প্রতিবেশীর হক্ব আদায়ের কোশেষ করা সকলের জন্যই খুবই জরুরী
, ২২ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
মুসলমানগণ উনাদের মুসলমান প্রতিবেশীদের সাথে মিলে মিশে বাস সরবে এটাই স্বাভাবিক। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকবে। প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের ফলে মানুষের সামাজিক জীবন শান্তিময় ও সুখী হয়। আর যদি প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাদের সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগেই থাকে, অনেক সময় মারামারি কাটা কাটি মামলা মোকাদ্দমা পর্যন্ত হয়। পরিণতিতে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি।
পবিত্র হাদিছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওই ব্যক্তি কে? তিনি উত্তরে বলেন, ওই ব্যক্তি যার অত্যাচার ও অপকার হতে তার প্রতিবেশী লোকেরা নিরাপদে থাকে না। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
উপরোক্ত হাদিছ শরীফ উনার মধ্যে অত্যাচারি ও অপকারি প্রতিবেশীকে ঈমানহীন উল্লেখ করা হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমান-অতিথিকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও কিয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন সর্বদা ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (বুখারি শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদিছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক মহিলা অধিক নামাজ, রোজা ও দান-সদকার কারণে তাকে স্মরণ করা হয়, তবে সে তার জবান দ্বারা তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ে থাকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। ওই ব্যক্তি আরও জিজ্ঞাসা করল ইয়া রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক মহিলা অল্প রোজা, অল্প দান-সদকা ও অল্প নামাজের বিষয় মানুষের মধ্যে আলোচনা করে। তবে সে পনীরের টুকরা বিশেষভাবে দান করে থাকে এবং তার জবান দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে জান্নাতি। অতএব আমাদের উচিত প্রতিবেশীদের হক্বগুলি যথারীতি আদায় করা। যেমন খাওয়ানো, সাহায্য-সহযোগিতা করা, ঋণদান, সেবা-শুশ্রূষা, প্রতিবেশীদের কোনও ধরনের কষ্ট না দেওয়া এবং সর্বাবস্থায় তাদের কুশল কামনা করা ইত্যাদি হক আদায় করা ঈমানের দাবি।
কিন্তু আজকাল আমারা অনেকেই প্রতিবেশীদের খোঁজ খবরই রাখি না। আমাদের আশে পাশে এমন গরীব পরিবারও আছে, যারা চাহিদা অনুযায়ী তৃপ্তিসহকারে খেতে পারছেনা, ক্ষুধার যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে ব্যক্তি উদরপূর্তি করে খায় অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। (বায়হাকী শরীফ)।
প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম ব্যবহারে ছওয়াবও পাওয়া যায় আবার তার সুফল আমাদের সামাজিক জীবনে আমরা নিজেরাই ভোগ করে উপকৃত হতে পারি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রত্যেকই একে অন্যের সাহায্যের প্রত্যাশী। কেও নিজে নিজে সব বিষয়ে সক্ষম নই। আমরা প্রত্যেকেরই প্রতিবেশীর সাহায্য নেয়া প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রতিবেশী তখনই আপনার আমার সাহায্যে এগিয়ে আসবে যখন তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে। আর যদি তা না থাকে তাহলে কেও কারো সাহায্যে এগিয়ে আসবে না।
পবিত্র হাদিছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ততক্ষণ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ সেই বান্দাহ্ তার ভাইয়ের সাহায্যে লিপ্ত থাকে। ’ (মুসলিম শরীফ, তিরমিজি শরীফ ) সুবহানাল্লাহ।
আমরা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদিছ শরীফ উনাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম আচরণ করি, হক্ব আদায়ের চেষ্টা করি তাহলে আশা করা যায় আমাদের দ্বীনি জীবন ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা আরোও সুন্দর, আরোও সুখের এবং আরোও আনন্দময় হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে প্রতিবেশীর হক্ব আদায় করার তাওফিক দান করুন।
আহমদ মাশুক মারজান
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (৯)
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কোথায় যাকাত দিবেন, তা আগে যাচাই করে দেখতে হবে
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রকৃত মুসলমান হতে হলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের খুছুছিয়াত তথা বৈশিষ্ট্য মুবারক অর্জন করতে হবে
১২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা ও লানত
১১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করাই হচ্ছে আধুনিকতা আর বেপর্দা হওয়া জাহিলিয়াত যুগের অনুসরণ
১১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার হক্ব যথাযথ আদায় না করতে পারলে রয়েছে কঠিন পরিণতি
০৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম
০৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য হাত, পা ও চেহারা আবৃত করে ঘর থেকে বের হওয়া ফরজ। খোলা রেখে বের হওয়া হারাম, জায়েয বলা কুফরী (২)
০৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত মীলাদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক
০৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক অবমাননাকারীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)