বুলন্দী শান মুবারক
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার আখাছছুল খাছ তাওয়াল্লুক নিসবত ব্যতীত হাক্বীক্বী ইলিম অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয় (১)
, ১২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَا أُوْتِيتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيْلًا
অর্থ: (হে মানুষেরা) তোমাদেরকে সামান্য ইলিম প্রদান করা হয়েছে। (পবিত্র সূরা বনী ইসরাইল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৮৫)
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ أُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমান আনয়নকারী ইলিম প্রাপ্তগণ উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, সমুন্নত করেছেন। (পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১১)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَت مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللهُ يُعْطِي
অর্থ: হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যাবতীয় নিয়ামত রাজী আমাকে হাদিয়া করেছেন। আমি সেগুলো বণ্টন করে থাকি।
উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, মাখলুকাতকে সামান্য ইলিম দেওয়া হয়েছে। তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত স্থাপনকারীগণ তথা উনার মুবারক বণ্টনে হিসসা লাভকারীগণ উনাদেরকে ইলিম দেওয়া হয়েছে এবং উনাদের মর্যদা সমুন্নত করা হয়েছে।
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাছ্ছুল খাছ নিসবত মুবারক এবং তায়াল্লুক মুবারক ব্যতীত মাখলুকাতের কেউই কোন নিয়ামত, রহমত কস্মিনকালেও হাছিল করতে পারবে না। অপরদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাছ্ছুল খাছ নিসবত তায়াল্লুক মুবারক ব্যতীত কখনোই হাক্বীক্বী ইলিম অর্জন করা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তিনি একবার সূরা আর রহমান শরীফ উনার ছোট্ট একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ-
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
উনার তাফসীর করলেন একাধারা দ্ইু বৎসর। তবুও যেন তাফসীর বাকী রয়ে গেল। উনার ভিতরে একটা ফখরের ভাব পয়দা হলো, নিশ্চয়ই তিনি মস্ত বড় একজন তাফসীরকারক। উনার মতো তাফসীরকারক হয়তো আর কেউ নেই। অন্যথায় একখানা আয়াত শরীফ উনার তাফসীর দুই বৎসর করার পর বাকী থাকার কথা নয়। এরই মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় এক আগন্তুক উনার তাফসীরের মজলিসে গিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলেন, হুযূর! আপনি তাফসীর করছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেহ একেক শানে অবস্থান করেন। বলুন তো মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কোন শান মুবারকে আছেন এবং এখন তিনি কি করছেন? এ প্রশ্ন শুনে হযরত ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি চুপ হয়ে গেলেন। কোন উত্তর দিতে পারলেন না।
দ্বিতীয়দিন আবার যখন তিনি তাফসীর করা শেষ করলেন সাথে সাথে উক্ত আগন্তুক ব্যক্তি একই প্রশ্ন করে বসলেন, সেদিনও তিনি কোন জাওয়াব দিতে পারলেন না। তৃতীয়দিনও একই ঘটনা ঘটলো। তিনি খুব লজ্জিত হলেন। রাতের বেলা তিনি খুব কান্নাকাটি করলেন, তওবা-ইস্তিগফার করলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলা দিয়ে ফায়সালা কামনা করে ঘুমিয়ে পড়লেন।
স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাক্ষাৎ মুবারক দিয়ে বললেন, হে ইবনে জাওযী! আপনার কি হয়েছে? ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের অক্ষমতার কথা ব্যক্ত করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যিনি আপনাকে প্রশ্ন করছেন, উনাকে আপনি চিনেন? তিনি বললেন, না, আমি তাকে চিনি না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, প্রশ্নকারী ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত খিযির আলাইহিস সালাম। তিনি আগামীকালও আসবেন এবং আপনাকে উক্ত বিষয়ে আবার প্রশ্ন করবেন। তখন আপনি জাওয়াবে বলবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন ক্বদীম। উনার শান হচ্ছে আযালী-আবাদী শান মুবারক। কাজেই, তিনি নতুন করে কোন কাজ শুরু করেন না। তিনি শুরুতে যা করেছেন এখনও তাই করেন। তবে কখনও কখনও উনার কোন কোন শান মুবারক প্রকাশ পায়। সুবহানাল্লাহ!
সত্যিই পরের দিন আগন্তুক ব্যক্তি এসে যখন প্রশ্ন করলেন তখন সহসাই হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রশ্নের জাওয়াব দিয়ে দিলেন। জাওয়াব পেয়ে আগন্তুক ব্যক্তি তিনি বললেন, হে ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি আপনার যিনি নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম পেশ করুন যিনি আপনাকে আমার সুওয়ালের জাওয়াব জানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
বুঝা গেল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত পবিত্র কুরআন শরীফ কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী তাফসীর বা ব্যাখ্যা জানা ও করা সম্ভব নয়। (অসমাপ্ত)
মুহম্মদ ইবনে হাশিম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (২০)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৭)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৯)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আলোচনায় বা লেখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত বা নাম মুবারক বারবার বলা ও লেখা সম্পূর্ণ আদবের খিলাফ (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)