নছীহতে ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
, ৩০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী
(পূর্বে প্রকাশের পর)
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উম্মতের মাঝে নিয়ামত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। উনার আগমনের পূর্বে তাদের পরষ্পরের মাঝে শত্রুতা বিরাজ ছিল এবং সবাই ছিল জাহান্নামের কিনারে কিন্তু উনার আগমনের কারণে শত্রুতা দূর হয়ে পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরী হয়েছে; এমনকি তিনি তাদেরকে জাহান্নামের কিনার থেকে রক্ষা করেছেন। এই বিষয়গুলো মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যাতে মানুষ হিদায়েত লাভ করতে পারে বা হিদায়েতের উপর ইস্তেক্বামত থাকতে পারে।
এজন্য আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারককে (দ্বীন ইসলামকে) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে, পৃথকভাবে নয়। পৃথক হলে দ্বীন ইসলাম শক্তিশালী হতে পারবে না। আর শক্তিশালী না হলে দ্বীন ইসলাম সঠিকভাবে পালন করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবেনা। আর ঐ সমস্ত লোকদের মত হওয়া যাবে না, যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক থেকে দূরে সরে গিয়েছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। কাফিররা চায় মুসলমানরা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে, তাদেরকে পরাস্ত করা সহজ হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু অধিকাংশ মানুষই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ না করে উনার থেকে দূরে সরে যায় অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে ধাবিত হয়।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اَبِـىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلِىْ كَمَثَلِ رَجُلٍ اِسْتَـوْقَدَ نَارًا فَـلَمَّا اَضَاءَتْ مَا حَوْلَـهَا جَعَلَ الْفِرَاشُ وَ هٰذِهِ الدَّوَابُّ الَّتِـىْ تَـقَعُ فِـى النَّارِ يَـقَعْنَ فِـيْهَا وَ جَعَلَ يَـحْجُـرُهُنَّ وَ يَـغْلِـبْـنَـهٗ فَـيَـتَـقَحَّمْنَ فِـيْهَا فَاَنَا اٰخِذٌ بِـحِجْزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَ اَنْـتُمْ تَـقَحَّمُوْنَ فِـيْـهَا - هٰذِهٖ رِوَايَةُ الْبُخَارِىْ وَ لِمُسْلِمٍ نَـحْوُهَا وَ قَالَ فِـىْ اٰخِرِهَا قَالَ فَذٰلِكَ مَـثَـلِىْ وَ مَثَـلُكُمْ اَنَا اٰخِذٌ بـِحِجْـزِكُمْ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ فَـتَـغْلِـبُــوْنِـىْ تَـقَحَّمُوْنَ فِـيْهَا. (متفق عليه)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার মেছাল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর যখন তার চারপাশ আলোকিত হল তখন যেসব পোকা-মাকড় আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে; সেসব পোকামাকড়গুলো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। ঐ ব্যক্তি (আগুন প্রজ্জ্বলনকারী) তাদেরকে বাধা দিতে লাগলেন। কিন্তু সেই পোকামাকড়গুলো বাধা না মেনে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অনুরূপ আমি তোমাদেরকে তোমাদের কোমর ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করছি। তারপরও তোমরা সেখানেই (আগুন) ঝাঁপিয়ে পড়ছো। এটা ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা। ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহিও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি শেষাংশে বলেছেন, এটিই হলো আমার ও তোমাদের উদাহরণ। আমি তোমাদের কোমর ধরে আগুন হতে রক্ষা করছি (আর বলছি), তোমরা জাহান্নাম থেকে ফিরে এসো, তোমরা জাহান্নাম থেকে ফিরে এসো। অথচ তোমরা আমার বাধা অমান্য করে জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়ছো। নাঊযুবিল্লাহ!
[বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানা বুঝার সুবিধার্তে এখানে একটি উদাহরণ পেশ করা হলো, কেউ একজন একটি বাতি জ্বালালো আর সেই আলো যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তখন বাতির আগুন দেখে পোকা-মাকড় এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। যে ব্যক্তি বাতি জ্বালিয়েছে সে পোকা-মাকড়গুলো তাড়িয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু সেই পোকা-মাকড়গুলো আবারও এসে আগুনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো। ঠিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মতের মেছাল অনুরূপ। কতক উম্মত জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের কোমর ধরে তাদেরকে সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু তারা উনার কথা শুনছে না বা মানছে না অর্থাৎ উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ না করে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেই কাজগুলোর দ্বারা জাহান্নামী হতে হবে সেই কাজগুলোই করে যাচ্ছে। যেমন: ছবি তোলা, দেখা এবং রাখা, গানবাজনা করা এবং শোনা, বেপর্দা হওয়া, কাফির-মুশরিকদের গোলামী ও অনুসরণ করা, অশ্লীল-অশালীন কাজ ইত্যাদি হারাম-নাজায়িয কাজ করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَتَـرَىٰ كَثِـيْــرًا مِّنْـهُمْ يُسَارِعُوْنَ فِـي الْإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَأَكْلِهِمُ السُّحْتَ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُـوْا يَعْمَلُوْنَ ﴿৬২﴾ سورة الـمائدة
আপনি তাদের অধিকাংশকে দেখবেন, তারা গুনাহ, শত্রুতা বা সীমালঙ্ঘন এবং হারাম খাদ্যের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়। তারা যে আমল করে, তা কতই না নিকৃষ্ট! নাঊযুবিল্লাহ! [সূরা মায়িদা শরীফ: ৬২]
মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আলে ইমরান শরীফে বলেন,
يَا أَيُّـهَا الَّذِيْـنَ آمَنُوا اتَّـقُوا اللّٰـهَ حَقَّ تُـقَاتِـهٖ وَلَا تَـمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْــتُمْ مُّسْلِمُـوْنَ ﴿১০২﴾ سورة آل عمران
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করার মত ভয় করো (অর্থাৎ প্রকৃতভাবে ভয় করো) এবং মুসলমান না হয়ে মারা যেওনা। [সূরা আলে ইমরান শরীফ: ১০২]
মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত বিধানের উপর যে ব্যক্তি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করবে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলমান হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারকই আনিত বিধান যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম।
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রকৃত মুসলমান হয়ে ইন্তেকাল করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)