(গত ২১ রজবুল হারাম শরীফের পর)

এদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরবর্তীতে হাজার-হাজার আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মাধ্যমে। ফলে ৯৮ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের দেশের জনসাধারণ স্বভাবগতভাবেই দ্বীনদার, খোদাভীরু। কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে মার্কেটে শালীন পোষাকের আধিপত্য ছিলো। এদেশের মা-বোনদের জন্য যথেষ্ট শালীন ও সংযত পোষাক সহজলভ্য ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ফ্যাশন-মডেল, ফ্যাশন শো, ক্যাটওয়াক, গ্ল্যামার ইত্যাদি বিভিন্ন নামে তরুণী-যুবতী মেয়েদের নগ্ন দেহ প্রদর্শনের মাধ্যমে অশ্লীল-অশালীন পোষাক বাজারজাত করে মুসলিম সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করার আয়োজন করা হয়েছে।

অশ্লীল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যার প্রভাবে অতি আধুনিকতার নাম করে এখন আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পড়–য়া মেয়েরাও সেসব নগ্ন দেহ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে। নিজেদের অজান্তেই তারা কাম-ভোগ এর সামগ্রীতে পরিণত হচ্ছে।

এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, স্বার্থপর পুজিবাদী ও নারীবাদীদের পৃষ্ঠপোষকরা। ক্যরিয়ারের উন্নতি, গ্ল্যামার আর অর্থবিত্তের প্রলোভন দেখিয়ে এদেশের অনেক অনেক তরুণী, যুবতী বিশেষ করে কিশোরিদেরকে ব্রেইন ওয়াশ করে চলছে ক্রমাগত। অর্থ, খ্যাতি আর গ্ল্যামার এর আড়ালে তাদেরকে পণ্যে রুপান্তরিত করছে সেই সব পুঁজিবাদী সুবিধাভোগীদের ভোগ বিলাস আর অর্থ উপার্জনের জন্য। কে কত বেশি দেহ প্রদর্শন করতে পারে, পুরুষদের কাছে নিজেকে আরো কতো বেশি আকর্ষনীয় করতে পারে সেই এদেশের কিছু সরলমনা মেয়েদের নোংরা প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! নিত্য নতুন শর্ট-কার্ট ড্রেস আর খোলামেলা ভাবে দেহ প্রদর্শন করাই ফ্যাশন শো, ফ্যাশন মডেল, গ্ল্যামার মডেলদের মূল থিওরী।

আজকে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন আর নারী নিগ্রহের যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তার মূলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম মানহানীকারী ও পুঁজিবাদীদের হরেক রকমের প্রকল্প। তাদের কুস্বার্থ চরিতার্থে বিভিন্ন এনজিও, কর্পোরেট হাউস, ফ্যাশন হাউসগুলোর পেছনে তারা বিনিয়োগ করে। তারা অর্থ-বিত্ত, আরাম আয়েশ, খ্যাতি যশ সর্বোপরি ক্রমাগত ভোগ করার মানসিকতা গড়ে তুলেছে নারীমুক্তি, নারী স্বাধীনতার ছদ্মাবরণে। নারীকে পণ্যের মতো ব্যবহারের জন্য আধুনিকতার নামে দ্বীনহীনতা ও বেপর্দানশীলতাকে অসুস্থ, বিকৃতি মন মানসিকতা তৈরীকে তারা লালন করে। লালনের উদ্দেশ্য তাদেরই ভোগ্য পণ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য।

উঠতি বয়সী কিছু উচ্চাভিলাসী তরুণী বা মেয়ে মডেল, কথিত অভিনেত্রী হবার আশায় মগ্ন মেয়েদের সেই অন্ধকার জগতকে সোনালী, রুপালী, রঙ্গীন জগত নাম দিয়ে সারাক্ষন বুদ করে দেওয়া হয়। সেই সব উচ্চাভিলাসী মেয়েদেরকে তাদের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখায়। সেই সুযোগে সেই সব আত্মভোলা উচ্চাভিলাসী মেয়েদের নানাভাবে জিম্মি করে। কখনো নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি তুলে বা অন্য কোনভাবে ব্ল্যাকমেইল করে দেহ ভোগ করে। কেউ কেউ আবার পারমানেন্ট ভোগ্য পণ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য তাদের দায় দায়িত্বও অনেকাংশ নিয়ে নেয়। পোশাক থেকে শুরু করে কম্পিউটার, মোবাইল ও গাড়ির মেলাগুলোতেও বিভিন্ন স্টলে নগ্ন ভাবে মেয়েদেরকে মডেল করা হচ্ছে। নারীকে পুঁজি করে করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন। পন্যের বিজ্ঞাপণ তৈরীতে পণ্যের পরিবর্তে নারীর দেহ প্রদর্শনীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। আসল পণ্য নয়, নারী দেহ প্রদর্শনীই যেন পণ্য।

ঈদকে সামনে রেখে ৯৮ ভাগ মুসলিমের দেশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আসলেই কিছু নামী-দামী হোটেলগুলোতে শুরু হয় ফ্যাশন শো’র নামে নগ্নতা ও অশ্লীলতা। তারপর ফ্যাশনশো’র আদলেই তৈরী করা হয় বিজ্ঞাপন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়, অথচ রমাদ্বান শরীফ মাস আসতে এখনো ১ মাসেরও কিছু বেশী সময় বাকী। এজন্য এখন থেকেই অশ্লীলতার চলচিত্র শুরু হয়েছে। আর এই ফ্যাশন শো’ নগ্নতা, বেপর্দা সব কিছুরই এখানে মূল উপজীব্য থাকে মেয়েদের দেহ। উদ্দেশ্য; বিজ্ঞাপন দেখে মেয়েরা এই পোশাক পরাটাকেই স্মার্টনেস এবং মেয়েদের আকর্ষণের অস্ত্র হিসেবে মনে করবে।

কথিত ফ্যাশন শো, মডেলিং ইত্যাদির মাধ্যমে নগ্নতা এখন সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া হয়েছে। এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের যুবক-যুবতীদের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে দিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে উৎসাহ দেয়। ফলে অনৈতিক কোন কিছু ঘটলে তারাই আবার ধর্ষকের মৃত্যুদ-ের বিধান চেয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। দু-মুখো সাপের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। (চলবে)

-উম্মু সাদিন।