সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ অবশ্যই পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, কখনোই ৮ তারিখ নয়
, ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৮ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস এলেই বক্তাদের আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান, মান, ফাযায়িল- ফযীলত মুবারক সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়। কিন্তু না, দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফের মুবারক তারিখ নিয়ে কত রকম মতভেদ আছে, কত ইখতিলাফ আছে সে নিয়ে বক্তারা নাতিদীর্ঘ আলোচনা করতে থাকে। অথচ সেটার কোন প্রয়োজনই নেই। উনার মর্যাদা মুবারক যত আলোচনা করা যাবে ততই রহমত মুবারক নাযিল হবে। কিন্তু তারিখের মতভেদ নিয়ে আলোচনায় কোনই লাভ নেই।
তারপরেও আজ বাধ্য হলাম লিখতে একজন বক্তার এক আলোচনা শুনে। সে জোর দিয়ে বলেছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদত দিবস ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ নয় বরং ৮ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।
আমরা আমাদের লেখা প্রমাণের জন্য দুটো প্রধান সূত্র ব্যবহার করবো।
১। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মাস রবীউল আউওয়াল শরীফ। (এতে কোন ইখতিলাফ নেই)
২। সম্মানিত বিলাদত দিবস অবশ্যই ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সোমবারে বিশেষ কারণে রোযা পালন করতেন। (সম্মানিত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত)
জানা যায়, আবরাহার হাতি নির্মূলের বছর ছিল ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ এবং মুহররম মাস শেষ হবার ১৩ দিন পূর্বে। তবে সঠিক ইতিহাস হচ্ছে আবরাহার হাতি নির্মূলের ঘটনা ঘটে পবিত্র ২২শে মুহররমুল হারাম শরীফ।
১। সে বছর মুহররম মাস শুরু হয়েছিল ২৩শে ফেব্রুয়ারী ৫৭০ খৃষ্টাব্দ, ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার থেকে।
(২১শে ফেব্রুয়ারী চাঁদ দেখা যায়নি ফলে ২২শে ফেব্রুয়ারী ৩০ দিন পূর্ণ করে ২৩শে ফেব্রুয়ারী, রোববার থেকে মাস শুরু হয়েছিল)
২। মুহররমুল হারাম মাস শেষে ছফর শরীফ মাসের চাঁদ তালাশ করা হয় ২৩শে মার্চ। সেদিন এস্ট্রনমিক্যালি চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ফলে ধরা যাক ছফর শরীফ মাস শুরু হয়েছিলো ২৪ মার্চ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার থেকে।
অর্থাৎ সে বছর মুহররম মাস ২৯ দিনে পূর্ণ হয়েছিলো বলেই ধরে নিচ্ছি।
৩। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ তালাশ করা হয় ২১শে এপ্রিল কিন্তু সেদিন এস্ট্রনমিক্যালি চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাবনা ছিল না ফলে চাঁদ দেখা যায়নি। ছফর শরীফ মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ হয়ে পবিত্র রবীউল আউওয়াল মাস শুরু হয় ২৩শে এপ্রিল থেকে।
যদি সে বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল মাস ২৩শে এপ্রিল বুধবার থেকে শুরু হয়ে থাকে তবে আমরা পবিত্র ১২ই শরীফ ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার দিন হচ্ছে। সে হিসেবে ক্যালেন্ডারের হিসাবটা নিম্নরূপ-
আরবী তারখি বার ইংরজেী তারখি
১লা রবীউল আউওয়াল শরীফ আরবয়িা বা বুধবার ২৩ এপ্রলি
২রা রবীউল আউওয়াল শরীফ খমসি বা বৃহস্পতবিার ২৪ এপ্রলি
৩রা রবীউল আউওয়াল শরীফ জুমুয়াবার ২৫ এপ্রলি
৪ঠা রবীউল আউওয়াল শরীফ সাবত বা শনবিার ২৬ এপ্রলি
৫ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আহাদ বা রোববার ২৭ এপ্রলি
৬ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইন বা সোমবার ২৮ এপ্রলি
৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ছুলাছা বা মঙ্গলবার ২৯ এপ্রলি
৮ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আরবয়িা বা বুধবার ৩০ এপ্রলি
৯ই রবীউল আউওয়াল শরীফ খমসি বা বৃহস্পতবিার ১ মে
১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ জুমুয়াবার ২ মে
