নারী নির্যাতন
পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিমুখতা ও ভোগবাদী অশ্লীল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নারী নির্যাতনের মূল কারণ (১০)
ডিস এন্টেনা: কুটনামি আর পরকীয়ায় সংসার ভেঙে চলেছে ভারতীয় সিরিয়াল
, ০৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
ভারতীয় সিরিয়ালের ভয়ঙ্কর নেশায় মত্ত হয়ে আছে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী। এর আসক্তি ঢাকার পাশাপাশি মফস্বলেও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতার স্টার জলসা, জি বাংলা কিংবা হিন্দিতে স্টার প্লাস, স্টার ওয়ান, জি টিভিতে চলা সিরিয়ালের বিষাক্ত ছোবলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে সমাজের উপরে। এদেশের পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে এসব সিরিয়াল।
খুবই অনৈতিক, অবাস্তব আর অশ্লীল কাহিনীতে সাজানো হয় এসব সিরিয়াল। অধিকাংশ কাহিনীর মূল উপজীব্য খুন, সম্ভ্রমহরণ, সম্পত্তি দখল, পরকীয়া, ঘরের বউদের তৎপরতা, শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক সহ আরো নানাবিধ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে সংসারে সৃষ্টি জটিলতা এবং অশান্তি। লিভ টুগেদার এবং বিবাহ বহির্ভূত সন্তানকে সমাজ খুবই সহজভাবে মেনে নেয়া হচ্ছে বলে উপস্থাপন করা হয়, যা পশ্চিমা সমাজে চলছে। বিভিন্নভাবে আমাদের সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এসব সিরিয়াল।
সংসারে ‘কুটনামি’ করে অশান্তি বৃদ্ধি করা:
ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর মূল উপাদানের অন্যতম হলো কুটনামি। কুটনামি আর ষড়যন্ত্রই হলো অনেক সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু। ড্রয়িং রুমে বসে পাত্র পাত্রীরা পরিকল্পনা করে কিভাবে কার সংসারে আগুন লাগানো যায়। প্রতিদিনই সিরিয়ালে দেখানো হচ্ছে শাশুড়ি-বৌ এর কুটনামি, দুই জা এর কুটনামি কিংবা পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও কুটনামি। সিরিয়ালে দেখানো এসব ঘটনা ‘সেøা পয়জন’ এর মত কাজ করছে নারীদের ওপর। এসব কুটনামি করা শিখছে নারীরা। এক পর্যায়ে মনের বিকৃতির কারণে এসব কুটনামির বিকৃত রুচি প্রয়োগ করছে নিজের বা অন্যের পরিবারে।
পরকীয়ার প্রবণতা:
ভারতীয় সিরিয়ালে অহরহই যে বিষয়টি দেখায় তা হলো পরকীয়া। প্রতিটি সিরিয়ালেই পরকীয়া হলো ঘটনার একটি মূল উপাদান। নৈতিকতা বিরোধী এই সম্পর্ক অতিরিক্ত দেখার কারণে সেটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে দর্শকদের কাছে। তাই সুযোগ পেলেই পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে আসক্ত নারী-পুরুষ। ফলে রাজধানী ঢাকায় দিনে ৩৮টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের তথ্যে এসব উঠে এসেছে। জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে’র প্রতিবেদনে এসেছে, ‘মাত্র তিন বছরে ঢাকা শহরে তালাকের পরিমান বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। তালাক দেয়া পুরুষ ৩০ শতাংশ, আর নারী ৭০ শতাংশ। বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ পরনারী বা পরপুরুষে আসক্তি।’ এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ‘২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ১৭ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে।’
সাধারণ বিষয়কেও জটিল করে দেখানো:
ভারতীয় সিরিয়ালে অনেক সাধারণ একটি বিষয়কেও জটিল করে দেখানো হয়। সাধারণ বিষয়কেও জটিল মনে করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। তাই যারা নিয়মিত এসব সিরিয়াল দেখে তাদের কাছে খুব সহজ, সাধারণ একটি বিষয়কেও অনেক বেশি জটিল ও কুটিল মনে হতে থাকে। ফলে অযথাই মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় তাদের।
অন্যের সম্পর্কে গিবত করা:
ভারতীয় সিরিয়ালের দেখাদেখি একের কাছে অন্যের সমালোচনা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজে। বান্ধবীদের কাছে, বোনদের কাছে কিংবা অন্য কারো কাছে অন্যের সমালোচনা করা পছন্দ করে এসব নারীরা। নিজ পরিবার বা অন্য পরিবারের গোপনীয়তা ফাঁস করতেও পছন্দ করে তারা। কে কী পোশাক পরছে, কার কতটুকু সম্পত্তি আছে, কার সন্তান আছে কার নেই ইত্যাদি অনধিকার চর্চার অভ্যাস বাড়ছে।
ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতির বিরূপ প্রভাব:
আমাদের দেশের বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন, ঈদ, সম্পর্ক সব কিছুতেই পড়েছে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব। এসব সিরিয়ালের মতো করে অশ্লীল অনুষ্ঠান করছে এদেশীয়রা। এছাড়া ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী প্রথা অনুসরণ করার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নিজস্ব দেশীয় সংস্কৃতি।
ভারতীয় অশালীন সাজ পোশাক ও মেকআপ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া:
ভারতীয় সিরিয়ালের কথিত নায়িকারা মেকআপ করে কিভাবে ঘুমাতে যায়, কিভাবে ঘুম থেকে ওঠে, কিভাবে শপিংয়ে যায়। সিরিয়াল আসক্ত নারীরাও একইভাবে মেকআপ করা ও আটসাট পোশাক পরা, লোক প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে অশালীন সাজ-সজ্জার প্রবণতা বাড়ছে।
লোক দেখানো কাজ করা:
কার কত দামী শাড়ি আছে, সিরিয়ালের নায়িকাদের স্টাইলের শাড়ি, গলার হার ইত্যাদি সিরিয়ালের ভক্ত নারীদের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কার চাইতে কে বেশি খরচ করে এসব কিনতে পারবে ও বান্ধবীদেরকে দেখাতে পারবে তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা হয় নিজেদের মধ্যে। অসুস্থ এই প্রতিযোগিতায় যারা হেরে যায় তাদেরকে কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করে না অনেকে। (চলবে)
-উম্মু সাদিন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)