নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেমেছাল মুহব্বত মুবারক
, ২৮ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী ও খাদিম হিসেবেই পরিচিত হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। তিনি এক কাফেলার সাথে উনার নানাবাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আকস্মিক এক মুসিবতের শিকার হয়ে গেলেন। বনূ কায়েস উনাদের কাফেলাকে লুন্ঠন করে নিয়ে গেল। হাকিম বিন হিজাম কম বয়সী হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বনূ কায়েস থেকে স্বীয় ফুফু উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকের জন্য খরিদ করে নিয়েছিলেন। অতঃপর যখন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহাসম্মানিত নিসবতে আযীমাহ শরীফে (শাদী মুবারকে) আবদ্ধ হন, তখন তিনি হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে হাদিয়া করেন। আর এভাবেই হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ‘খাদিমে রসূল’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়।
হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা-মাতার এটাও জানা ছিল না যে, তিনি এখনো বেঁচে আছেন নাকি ইন্তেকাল করেছেন। উনারা ছেলে হারানোর কারণে বড়ই পেরেশান ছিলেন এবং উনাকে তালাশরত ছিলেন। পবিত্র হজ্জ করতে আসা লোকেরা হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে চিনে ফেললেন এবং উনাকে উনার পিতা-মাতার রোনাজারির খবর দিলেন। উনার ভিতর এ বিষয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।
কাফেলা ফিরে যেয়ে যখন উনার পিতাকে খবর দিলো তিনি এখনও পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করছেন। খবরে উনার পিতার মন অস্থির হয়ে উঠলেন।
তিনি কাল-বিলম্ব না করেই পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে হাজির হলেন।
যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
فلَمَّا عَلِمَ أَنَّهُ بِمَكَّةَ قدِمَهَا لِيَفْدِيَهُ فدَخَلَ حَارِثَةُ وَأخُوهُ عَلَى النبيِّ صلى اللَّه عليه وسلم
‘হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা যখন জানলেন তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করছেন। তখন তিনি মুক্তিপণ দিয়ে উনাকে মুক্ত করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে আসেন। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হারিসা ও উনার ভাই (পবিত্র মক্কা শরীফে আসার পর) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে হাযির হলেন। ’ (হাযির হয়ে বলতে লাগলেন) হে হযরত ইবনে আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হে হযরত ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম, হে হযরত ইবনে হাশিম আলাইহিস সালাম, হে আপন জাতির সাইয়্যিদ উনার পুত্র, আপনারা পবিত্র হারাম শরীফ উনার অধিবাসী, পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনার প্রতিবেশী, আপনারা কৃতদাসদেরকে মুক্ত করেন, বন্দীদেরকে খাবার খাওয়ান।
আমরা আমাদের ছেলের জন্য আপনার নিকট এসেছি। আপনি আমাদের উপর দয়া করুন। মুক্তিপণের ব্যাপারে আমাদের উপর ইহসান করুন। আমরা অতিশিঘ্রই আপনার নিকট মুক্তিপণ আদায় করবো।
তাদের কথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তিনি কে? তোমরা কার কথা বলছো? তখন উনারা বললেন, আমরা হযরত যায়িদ ইবনে হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা বলছি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডেকে বললেন, আপনি ইচ্ছে করলে আমার এখানে থাকতে পারেন, আর যদি চান আপনার পিতার সাথেও চলে যেতে পারেন। এটা শুনে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন-
بَلْ أُقِيمُ عِنْدَكَ ومَا أنَا بِالذِي أَخْتَارُ عَلَيْكَ أحَدًا أَنْتَ مِنِّي بِمَكَانِ الأبِ وَالأمِّ
‘বরং আমি আপনার ছোহবত মুবারকেই থাকবো। (ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনার বিপরীতে আর কাউকেই প্রাধান্য দিতে পারি না। আপনিইতো আমার পিতা-মাতা। ’
উনার পিতা ও চাচা উনারা বললো, আপনার জন্য আফসোস হে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি স্বাধীন হওয়ার পরিবর্তে বন্দিত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, আপনার পিতা ও চাচা এবং পরিবারের বিরুদ্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন? তিনি বললেন-
نَعَمْ إنِّي قَدْ رَأيْتُ مِنْ هَذَا الرَّجُلِ شَيْئًا ما أنَا بِالذي أَخْتَارُ عَلَيْهِ أحَدًا أبَدًا
‘হ্যাঁ; নিশ্চয়ই আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে এমন কিছু দেখেছি; যার মোকাবেলায় কখনোই অন্য কাউকে প্রাধান্য দিতে পারি না। ’ সুবহানাল্লাহ!
হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারকেই থেকে গেলেন। (এরপর) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হলেন। তিনি সত্য বলে মেনে নিলেন, সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে পবিত্র ছলাত আদায় করতে শুরু করলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাকো। ” (আল লু’লুউল মাকনূন ১/১৯৯)
এই ঘটনা হচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের পূর্বের ঘটনা। তাহলে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের পরে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কতটুকু মুহব্বত মুবারক করেছেন। সেটা চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আলোচনায় বা লেখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত বা নাম মুবারক বারবার বলা ও লেখা সম্পূর্ণ আদবের খিলাফ (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৭)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৪)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৬)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক (৩)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)