পবিত্র আশুরা সম্পর্কিত সুওয়াল জাওয়াব
, ০৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
সুওয়াল:
কেউ বলে নববর্ষ উপলক্ষে ভালো খেতে ও পরতে হবে, আবার কেউ বলে পবিত্র আশূরা উনার দিনে ভালো খেতে ও পরতে হবে, কোনটা সঠিক ও শরীয়তসম্মত?
জাওয়াব:
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে নওরোজ বা যে কোন নববর্ষ পালন করা হারাম ও বিদয়াত।
কাজেই, নববর্ষ সেটা বাংলা হোক, ইংরেজি হোক, আরবী হোক ইত্যাদি সবই ইহুদী-নাছারা, বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিকদের তর্জ-তরীক্বা; যা পালন করা থেকে বিরত থাকা সকল মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
উল্লেখ্য, সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের শাসক জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনও পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান থেকেই এটা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
তাছাড়া বাংলা পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উপলক্ষে শহরে ও গ্রামে যে ভোজ, মেলা উৎসব হয় তাও ইরানের নওরোজ হতে পরোক্ষভাবে এদেশে এসেছে। মোঘল পূর্ববর্তী আমলে এদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের রীতি প্রচলিত ছিল না।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালনের সংস্কৃতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। তবে কথিত বাংলা সন প্রকৃতপক্ষে ফসলী সন বা পহেলা বৈশাখ বাঙালি দ্বারা প্রবর্তিত নয়। বাদশাহ আকবর ফসলী সন হিসেবে এর প্রবর্তন করে। আর বাদশাহ আকবর ছিল মঙ্গলীয় এবং ফারসী ভাষী। তাহলে এটা কি করে বাঙালি সংস্কৃতি হতে পারে? কাজেই বাঙালিদের জন্য এটা অনুসরণীয় নয়। আর মুসলমানদের জন্য তো এটা অনুসরণ করার প্রশ্নই আসেনা।
হযরত ইমাম আবু হাফস্ কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলেও তা বরবাদ হয়ে যাবে। ” অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
বিশেষত বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।
কাজেই, মুসলমানদের জন্য বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন নববর্ষ পালন করার অর্থ হচ্ছে বিজাতি ও বিধর্মীদের সাথেই মিল রাখা। তাদেরই অনুসরণ অনুকরণ করা। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি। (সূরা আনফাল: আয়াত শরীফ ৫৫)
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْـمُنَافِقِيْنَ
অর্থ: কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ নং ১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। ” (সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
অতএব, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারি, পহেলা মুর্হরম ইত্যাদি নববর্ষ পালন করার জন্য উৎসাহিত করা এবং সাথে সাথে ভাল খাওয়া-পড়ার জন্যও উৎসাহিত করা কাট্টা হারাম ও কুফরী যা থেকে বিরত থাকা ও বেঁচে থাকা সকল মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র দশই মুহররম অর্থাৎ আশূরা শরীফ উনার দিনে প্রত্যেক পরিবারের প্রধানকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাদ্য খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ وَّسَّعَ عَلٰى عِيَالِهٖ فِى النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهٖ
অর্থ: “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন অর্থাৎ পবিত্র দশই মুহররম তারিখে ভালো খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন। ” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মা-ছাবাতা বিস্সুন্নাহ)
অতএব, পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে ভালো খেতে ও পরতে হবে একথাটি সঠিক ও সম্মানিত শরীয়তসম্মত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত দিন এবং রাত মুবারক-এ স্বয়ং রহমত মুবারক উনার মালিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাছিল করা যায়
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ বুখারী শরীফে বর্ণিত জাল হাদীছের খন্ডন (১)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কুফরী আক্বীদা পরিহার না করলে চির জাহান্নামী হতে হবে
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যার-তার থেকে দ্বীনি ইলিম গ্রহণ করা যাবে না
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক বাস্তবায়নে হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের বেনযীর দৃষ্টান্ত
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা অনুসরণ করবেন উনারাও হাছিল করবেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত ইবাদত মূল্যহীন
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে এই উপমহাদেশের সরকারগুলোর উদ্যোগ কোথায়?
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উসীলায় এক কোটিরও বেশি বিধর্মী পবিত্র ঈমান লাভ করেন
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র সুন্নত যিন্দাকারী অর্থাৎ মুহ্ইউস সুন্নাহ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)