পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ১৩ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ৩০ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আরজু করেছিলেন। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে-
لِكُلِّ نَبِيٍّ رَفِيقٌ فِي الْجَنَّةِ
হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে প্রত্যেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে বেহেশ্তে একজন সঙ্গী থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একদিন বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক! সকল নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য একজন সঙ্গী থাকবে বেহেশ্তে। আমার যে সঙ্গী হবে বেহেশ্তে সে কে? সে ব্যক্তি কি জমিনে জিন্দা রয়েছে?
মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন যে, হ্যাঁ, জিন্দা রয়েছেন।
আয় মহান আল্লাহ পাক! তার সাথে কি আমার সাক্ষাত হবে?
মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনি যদি সাক্ষাত করতে চান তাহলে হবে।
হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক! আপনি যদি আমাকে অনুমতি দান করেন এবং তার পরিচয়, তার ঠিকানা আমাকে দান করেন তাহলে আমি তার সাথে একটু সাক্ষাত করতে চাই। যে ব্যক্তি আমার বন্ধু হবে তার কি আমল অর্থাৎ সে কোন আমলের কারণে আমার বন্ধু হবে সেটা আমার জানার ইচ্ছা রয়েছে। কি কারণে সে আমার বন্ধু হলো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সে ব্যক্তির ঠিকানা জানিয়ে দিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তিনি সেই ঠিকানা মুতাবেক রওয়ানা হলেন।
মূলত যে লোকটা উনার বন্ধু হবেন বেহেশ্তের মধ্যে সে ব্যক্তি একজন গোশত বিক্রেতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিলেন অমুক বাজারে তার একটা দোকান রয়েছে, অমুক দোকান হচ্ছে তার। সে দোকানে গোশ্ত বিক্রি করে খুব ইনসাফের সহিত সে হবে আপনার বেহেশ্তের সঙ্গী।
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেই বাজারে গেলেন গিয়ে সেই দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। খুব সকাল সকাল গেলেন, উদ্দেশ্য হলো সে কি করে গোশ্ত বিক্রি করে, কিভাবে বিক্রি করে, কি দরে বিক্রি করে ইত্যাদি ইত্যাদি জানার জন্য।
তিনি সেখানে গিয়ে দূরে থেকে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করতে লাগলেন এবং দেখলেন, কিছুক্ষণ পর একটা লোক আসলো কিছু গোশ্ত নিয়ে, এসে সে প্রথমে ভাল এক টুকরো গোশত আলাদা করে নিল।
সে সারা দিন গোশ্ত বিক্রি করলো। প্রায় দ্বিপ্রহরে অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্তে তার গোশ্ত বিক্রি শেষ হয়ে গেল। অতঃপর সে যেই গোশতের টুকরাটা আলাদা করে রেখেছিল সেটা তার ব্যাগে ভরে রওয়ানা হলো।
মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তার পিছনে রওয়ানা হলেন তার বাড়ীতে যাওয়ার জন্য।
কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন যেহেতু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী। তাই উনার পক্ষে একটা লোকের পিছনে না বলে চলাটা নুবুওওয়াত এবং রেসালতের খেলাফ হবে, তাই তিনি সেই লোকটাকে ডেকে বললেন- হে ভাই, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। কথা হচ্ছে যে, আমি তোমার সাথে তোমার বাড়ীতে যেতে চাই যদি তোমার কোন অসুবিধা না হয়।
সে ব্যক্তি বললো, কোন অসুবিধা নেই। আপনি আমার বাড়ীতে যাবেন ঠিক আছে, আমার সাথে চলুন। সে খুশি হয়ে রাজী হলো। কিন্তু সে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে চিনে না। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি গোশ্ত বিক্রেতার সাথে সাথে তার বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছলেন।
যখন তার বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছলেন এবং তার ঘরে প্রবেশ করলেন তখন দেখলেন যে, তার বাড়ীতে কেউ নেই। প্রথমে মনে হলো সে একা। এরপর সে ব্যক্তি যে গোশ্তের টুকরাটা নিয়েছিল। সেটা চুলাতে বসালো। যেহেতু নরম গোশত ছিল তাই পাক করে সুরুয়ার মতো করে নিল অর্থাৎ নরম করে নিল।
রান্না করে তার ঘরের এক কোণায় একটা বড় টুকরী ছিল; সে তার ভিতরে দু’হাত প্রবেশ করিয়ে একটা খুব বৃদ্ধা জয়ীফা মহিলাকে বের করে নিয়ে আসল। এতো দুর্বল বা জয়ীফা হয়ে গেছে যে, মনে হচ্ছে কবুতরের বাচ্চার মতো। অতঃপর হাত মুখ ধোয়ায়ে সেই গোশ্তের সুরুয়াগুলো পান করালো। পান করিয়ে আবার হাত মুখ ধোয়ায়ে কাপড় পালটিয়ে যথাস্থানে রেখে দিলো।
যখন সে খাওয়ালো, পান করালো এবং হাত মুখ মুছে দিলো তখন সে বৃদ্ধা মহিলা যেন চুপে চুপে বিড় বিড় করে কি বললো। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত কালীমুুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দূর থেকে সেটা লক্ষ্য করলেন এবং তিনি তার প্রত্যেকটা কাজ-কর্ম, উঠা-বসা লক্ষ্য করতেছিলেন।
যখন তার সে কাজ সমাধা হলো তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন হে ভাই, এই যে একজন বৃদ্ধা মহিলা তুমি যাকে খাওয়ালে, পান করালে, কাপড়-চোপড় পাল্টালে, হাত-মুখ ধুয়ে দিলে, তিনি কে?
তখন সেই গোশ্ত বিক্রেতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো যে, এই মহিলা হচ্ছেন, আমার মাতা। উনাকে দেখার মতো আমি ছাড়া এই জমিনে আর কেউ নেই এবং তিনি এতো জয়ীফা এত দুর্বলা হয়েছেন যে উনার পক্ষে উঠা, বসা, চলা-ফেরা কোনটা করাই সম্ভব নয়। তাই উনার তরফ থেকে কাজগুলো আমিই করে দেই। অর্থাৎ উনাকে হাত মুখ ধোয়ানো, গোসল করানো, কাপড় পাল্টানো যা রয়েছে, খাদ্য খাওয়ানো, পানি পান করানো সবটাই আমি করে দিয়ে থাকি। সেজন্য আমি নির্দিষ্ট সময় করে নিয়েছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি সেটা করে দেই। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের জন্যেই ফরয
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য হাত, পা ও চেহারা আবৃত করে ঘর থেকে বের হওয়া ফরজ। খোলা রেখে বের হওয়া হারাম, জায়েয বলা কুফরী (৩)
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত মীলাদ শরীফ পালন করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (৯)
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কোথায় যাকাত দিবেন, তা আগে যাচাই করে দেখতে হবে
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রকৃত মুসলমান হতে হলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের খুছুছিয়াত তথা বৈশিষ্ট্য মুবারক অর্জন করতে হবে
১২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা ও লানত
১১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করাই হচ্ছে আধুনিকতা আর বেপর্দা হওয়া জাহিলিয়াত যুগের অনুসরণ
১১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার হক্ব যথাযথ আদায় না করতে পারলে রয়েছে কঠিন পরিণতি
০৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম
০৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)