বিভাগ: নারী নির্যাতন
পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিমুখতা ও ভোগবাদী অশ্লীল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নারী নির্যাতনের মূল কারণ (৭)
ডিশ এন্টেনার প্রভাব: ঢাকায় বিচ্ছেদ বেড়েছে ১৭ ভাগ, ৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন নারীরা অভিযোগ ‘পরনারী’ বা ‘পরপুরুষে’ আসক্তির
, ২১ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৪ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৪ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
রাজধানী ঢাকায় দিনে ৩৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এ হিসাবে প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের তথ্যে এসব উঠে এসেছে। জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে’র প্রতিবেদনে এসেছে, ‘মাত্র তিন বছরে ঢাকা শহরে তালাকের পরিমান বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। তালাক দেয়া পুরুষ ৩০ শতাংশ, আর নারী ৭০ শতাংশ। বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ পরনারী বা পরপুরুষে আসক্তি।’ এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ‘২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ১৭ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে।’ বাংলাদেশে পারিবারিক বন্ধন ধ্বংসের এই অবস্থা ভয়াবহ! কিন্তু কেন এই অবস্থা? এটা কি এক দিনেই হয়েছে। এর নেপথ্যে কি এবং কারা তা জানা প্রয়োজন। আর তা হলো, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম, দেশ, সমাজ, জাতি ও পরিবার বিধ্বংসী তৎপরতার মূলেই রয়েছে ডিশ এন্টেনা ও অশ্লীল টিভি চ্যানেল।
বাংলাদেশে সরকার ১৯৯২ সালে ডিশ এন্টিনার অনুমোদন দেয়। এসব চ্যানেল অপারেটরদের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ হলো, বাংলাদেশ টেলিভিশন। বিটিভির লাইসেন্স শাখার তথ্যমতে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত অপারেটরের সংখ্যা ৩১৫৮। এর মধ্যে ১৭শ’ ফিড, বাকিরা ক্যাবল অপারেটর। গ্রাহক নিয়ে, অপারেটরদের দাবি এবং বাস্তবতার তফাৎ আকাশ-পাতাল। অপারেটরদের দাবি, ডিশ গ্রাহক ৪০ লাখ।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ, স্থানীয় চ্যানেল মালিক ও কর্মীদের ধারণা, এই সংখ্যা তিন থেকে সোয়া তিন কোটি। এর মধ্যে পে-চ্যানেল গ্রাহক ২ লাখ এবং ফ্রি চ্যানেল গ্রাহক ৪০ লাখ। (বাংলাট্রিবিউন ১৯/০৪/২০১৯)
গড়ে একটি টিভি দশজন দেখে থাকলে ডিশ চ্যানেলের দর্শকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ কোটি ২০ লাখ। এসব চ্যানেল এত সহজলভ্য যে, মাসিক মাত্র ২৪৯-৩৯৯ টাকায় ৪০টির অধিক এইচডি চ্যানেলসহ মোট ১২০টি চ্যানেল দেখা যায়। বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন স্যাটেলাইট ভিত্তিক ডিরেক্ট টু হোম ডিশ প্রোভাইডার ‘আকাশ ডিটিএইচ’ সহ বিভিন্ন ক্যাবল টিভি অপারেটররা এসব সার্ভিস দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, সরকারের ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপন ছাড়া টিভি ট্রিমিং) ঘোষণার আগে দেশে বিদেশী চ্যানেল প্রচারে ছিল ১০০টি। এর মধ্যে ৬৫টিই ভারতীয়। ভারতীয় এসব চ্যানেলের অনেকগুলোতে সার্বক্ষণিক হিন্দি সিনেমা দেখানো হয়। এছাড়া স্টার প্লাস, সনি, জি সিনেমাসহ আরো কয়েকটি চ্যানেলে হিন্দি ড্রামা সিরিয়াল দেখানো হয়। খুবই অনৈতিক, অবাস্তব আর অশ্লীল কাহিনীতে সাজানো হয় এসব সিরিয়াল। অধিকাংশ কাহিনীর মূল উপজীব্য খুন, সম্ভ্রমহরণ, সম্পত্তি দখল, পরকীয়া, ঘরের বউদের তৎপরতা, শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের মাঝে অবৈধ সম্পর্কসহ আরো নানাবিধ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে সংসারে সৃষ্টি জটিলতা এবং অশান্তি। লিভ টুগেদার এবং বিবাহ বহির্ভূত সন্তানকে সমাজ খুবই সহজভাবে মেনে নেয়া হচ্ছে বলে উপস্থাপন করা হয়, যা পশ্চিমা সমাজে চলছে। সব সিরিয়ালেরই ঘটনাগুলো উচ্চ বিত্ত সমাজের ড্রয়িং রুমের। ড্রয়িং রুমে বসে পাত্র পাত্রীরা পরিকল্পনা করে কিভাবে কার সংসারে আগুন লাগানো যায়। কূটনামি আর ষড়যন্ত্রই হলো অনেক সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু। এসব সিরিয়াল ধারাবাহিক ১০-১২ বছর ধরেও চলে।
দর্শকদের মতে, এসব সিরিয়ালের পোশাক অশ্লীলতায় ভরা। অনেক সময় পোশাক এতই খোলামেলা থাকে বলার মতো নয়। তাছাড়া প্রায় সময়ই থাকে আপত্তিকর দৃশ্য। যা শিশুদের সামনে দেখা যায় না। কিন্তু বাসার অনেক ছোট ছেলে মেয়ে এসব দেখছে। দেশের অধিকাংশই গৃহিনীদের অবসর সময় কাটে এসব সিরিয়াল দেখে। এসব দেখে দেখে সংসারে নানা অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। দেশে পারিবারিক বন্ধন দ্রুত ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বিবাহিতরাও পরকিয়ায় লিপ্ত হচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। পরিনামে সুখের সংসারগুলো জাহান্নামে পরিণত হচ্ছে। কিভাবে দেশের পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে, তা কয়েকটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের তথ্যে উঠে এসেছে, “রাজধানী ঢাকায় দিনে ৩৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এ হিসাবে প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্যে দাঁড়ি পড়ছে। ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছেদ বেড়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, বেশির ভাগ তালাক দিচ্ছেন নারীরা। দুই সিটিতেই ৭৫ শতাংশ তালাক নারীরা দিচ্ছেন। ২০২০ সালেও নারীদের তরফে ডিভোর্স বেশি দেওয়া হয়েছে, ৭০ শতাংশ। বিচ্ছেদের প্রবণতা শুধু ঢাকায়ই নয়, সারা দেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, পুরুষরা বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মূলত তাদের প্রতি স্ত্রীর সন্দেহপ্রবণতা, সংসারের প্রতি স্ত্রীর উদাসীনতা, বদমেজাজ, সন্তান না হওয়া ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। নারীরা কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন পরকীয়া প্রেম, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি। নাম গোপন রাখার শর্তে একজন বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক সন্দেহপ্রবণ ছিল। পাশাপাশি সম্পর্কের প্রতিও উদাসীন ছিল। এ ছাড়া সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি এলে তা নষ্ট হয়ে যায়। তারা সহযোগিতার নামে নেতিবাচক মানসিকতার দিকে ঠেলে দেয়।’ এর এক পর্যায়ে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।” (দৈনিক কালের কণ্ঠ ২৬/০৬/২০২১)
একইভাবে জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে’র তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দু'টি এলাকায় ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় ২৩০৯টি, যার মধ্যে ১৬৯২টি স্ত্রী কর্তৃক আর স্বামী কর্তৃক ৯২৫টি। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তালাকের সংখ্যা ৩৫৮৯টি। এর মধ্যে ২৩৮১টি স্ত্রী কর্তৃক আর স্বামী কর্তৃক হয়েছে ১২০৮টি। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালাক দেয়া পুরুষ ৩০ শতাংশ, আর নারী ৭০ শতাংশ।
ডয়চে ভেলে’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘একাধিক পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে মাত্র তিন বছরে ঢাকা শহরে তালাকের পরিমান বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। জাতীয় মহিলা পরিষদ নারীদের তালাকের ক্ষেত্রে প্রধানত চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো: যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং স্বামীর পরনারীতে আসক্তি। পুরুষরা কেন স্ত্রীকে তালাক দেয় তা নিয়ে এরকম কোন আলাদা গবেষণার কথা জানা নেই। তবে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এমন কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে কথা বলা জানা যায় তারা প্রধানত স্ত্রীর ‘চরিত্র দোষকেই’ দায়ী করতে চান। আর এ থেকে একটি বিষয় এখন স্পষ্ট যে ‘পরনারী’ বা ‘পরপুরুষে’ আসক্তির অভিযোগ বাড়ছে। এজন্য কেউ কেউ পাশের একটি দেশের হিন্দি এবং বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালকে দায়ী করতে চাইছেন। তাদের কথা হল এইসব সিরিয়ালের প্রধান উপজীব্যই হল ‘পরকীয়া প্রেম।’ (ডয়চে ভেলে ১৯.১০.২০১৪)
দুই সিটি কর্পোরেশন এবং জার্মান ডয়চে ভেলে’র তথ্য অনুযায়ী, বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণই হলো, স্বামী-স্ত্রী’র পরস্পরের প্রতি সন্দেহ প্রবণতা। স্বামী ও স্ত্রী’র ‘পরনারী’ বা ‘পরপুরুষে’ আসক্তি, পরকীয়া, প্রেম বিনোদন তথা বেপর্দা ও বেহায়াপনাই দায়ী। ডিশ এন্টিনার মাধ্যমে বিদেশী টিভি চ্যানেল বিশেষত ভারতীয় চ্যানেলগুলো এসব অশ্লীলতা দেশে সয়লাব করে দিচ্ছে। কিন্তু দেশে এসব দেখার কোন কর্তৃপক্ষ নেই! (চলবে)
-উম্মু সাদিন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুন্নতী খাবার পরিচিতি
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছাহিবায়ে নেয়ামত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ই’জায শরীফ
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত দিন এবং রাত মুবারক-এ স্বয়ং রহমত মুবারক উনার মালিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাছিল করা যায়
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ বুখারী শরীফে বর্ণিত জাল হাদীছের খন্ডন (১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কুফরী আক্বীদা পরিহার না করলে চির জাহান্নামী হতে হবে
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যার-তার থেকে দ্বীনি ইলিম গ্রহণ করা যাবে না
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক বাস্তবায়নে হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের বেনযীর দৃষ্টান্ত
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা অনুসরণ করবেন উনারাও হাছিল করবেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত ইবাদত মূল্যহীন
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে এই উপমহাদেশের সরকারগুলোর উদ্যোগ কোথায়?
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)