অমুসলিম মহিলাদের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের বর্ণনা দেখে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন তাঞ্জিনিয়ার নওমুসলিম নারী ‘ইলিয়াস রাফায়েল’
, ২১ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
খুঁজতে খুঁজতে বাইবেলের পুরোনো সংস্করণ যাকে খ্রিস্টানরা তাওরাত শরীফ মনে করে এর মধ্যে একটি কথা দেখতে পেলাম যেখানে সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, “আমার পরে একজন নবী আলাইহিস সালাম তিনি আসবেন উনার নাম মুবারক হবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আহমাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তোমরা উনার আনুগত্য করবে।’ -এটা ছিল আমার জন্য খুবই উদ্দীপনাময় ঘটনা।
তাই আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে খ্রিস্ট ধর্মের পরবর্তী সম্মানিত দ্বীন আগের দ্বীনের চেয়ে বেশি উন্নত ও পরিপূর্ণ বলেই সাইয়্যিদুনা হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এই দ্বীনের যিনি নবী ও রসূল উনার অনুসরণ করতে বলেছেন। তাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণায় মশগুল হলাম।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার চিন্তাধারার মূল দিকগুলো জানতে পেরে রাফায়েল অভিভূত হন। সম্মানিত দ্বীন উনার মধ্যে তিনি পেতে থাকেন নানা প্রশ্নের জবাব। সাইয়্যিদুনা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানার পর সাইয়্যিদুনা হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সহ অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের তার ভালোবাসা, বিশেষ করে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তার সম্মান ও মুহব্বত গভীরতর হতে থাকে।
রাফায়েল সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষার মধ্যে খুঁজে পান জীবনের প্রকৃত অর্থ এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। ফলে এই নারী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন যাতে জীবনের সৌন্দর্যকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে জীবনের অর্থকে দেখতে পেলেও রাফায়েল এই ভেবে আতঙ্কিত হন যে মুসলমান হয়েছেন এটা টের পেলে তার পরিবার নিশ্চয়ই ক্ষুব্ধ হবে। তাই মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত মনের মধ্যেই গোপন রাখেন রাফায়েল।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: আমার বাবা-মা গোঁড়া খ্রিস্টান হওয়ায় আমার মুসলমান হওয়ার আগ্রহের বিষয়টি তাদের কাছে গোপন রাখতে বাধ্য হই। কিন্তু একদিন আমার মা আমার হিজাব ও পোশাক দেখে বুঝে ফেললেন যে আমি মুসলমান হয়ে গেছি। তাই তিনি এর খুব বিরোধিতা করলেন যাতে আমি আবারও খ্রিস্টান হই। তার ধারণা ছিল এটা যে আমি আবেগের বশে ও অন্যদের প্রভাবে মুসলমান হয়েছি। তাই আমাকে ধমক দিয়ে ও তিরস্কার করে এই পথ থেকে ফেরাতে চাইলেন। কিন্তু আমার মায়ের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাই তিনি আমাকে বাবার কাছে সোপর্দ করেন।
আমার বাবা ছিলেন খুব ধনী ও অন্য শহরে থাকতেন। তিনি যখন জানলেন যে, আমি মুসলমান হয়েছি তখন আমাকে ঘরের মধ্যে ও ঘরের বাইরে খুব কঠিন কাজ দিতে লাগলেন। আমার অবস্থা হল এমন এক দাসীর মত যে কঠিন পরিশ্রম করবে এবং এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদও করতে পারবে না। তিনি ভেবেছিলেন এইসব কষ্টের চাপে আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করব। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছিল আমার ঈমান ততই দৃঢ়তর হচ্ছিল। কারণ, আমি অনেক গবেষণা করে এই দৃঢ়-বিশ্বাস অর্জন করেছিলাম।
তাঞ্জিানিয়ার নওমুসলিম নারী রাফায়েলের অন্তর দ্বীন ইসলাম উনার নুরে আলোকিত হওয়ার পর তিনি অনেক কষ্টের শিকার হন। তিনি সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে চাইতেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তার বাবা ও মাকেও সুপথ দেখান। দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর রাবিয়া নাম ধারণ করেন রাফায়েল। রাবিয়া মুসলমান হওয়ায় বাবা-মা’র কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে রোজা রাখতে চাইতেন। কিন্তু তার পরিবার এর বিরোধিতা করত।
প্রথম রোজার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: ‘প্রথম যেদিন রোজা রেখেছিলাম সেদিন মা ঘরে ছিলেন না। ফলে তিনি বুঝতে পারেননি যে আমি কিছু খাইনি। বিকেলে যখন ঘরে ফিরি তখন মা বললেন: আজ যে খাবার নিয়ে যাওনি, যাও রান্নাঘরে গিয়ে খাবার খেয়ে নাও। আমি বললাম, আমার এখন খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, পরে খাব। কিন্তু মা আমাকে খেতে বাধ্য করার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। আর আমি নানা বাহানায় সময় কাটাতে চাচ্ছিলাম যাতে মাগরিবের আজানের সময় রোজা ভাঙতে পারি। মাগরিবের আজানের তেমন একটা সময় বাকি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ মা বুঝতে পারলেন যে আমি রোজা রেখেছি। তিনি খুব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এমন জোরে ঘুষি মারলেন যে, নিজেই ক্লান্ত হয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। আর এমন সময় আজান শুনলাম এবং ওই দূরাবস্থার মধ্যেই আমি ইফতার করি। এইসব নির্যাতন খুব অসহ্য হওয়া সত্ত্বেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কথা ভেবে তা সয়ে নেয়ায় এ সম্মানিত দ্বীন আরো মধুর হয়ে দেখা দেয় আমার কাছে। আজ আমি আনন্দিত যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি, ফলে নিশ্চিন্ত মনে পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’
বাবা-মায়ের সঙ্গে সদারচারণ করাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম রাফায়েলও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের দায়ে বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কঠোর নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ় মনোবল আর কঠিন ধৈর্য ধরে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার উপর আস্থা রেখে বাবা মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ অব্যাহত রাখেন। ফলে এক সময় তিনি এর সুফল দেখতে পান। প্রথমে তার বড় বোন ও পরে তার মাও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আগ্রহী হয়ে মুসলমান হন।
-উম্মু রাহাত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের প্রথম মাস
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে মু’মীনদের জীবন গড়ে তোলা দায়িত্ব-কর্তব্য
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)