শিশুদের জন্য নছীহত মুবারক! (২৯)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে বেমেছাল মেহমানদারী
, ০৫ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১২ই ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
এক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উনার মেহমানদারির ব্যবস্থা করবো।
যেসব ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদিনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করে গিয়েছিলেন, উনাদেরকে বলা হয় মুহাজির ছাহাবী। আর এই মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র মদিনা শরীফ উনার যেসব ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিলেন, উনাদেরকে বলা হয় আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
উক্ত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে নিজ ঘরে গিয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি উনার আহলিয়া বা স্ত্রীকে বললেন, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেহমান। উনার সেবা-যতেœর যেন কোনো ত্রুটি না হয়।
আহলিয়া বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু খাবার ছাড়া ঘরে আর কোনো খাবার নেই।
আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- আচ্ছা, ছেলে-মেয়েদেরকে সান্ত¡না দিয়ে আপনি ঘুম পাড়িয়ে দিন। এরপর আমি যখন মেহমানকে নিয়ে খেতে বসবো, আপনি বাতি ঠিক করার বাহানা করে ওটা নিভিয়ে দিবেন। আমরা খাওয়ার ভান করে শুধু মুখ নাড়াব। আর মেহমানকে পেট ভরে খাওয়াব।
আহাল বা স্বামীর উপদেশ মতো আহলিয়া তাই করলেন। সেই রাতটি আহাল-আহলিয়া, ছেলে-মেয়ে সবাই না খেয়ে কাটিয়ে দিলেন। শুধু মেহমানকেই যতœ করে খাওয়ালেন।
ফজরের নামায পড়ার জন্য উনারা মসজিদে এলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি মেহমানের সঙ্গে গত রাতে যে ব্যবহার করেছেন, সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, ‘উনারা অপরের চাহিদাকে নিজেদের চেয়ে বড় করে দেখেন, যদিও উনারা অসহ্য ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করেন।’
মুবারক নছীহত:
যে বেমেছাল মেহমানদারী নিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, সেই মেহমান আসলে কার মেহমান ছিলেন, কে পাঠিয়েছেন, কেন উনারা নিজে না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করেছেন? মূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবসময় সবকিছুর চেয়ে এমনকি উনাদের নিজের জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশী মুহব্বত করতেন সেই বেমেছাল মুহব্বত মুবারকের কারণেই আলোচ্য আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে নিজ পরিবার পরিজনের ক্ষুধার জ্বালা কিছুই মনে হয়নি। আর উনার এমন বেমেছাল মুহব্বত মুবারকের কারণেই স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হয়ে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
গায়েবী মদদ
সাইয়্যিদুনা হযরত সাহাব ইবনে মিনজার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা জিহাদ করতে আলা ইবনে হারজামি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা ‘দারান’ নামক স্থানে পৌঁছে গেলাম। সামনে শত্রুদের দেখা যাচ্ছে। আমাদের ও শত্রুদের মাঝে একটি সাগর। সাগরের ওপাড়ে শত্রুরা। আমাদের কাছে সাগর পার হওয়ার মতো নৌকা নেই। তখন আলা ইবনে হারজামি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে লাগলেন, ‘আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি সব কিছু জানেন। আপনি মহাশক্তির অধিকারী। আপনি অতি মহান। আমি আপনার নগন্য বান্দা।
আমরা সাগরের এপাড়ে আটকা পড়ে আছি। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শত্রুরা ওপাড়ে অবস্থান করছে। সাগর পার হওয়ার মতো কোনো নৌকা বা জাহাজ আমাদের কাছে নেই। আয় মহান আল্লাহ পাক! তাদেরকে পরাজিত করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পথে আনার জন্য তাদের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন...।’
এই দোয়া করার পর তিনি আমাদেরকে সাগরে ঝাঁপ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। উনার নির্দেশে আমরা সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কিন্তু একি! সাগরের পানি আমাদের ঘোড়াগুলোর বুক সমানও নয়! আমরা নিরাপদে সাগর পার হয়ে শত্রুদের কাছে পৌঁছে গেলাম।
পারস্য শাসকের গভর্নর যখন এই দৃশ্য দেখল, তখন তাদের সেনাপতিকে বলল, আমরা কখনো এমন সাহসী মুজাহিদদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারব না। তাদের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠার শক্তি আমাদের নেই। তখন তারা ভয় পেয়ে যুদ্ধ না করেই পালিয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক নছীহত:
মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক উনার প্রতি দৃঢ় ইস্তিকামত থাকতে পারলে মহান আল্লাহ পাক তিনি গায়েবী মদদ করেন। যেকোন পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি শত্রুর উপর বিজয় দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
-উম্মু মুদ্দাসসির
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৩)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীবাদী বলে কথা........
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)