১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ সাবত বা শনবিার ৩ মে
১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আহাদ বা রোববার ৪ মে
এখানে ৮ তারিখ হচ্ছে আরবিয়া বা বুধবার আর পবিত্র ১২ই শরীফ আহাদ বা রোববার হচ্ছে। এবার নীচের হিসেবটা পড়ুন।
আমরা উপরে ছফর শরীফ মাসের ক্ষেত্রে ধরে নিয়েছিলাম যে ২৩শে মার্চ চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ফলে ছফর শরীফ মাস শুরু হয়েছিলো ২৪মার্চ, ইছনাইন বা সোমবার থেকে। কিন্তু আসলে ছফর শরীফ মাসের মাসের চাঁদ সেদিন দেখা যায়নি ফলে ছফর শরীফ মাস শুরু হয়েছিলো ২৫শে মার্চ মঙ্গলবার থেকে। আর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের চাঁদ তালাশ করা হয়েছিলো ২২শে এপ্রিল, মঙ্গলবার। মঙ্গলবারও কোন কারণে চাঁদ দেখা যায়নি ফলে মাস শুরু হয়েছিলো ২৪শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে। তাহলে পবিত্র ১২ই শরীফ আসে ইছনাইন শরীফ বা সোমবার। নিচের ছকে দেখানো হলো-
আরবী তারখি বার ইংরজেী তারখি
১লা রবীউল আউওয়াল শরীফ খমসি বা বৃহস্পতবিার ২৪ এপ্রলি
২রা রবীউল আউওয়াল শরীফ জুমুয়াবার ২৫ এপ্রলি
৩রা রবীউল আউওয়াল শরীফ সাবত বা শনবিার ২৬ এপ্রলি
৪ঠা রবীউল আউওয়াল শরীফ আহাদ বা রোববার ২৭ এপ্রলি
৫ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইন বা সোমবার ২৮ এপ্রলি
৬ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ছুলাছা বা মঙ্গলবার ২৯ এপ্রলি
৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আরবয়িা বা বুধবার ৩০ এপ্রলি
৮ই রবীউল আউওয়াল শরীফ খমসি বা বৃহস্পতবিার ১ মে
৯ই রবীউল আউওয়াল শরীফ জুমুয়াবার ২ মে
১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ সাবত বা শনবিার ৩ মে
১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আহাদ বা রোববার ৪ মে
১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইন বা সোমবার ৫ মে
কিন্তু দুই হিসেবেই পবিত্র ৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ কখনো সোমবার হয় না। তাহলে বোঝা গেল ৮ তারিখের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
আমাদের কাছে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিতভাবে আছে-
১। হস্তী বাহিনীর বছর অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ।
২। সে বছরের মুহররম মাস শেষ হবার ৮ দিন বাকী থাকতে হস্তি বাহিনীর ঘটনা ঘটে।
৩। তার আনুমানিক ৫০ দিন পর অর্থাৎ রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে বিলাদত শরীফ সংঘটিত হয়।
৪। অবশ্যই বিলাদত দিবস সোমবার। (হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত)
এবার আসেন হস্তি বাহিনীর ঘটনার কতদিন পরে বিলাদত শরীফ সংঘটিত হয়েছিল তা আমরা বের করি।
হস্তী বাহিনীর ঘটনার পর মুহররম মাস বাকী ছিল- ৮ দিন (যেহেতু মুহররমুল হারাম শরীফ মাস ত্রিশ দিনে শেষ হয়েছিলো)
ছফর শরীফ মাস: ৩০ দিনে পূর্ণ হয়।
রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস: ১২ই শরীফ
---------------মোট: ৮+৩০+১২=৫০ দিন পূর্বের ঘটনা।
অর্থাৎ বিলাদত শরীফের ৫০ দিন পূর্বে হস্তি বাহিনীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এবং তা হয়েছিল মুহররমুল হারাম শেষ হবার ৮ দিন পূর্বে।
**** উল্লেখ্য সে সময় খৃষ্টাব্দ ক্যালেন্ডার অর্থাৎ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছিল না। আমরা চাঁদের হিসেব বের করার জন্য ব্যাক ক্যাল্কুলেশন করেছি।
-মুহম্মদ রূহুল হাসান
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আলোচনায় বা লেখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত বা নাম মুবারক বারবার বলা ও লেখা সম্পূর্ণ আদবের খিলাফ (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৭)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৪)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৬)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক (৩)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)