পূর্বাচলে রাজউকের ১২৬ একর জমি ‘গায়েব’
, ২০ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) দেশের খবর
সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিএজি) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিষয়টিকে অনিয়ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পূর্বাচল নতুন শহর থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ১২৬ একর জমি ‘গায়েব’ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে হিসাব নেই এ জমি অধিগ্রহণ করা বাবদ ১১ কোটি টাকার। খোদ রাজউকের নিরীক্ষা অন্তত এমনটাই বলছে। আর একেই অনিয়ম বলছে সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় (সিএজি)।
প্রকল্পে মোট ৬ হাজার ২১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে রাজউক। তবে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির দখলে আছে ৬ হাজার ৮৭ একর জমি। বাকি ১২৬ একর জমি কোথায় গেল, তার সঠিক জবাব নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে।
রাজউকের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব নিরীক্ষার সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে এ নিয়ে নিরীক্ষা চালায় সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় (সিএজি)। গত জুন মাসে তারা নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে বিষয়টিকে অনিয়ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিএজির কর্মকর্তারা জানান, জমি কম দখলে নেওয়ার বিষয়ে রাজউক কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি। অনিয়ম নিয়ে সচিব বরাবর নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও তাগিদপত্র ইস্যু করা হয়েছিল। এরপরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো নিষ্পত্তিমূলক জবাব দেওয়া হয়নি। তাই অধিগ্রহণ ও দখলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
নিরীক্ষাকালীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ছিলেন উজ্জ্বল মল্লিক। বর্তমানে তিনি রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর (বাস্তবায়ন) দায়িত্বে আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গা কম পাওয়া যাচ্ছে মানে? আমি হলাম এই প্রকল্পের দশম পিডি। আমি কি জায়গা দখল করেছি?’
‘নিরীক্ষাকারীরা হয়তো না বুঝে লিখেছেন’
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজউকের অধিগ্রহণ করা জমি মোট ২০টি খাতে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বেশি জমি বরাদ্দ করা হয়েছে আবাসিক প্লট, সড়ক, জলাধার, আবাসিক ব্লক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য। এর মধ্যে আবাসিক প্লটে ২ হাজার ৩৩.৫৫ একর, সড়ক নির্মাণে ১ হাজার ৪৫৪.২৫৪ একর, পানিধারে ৪৬০.৯৪০ একর, আবাসিক ব্লকে ৩২৫.৩২২ একর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে ২৭০.৩৬৯ একর জমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ফুটপাত, শরীরচর্চার অবকাঠামো, বনায়ন ও ইকোপার্ক নির্মাণ ও সবুজায়নসহ (আরবান গ্রিন) অন্যান্য খাতে বিভিন্ন পরিমাণ জমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে ৩০০ ফুট সড়কের জন্য কোনো জমি বরাদ্দের উল্লেখ নেই।
তবে তৎকালীন পিডি উজ্জ্বল মল্লিক দাবি করেন, ‘৩০০ ফুট সড়কের ১৫০ একর জায়গা ধরা হয়নি। ওই জায়গা হয়তো দেখায়নি, এ রকম কিছু একটা হবে। ওই সড়কে যে ১৫০ একর জায়গা আছে, ওই জায়গা ওই প্রকল্পের আওতায় আছে। নিরীক্ষাকারীরা হয়তো না বুঝে লিখেছেন।’
নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়টি জানেন না বলেও জানান উজ্জ্বল মল্লিক। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ হয়েছে ৬ হাজার ২২৭ একর। আর মাস্টারপ্ল্যানে জমি আছে ৬ হাজার ৭৭ একর। এর সঙ্গে ৩০০ ফুট সড়কের ওই ১৫০ একর জমি যোগ করতে হবে।
নিরীক্ষা আপত্তির কথা জানেন না পিডি:
সিএজির নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২০১৯ সালের জুনের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিগ্রহণ করা মোট জমির পরিমাণ ৬ হাজার ২১৩.৫৫ একর। প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৭.৩৫৫ একর জমি। বাকি ১২৬.১৯৫ একর জমির হিসাব নেই।
নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের বর্তমান পিডি মোহাম্মদ মনিরুল হক বলেন, ‘ওরা যে আপত্তি দিয়েছে, এটা ওরা সরেজমিনে মেজারমেন্ট (পরিমাপ) করে দেয়নি। আমরা তো এ রকম কোনো তথ্য দিইনি যে জমি কম আছে।’
মনিরুল হক বলেন, ‘আমি ওই শাখার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। আর নিরীক্ষা আপত্তির জবাবও দেওয়া হবে।’
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প ধরা হয় ঢাকার অদূরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পকে। ১৯৯৫ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালে। তবে তা হয়নি। মোট সাতবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ মেয়াদ বেড়েছে গত বছরের জুন মাসে। বর্ধিত এ মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা।
সিএজির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে রাজউকের ব্যয় হয়েছে ৫৪২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ একরপ্রতি ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫০১ টাকা। এই হিসাবে ১২৬.১৫৫ একর জমির দাম ১১ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৯ টাকা।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিয়ে প্রতারণামূলক দুর্নীতি হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। তবে রাজউকে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়। তিনি বলেন, ‘কীভাবে এটা হলো, খতিয়ে দেখতে হবে এবং জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। না হলে এ ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা চলতে থাকবে।’
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
-নির্মাণ কাজ বন্ধ, বাস চলাচলে বিধিনিষেধ
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাত্রদল নেতার ছুরিকাঘাতে বিএনপি-জামাতের ৬ নেতাকর্মী আহত
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সিটি কলেজ, বিপদে ১০ হাজার শিক্ষার্থী
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি টিপু গ্রেফতার
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অন্তর্র্বতী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ে গৃহীত কার্যক্রম
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিল্পাঞ্চলে সেনাবাহিনীর পরিচয়ে প্রতারণা করলে ব্যবস্থা -আইএসপিআর
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দেশবাসীকে বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে -রিজওয়ানা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আমাদের দায়িত্ব, এ বিষয়ে ভারতের কিছু বলার দরকার নেই -উপদেষ্টা নাহিদ
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের পণ্যবাহী জাহাজ, উদ্বেগ ভারতের
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিহত মাছুমকে হারিয়ে আজ বড়ো অসহায় তার পরিবার
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘ডার্ক সফটওয়্যার’ কমাবে ঢাকার সড়ক দুর্ঘটনা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)