পবিত্র আশুরা সম্পর্কিত সুওয়াল জাওয়াব
, ০৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
সুওয়াল:
পবিত্র মুহররম মাসের নির্দিষ্ট কোনো আমল আছে কি? থাকলে দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব:
পবিত্র মুহররম মাসের উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠতম দিন হচ্ছে ১০ই মুহররম ‘আশূরা’র দিনটি। এ দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এ দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনে। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনাও এ দিনেই সংঘটিত হয়।
বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত প্রায় সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতকারণে এ দিনটি আমাদের সবার জন্যে এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, যা রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, নিয়ামত মুবারক হাছিল করার দিন।
ফলে এ দিনে বেশ কিছু আমল করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন-
১। পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা:
পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফরয রোযার পর উত্তম রোযা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র মুহররম উনার রোযা। ” (মুসলিম শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّـىْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهٗ
অর্থ : হযরত আবূ কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা পালনে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আশা করি যে, তিনি (উম্মতের) বিগত বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। ” (মুসলিম শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُوْمُوا التَّاسِعَ وَالْعَاشِرَ وَخَالِفُوْا فِيْهِ الْيَهُوْدَ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররম রোযা রেখে ইহুদীদের খিলাফ তথা বিপরীত আমল করো। ” (তিরমিযী শরীফ)
২। রোযাদারদেরকে ইফতার করানো:
রোযাদারদেরকে ইফতার করানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
مَنْ فَطَّرَ فِيْهِ صَائِمًا فَكَاَنَّـمَا أَفْطَرَ عِنْدَهٗ جَمِيْعَ أُمَّةِ (سَيِّدِنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلَانَا) مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ : পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তিনি যেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত উম্মতকে ইফতার করালো। সুবহানাল্লাহ!
৩। পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানো :
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ وَّسَّعَ عَلٰى عِيَالِهٖ فِى النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهٖ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে-পরাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বৎসর ওই ব্যক্তিকে সচ্ছলতা দান করবেন। সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ, মুমিন কে মাহে ওয়া সাল ইত্যাদি)
৪ ও ৫। গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো :
গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
مَنْ مَّسَحَ فِيْهِ عَلٰى رَأْسِ يَتِيْمَ وَاَطْعَمَ جَائِعًا وَسَقٰى شَرْبَةً مِّنْ مَّاءَ أَطْعَمَهُ اللهُ مِنْ مَّوَائِدِ الْـجَنَّةِ وَسَقَاهُ اللهُ تَعَالٰى مِنَ الرَّحِيْقِ الْسَلْسَبِيْلِ
অর্থ: পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে, কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত উনার দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং ‘সালসাবীল’ ঝর্ণা থেকে পানীয় (শরবত) পান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!
৬। চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়া :
চোখে সুরমা দেয়া সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
مَنْ اِكْتَحَلَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ بِكُحْلٍ فِيْهِ مِسْكٌ لَـمْ يَشْكُ عَيْنُهٗ إِلٰى قَبِيْلٍ مِّنْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ
অর্থ : যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন মিশক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে, সেদিন হতে পরবর্তী এক বৎসর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবেনা। সুবহানাল্লাহ! (মাক্বাছিদে হাসানাহ, শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ্)
৭। গোসল করা :
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে গোসল করা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ اِغْتَسَلَ فِيْهِ عُفِىَ وَلَـمْ يَـمْرَضْ اِلَّا مَرَضَ الْـمَوْتِ وَاَمِنَ مِنَ الْكَسْلِ وَالتَّعْلِيْلِ
অর্থ : যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখ-কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস এবং উনার মধ্যস্থিত পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনের ফাযায়িল-ফযীলত ও আমল সম্পর্কে জেনে সে মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)