নারী নির্যাতন :
পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিমুখতা ও ভোগবাদী অশ্লীল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নারী নির্যাতনের মূল কারণ (৯)
ডিশ এন্টেনা: হিন্দি সিরিয়ালের ভয়াবহ অশ্লীল আগ্রাসন
, ২৬ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
(গত ২৩ শা’বান শরীফের পর)
পশ্চিমা ও ভারতীয় সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তাহযীব-তামুদ্দুন এবং বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের মুখে! গণমাধ্যম থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র ভার্চুয়াল মিডিয়া, সংগীত এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজাতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য প্রচার করছে। ভারতীয় সিরিয়ালের ভয়াল থাবা যেন পুরো দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই বাড়ছে ভারতীয় সিরিয়াল দেখার আসক্তি। বিশেষ করে এ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে নারীরা। আর তাদের সঙ্গে থাকা শিশুরাও অনেক ক্ষেত্রে এসব সিরিয়ালের ভক্ত হয়ে উঠছে।
স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা, জি টিভি, সনি এসব চ্যানেল যেন এখন এদেশের মহিলাদের কাছে নিত্যদিনের কাজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রান্না কিংবা খাওয়া হোক বা না হোক, এসব চ্যানেলের সিরিয়াল তাদের দেখা চাই-ই চাই। প্রতিটি সিরিয়ালেরই বিষয়বস্তু পরকীয়া, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি সন্দেহ, অবিশ্বাস, নারী-পুরুষের অবাধ মিলন, তুচ্ছ কারণে খুন, নির্যাতন, পরচর্চা ইত্যাদি। এসব চ্যানেলের চাকচিক্য, পুরু মেকআপের প্রলেপ, খোলামেলা দর্শনে বাঙালির মাঝে একধরনের উম্মাদনার সৃষ্টি করেছে।
দামি পোশাক সাধারণ পরিবারগুলো কিনতে না পারার কারণে তৈরি হচ্ছে অসহিষ্ণুতা আর ঘটছে নিত্যনতুন অপরাধ। আর সব মিলিয়ে বতর্মানের অস্থিরতার জন্যও দায়ী এসব সিরিয়াল। আর এসব দেখে দেখে আমাদের নারী ও পুরুষরাও অনুকরণ করছে। একটা সংসার কীভাবে নষ্ট করা যায়, তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব উপায়ই এসব সিরিয়ালে দেওয়া আছে। ভারতীয় সিরিয়ালের বেশির ভাগ অংশজুড়ে থাকে বৌ-শাশুড়ি, কিংবা ননদ-ভাবি অথবা জা-জায়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, চুলোচুলি আর প্যাঁচ লাগিয়ে একে অপরের ঘর ভাঙা কিংবা পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি। শাশুড়িকে চোখের বিষ হিসেবে উপস্থাপন করায় এসব সিরিয়ালের মূল বিষয়। ফলে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে।
দুই দশক আগেও এমন চিত্র ছিল না। সবাই যৌথ পরিবারে বসবাস করার ফলে একে অপরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হতো। বাবা-মা, ভাইবোন, দাদা-দাদি সবাই মিলে যেন তৈরি হতো এক সুখের সাম্রাজ্য। কালের বিবর্তনে যৌথ পরিবারের বিষয়টি বর্তমান প্রজন্মের কাছে নিছকই অমূলক। গ্রামেও যৌথ পরিবারগুলো এখন সংকটের মুখে পতিত। যা মূলত পশ্চিমা ও ভারতীয় সিরিয়ালের মাধ্যমে দেওয়া এক উপহার!
এসব সিরিয়ালের প্রভাবে দেশে বিগত বছরগুলোয় বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। বেসরকারি এক জরিপে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত অপসংস্কৃতিতে ভরা নাটক-সিরিয়ালে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে’। ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) সভাপতি বলেন, ‘ইদানীংকালে দেশে ৮০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কারণ হলো ভারতীয় সিরিয়াল।’ ভারতীয় সিরিয়াল দেখাকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার ঘটনাও কম নয়।
গত বছরের ২৩ জুন স্টার জলসার নাটক দেখতে না দেওয়ায় মায়ের ওপর অভিমান করে সাভারে আত্মহত্যা করে সুমাইয়া নামের ১৫ বছরের এক কিশোরী। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে গাজীপুরে কিরোনমালা সিরিয়াল দেখতে না দেওয়ায় স্বামীকে খুন করে শাহিদা আক্তার ওরফে রিপা। এমন ঘটনা পত্রপত্রিকায় এখন প্রায়শই চোখে পড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, ‘ভারতীয় সিরিয়াল দেখাকে কেন্দ্র করে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৭ জন আত্মহত্যা করেছে।’
অন্যদিকে আরেকটি ভারতীয় সিরিয়াল ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ (যাকে সহিংসতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলা হয়) খুনের কৌশল রপ্ত করার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালের ২১ জুন রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বাবা-মা ও বোনকে হত্যা করে মেহজাবীন নামের এক মেয়ে। জানা যায়, পারিবারিক টানাপড়েনের জেরে ভারতের সিরিয়াল ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ দেখে সবাইকে হত্যা করার কৌশল শিখে। এসব ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সিরিজ একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকে ‘সিরিয়াল কিলারে’ পরিণত করছে। বর্তমান সমাজে নানা অবিচার-অনাচার দেখে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আমরা প্রতিনিয়ত বিজাতীয় বা ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে দলিত-মথিত হচ্ছি। (চলবে)
-উম্মু সাদিন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)