আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করার ফযীলত, তারতীব ও আদব (২)
, ০৮ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ০১ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক, দীদার মুবারক, সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য স্বতন্ত্র জায়গা থাকা অতীব জরুরী এবং তা এমন হতে হবে যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মুহব্বত, আকর্ষণ নির্ভরতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসে।
কোনো বুযুর্গ কবি বলেন-
خدا کا ذکر کرے ذکر مصطفی نکرے ہمارا منہ میں ہو ایسی زباں خدا نکرے.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করা হবে অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরণ মুবারক করা হবে না, খোদা না করুন, আমার যবান যাতে কখনো এরকম না হয়। ”
কারণ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى مِنْ نَفْسِهٖ وَمَالِهٖ اَجْمَعِيْنَ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, এমনকি নিজের মাল-জান থেকেও বেশি মুহব্বত না করবে। ” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
এখানে শুধুমাত্র সম্মানিত রওযা শরীফ যিয়ারত সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হলো। এরপর পর্যায়ক্রমে পবিত্র মদীনা শরীফ গমন, পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ, অবস্থানের আদব এবং সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র রওযা শরীফে সালাম মুবারক দেয়ার, দুয়া-দুরূদ শরীফ পাঠ করার পদ্ধতি, রীতি, আদব ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করার ফযীলত:
মিশকাত শরীফ উনার কিতাবুল হজ্জ-উনার সর্বশেষ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰى عَنْهُ مَرْفُوْعًا مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِىْ بَعْدَ مَوْتِىْ كَانَ كَمَنْ زَارَنِىْ فِىْ حَيَاتِىْ.
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মারফু’ সনদে বর্ণিত আছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর পবিত্র হজ্জ করে আমার পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত করে সে ওই ব্যক্তির ন্যায় যে আমার পবিত্র হায়াত মুবারকে পবিত্র যিয়ারত করলো। ” সুবহানাল্লাহ! (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)
মিশকাত শরীফ উনার কিতাবুল হজ্জ-উনার সর্বশেষ অধ্যায়ে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ رَجُلٍ مِنْ اٰلِ الْـخَطَّابِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ زَارَنِىْ مُتَعَمِّدًا كَانَ فِىْ جِوَارِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: “খত্তাব পরিবারের একজন ছাহাবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় শুধু আমার পবিত্র যিয়ারত মুবারক করার উদ্দেশ্যে এসে আমার যিয়ারত মুবারক করলো, ক্বিয়ামতের দিন তিনি আমার প্রতিবেশী হিসেবে থাকবেন। ” সুবহানাল্লাহ! (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ زَارَنِـى بَعْدَ مَـمَاتِىْ فَكَاَنَّـمَا زَارَنِـىْ فِىْ حَيَاتِىْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আমার যিয়ারত মুবারক করলো, সে যেনো আমার পবিত্র হায়াত মুবারকেই আমার যিয়ারত (সাক্ষাৎ) মুবারক করলো। ” সুবহানাল্লাহ! (ইখতিয়ার, নূরুল ইযাহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ زَارَ قَبْرِىْ وَجَبَتْ لَهٗ شَفَاعَتِىْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার রওযা শরীফ যিয়ারত মুবারক করলো, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেলো। ” সুবহানাল্লাহ! (ইখতিয়ার, নূরুল ঈযাহ)
বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, রওযা শরীফ যিয়ারত করার অর্থ হলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত (সাক্ষাৎ) মুবারক লাভ করা এবং নিজেকে শাফায়াতের যোগ্য করে নেয়া। যা প্রত্যেক উম্মতের কামনা ও বাসনা। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَّجَدَ سَعَةً وَلَـمْ يَزَرْنِىْ فَقَدْ جَفَانِىْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমার (রওযা শরীফ) যিয়ারত করলো না, সে আমার সাথে বেয়াদবী করলো। ” নাঊযুবিল্লাহ! (ইখতিয়ার, নূরুল ইযাহ)
অর্থাৎ যারা পবিত্র হজ্জ করতে গেলো এবং ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসহ যথারীতি পবিত্র হজ্জ সমাধা করলো কিন্তু পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করলো না তাদের হজ্জ কবুল হবে না অর্থাৎ তাদের হজ্জ পালন করা না করা সমান।
অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ থেকেই পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারতের গুরুত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলার সময় নূর মুবারক বিচ্ছুরিত হওয়া
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত ত্বীব মুবারক থেকে নূর মুবারক সৃষ্টি হওয়া
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বুলন্দী শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক ক্বায়িম হওয়ার অর্থই হলো দুনিয়ার যমীন ইনছাফ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মুজাসসাম মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুর রহমত মুবারক উনার নূরের আলোতে পুরো পবিত্র হুজরা শরীফ আলোকিত হওয়া
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বর্তমান সময়টা হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলেন না (৫)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত যায়িদ বিন হারেছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বেমেছাল মুহব্বত মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুধ ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত মাসরূহ্ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলেন না (৪)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক উনার গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলেন না (৩)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)