পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান
, ২৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৬ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০১ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
মুসলমানরা সেচব্যবস্থা প্রযুক্তির ক্রমোন্নতিতে অনেক কাজ করেছে। একাদশ শতাব্দীর পারস্য গণিতবিদ এবং প্রকৌশলী মুহম্মদ আল-কারাজি ‘গুপ্ত পানির উৎস’ খোঁজা নিয়েও কথা বলেছিলেন। তিনি এ সময় পানির উৎস খোঁজার কৌশল, পানি আহরণের কৌশল এবং এসব কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। পানি বাষ্পে পরিণত হয়ে উবে যাওয়া রোধ করতে মুসলমান বিজ্ঞানীরা ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ খুঁড়তেন। এই সুড়ঙ্গগুলোর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কানাত’। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সুড়ঙ্গ নির্মাণ হয়েছিল পারস্যে।
দিন দিন কৃষি খাতে যত উন্নতি ঘটতে শুরু করে এবং যতই বেশি ফসল ফলানোর চাহিদা বাড়তে থাকে, পানির প্রয়োজনও বাড়তে থাকে। এ চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বহু কানাত নির্মাণ করা হয়। গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে কানাত খনন একেবারে জরুরি হয়ে পড়েছিল। এরপর স্পেনের কর্ডোভাতে কানাত খনন পদ্ধতি চালু হয় এবং এতে করে শহরে ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ শুরু হয়। বর্তমান আফগানিস্তানে হাজারো কুয়া স্থাপন করা হয়েছিল এবং এই কুয়াগুলো কানাত বা সুড়ঙ্গ দ্বারা সংযুক্ত ছিল। মাইলের পর মাইল অবিচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের উপযোগী করে এই কানাতগুলোকে বিশেষভাবে তৈরি করা হতো। কোনো কোনো এলাকায় এই কানাত পাথরের ওপর একটি ছোট নদী মনে হলেও ভিন্ন ভূখ-ে এটি ভিন্ন রূপ নিত। আলজেরীয় সাহারা ভূখ-ে ‘ফোগারাস’ নামক এ রকম একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের চ্যানেল ছিল। সেখানকার কৃষকরা একটি পানিঘড়ি ব্যবহার করে পানির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করত।
ইরানের বেশ কিছু অঞ্চলে পানিবিদ্যুৎ বাঁধ এবং আধুনিক সেচের ব্যবস্থা থাকলেও অনেক কৃষকই বর্তমান সময়েও এই কানাত ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকেন। শিরাজের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এখনো ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ এবং কুয়া থেকে পানি আহরণ করা হয়। এই অঞ্চলগুলোর পানিবায়ু এবং পানির স্বল্পতাতে আলোকপাত করলে আমরা দেখতে পাব আধুনিক সময়ের মতোই প্রাচীন যুগেও পানির নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন ছিল। সে সময়ের কর্তৃপক্ষও তা নিয়ন্ত্রণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইরাকে পানি ব্যবস্থাপনার বড় বড় প্রকল্প সরকার দেখাশোনা করত। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ স্থানীয় পানি উত্তোলন যন্ত্রের মাধ্যমেই পানির চাহিদা মেটাত।
মিসরবাসীর জীবনের প্রতিটি অংশের সঙ্গে মিশে ছিল নীলনদের পানি। এ নদের পানি ব্যবস্থাপনারও প্রয়োজন ছিল প্রকট। আব্বাসীয় ও মামলুক শাসনামলে সুলতানগণ বাঁধ পরিচালনাসহ সুড়ঙ্গ খনন এবং পরিষ্কার রাখার পরিচালনার দায়িত্বে থাকতেন। ইরাকের সুলতান নিজে বড় অবকাঠামো পরিচালনা করতেন আর অন্যান্য মানুষ ছোটখাটো অবকাঠামো পরিচালনার দায়িত্ব নিত। অধিকাংশ আমির এবং উচ্চশ্রেণির কর্মকর্তাদেরই এ রকম কাজে প্রধান পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো। মামলুকদের অধীনে কাশিফ আল-জুসুর পদবিধারী এক কর্মকর্তাও ছিলেন, যার কাজ থাকত মিসরের প্রতিটি প্রদেশের বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা। এ বাঁধগুলোতে ময়লা ফেলা নিষিদ্ধ ছিল।
১২ শতাব্দীর উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে আল-আওয়্যাম তার রচিত ‘দ্য বুক অব অ্যাগ্রিকালচার’ বইয়ে ডিপ সেচ (অল্প ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা) সম্পর্কে বলেছিলেন, এই পদ্ধতি পানির অপচয় রোধ করত এবং অতিরিক্ত পানি দেওয়া থেকে বিরত রাখত। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে গাছের গোড়ার কাছে পানি ভর্তি পাত্র রাখতেন এবং পাত্রে বেশ কিছু ছোট ছিদ্র করতেন, যাতে করে পানির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পদ্ধতিটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। মুসলমানরা দক্ষ সিভিল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়াতে পানি ব্যবস্থাপনায় তাদের কোনো সমস্যাই হয়নি। পানির উৎস একটি গিরিসংকট হলেও তারা পানি উত্তোলনের জন্য জটিল যন্ত্র এবং পাম্প ব্যবহার করে সব সমস্যার সমাধান করত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)