ক্রিয়। এসব অপরাধের ক্ষেত্রে নারীবাদীদের কোন বক্তব্য, বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু যখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কোন বিষয়ে নারীদের নির্দেশনা মুবারক দিয়েছেন, সেই সুমহান নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করতে হেন কোন উপায় নেই যা তারা করেনা। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী এ রকমই একটি সনদ হলো, কথিত ‘সিডও’ সনদ। ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রণীত এই সনদ পালনে মুসলিম বিশ্বকে বাধ্য করছে জাতিসংঘ। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী এই সনদ বাস্তবায়নে সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রতি চার বছর পর পর জাতিসংঘের সিডও কমিটির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।
নারীবাদীরা নারী স্বার্থ রক্ষার প্রচলিত আইনগুলো যথাযথ পালন না করলেও যেহেতু ‘সিডও’ সনদে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী ধারা রয়েছে, তাই সেটা বাস্তবায়নে তারা বেপরোয়া। এমনকি সরকারকে হুমকী দিতেও তারা পিছপা হয়নি। তাদের মূল উদ্দেশ্য সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আইনগুলো পরিবর্তন করে খোদ মুসলিমদেরকেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধাচারণে অভ্যস্ত করে তোলা। নাউযুবিল্লাহ!
সরকারের উচিত, অতি সত্ত্বর কথিত এই ‘সিডও’ সনদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী ধারাগুলো বাতিল করে কথিত নারীবাদীদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও দেশ বিরোধী চক্রান্ত থেকে সতর্ক থাকা।
-আহমদ মুবাশ্বশিরা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত দিন এবং রাত মুবারক-এ স্বয়ং রহমত মুবারক উনার মালিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাছিল করা যায়
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ বুখারী শরীফে বর্ণিত জাল হাদীছের খন্ডন (১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কুফরী আক্বীদা পরিহার না করলে চির জাহান্নামী হতে হবে
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যার-তার থেকে দ্বীনি ইলিম গ্রহণ করা যাবে না
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক বাস্তবায়নে হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের বেনযীর দৃষ্টান্ত
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা অনুসরণ করবেন উনারাও হাছিল করবেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত ইবাদত মূল্যহীন
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে এই উপমহাদেশের সরকারগুলোর উদ্যোগ কোথায়?
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উসীলায় এক কোটিরও বেশি বিধর্মী পবিত্র ঈমান লাভ করেন
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র সুন্নত যিন্দাকারী অর্থাৎ মুহ্ইউস সুন্নাহ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)