নছীহতে ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
, ২৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
( পূর্বে প্রকাশের পর )
এখানে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত বা সাক্ষ্যদাতা, যারা খুশি প্রকাশের লক্ষ্যে উনার দিকে রুজু হয় তাদের জন্য তিনি সুসংবাদ প্রদান করেন আর যারা রুজু হয় না তাদেরকে ভয় প্রদর্শন বা সতর্ক করেন। তারা (বান্দারা) যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করার সাথে সাথে উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও বিশ্বাস করে এবং সম্মান করে, উনার গোলামীতে আনজাম দেয় এবং সকাল-সন্ধ্যা উনার ছানা-ছিফতে মশগুল থাকে। যারা এরূপ আমল করবে তাদের পক্ষে মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হবে। বান্দাদের স্মরণ রাখতে হবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত বা হাযির-নাযির। তিনি প্রত্যেকের আমল দেখেন, কে আমল করে আর কে করে না। এ প্রসঙ্গে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللّٰهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهٗ وَالْمُؤْمِنُوْنَ ۖ وَسَتُرَدُّوْنَ إِلٰى عَالِـمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِـمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ ﴿১০৫﴾
আপনি বলুন, তোমরা আমল করো। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং যারা হাক্বীক্বী মু’মিন উনারাও তোমাদের আমল দেখেন। যিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সম্পর্কে জানেন উনার নিকট অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে অবহিত করবেন। [সূরা তওবা শরীফ: ১০৫]
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِىَ الدُّنْيَا فَاَنَا اَنْظُرُ اِلَيْهَا وَاِلٰى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَاَنَّـمَا اَنْظُرُ اِلٰى كَافِّـىْ هَذِهٖ. (رواه طبرانی و مشکوة)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাহিদুন নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ দুনিয়াকে আমার সামনে এরূপভাবে তুলে ধরেছেন যে, এই দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সৃষ্টি হবে সবকিছু আমি এরূপভাবে দেখি, যেভাবে আমার হাতের তালু মুবারককে দেখে থাকি। সুবহানাল্লাহ!
[ত্ববারানী ও মিশকাত শরীফ]
অপর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ اِسْتَوُوْا اِسْتَوُوْا اِسْتَوُوْا فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ إِنِّـيْ لَأَرَاكُمْ مِنْ خَلْفِيْ كَمَا أَرَاكُمْ مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ. (رواه ابو داود)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়ই বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো। ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যার কুদরতি হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক। নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনে আপনাদেরকে দেখি যেরূপ আমার সামনে আপনাদেরকে দেখি।
[আবূ দাউদ শরীফ]
তাই বান্দাদের উচিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাযির-নাযির জেনে, উনাকে পাওয়ার কারণে আমল করার মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করা। আর বান্দাদের পক্ষে আমল করা তখনই সম্ভব হবে যখন তারা পবিত্র দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হবে। আর এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يَا أَيُّـهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ادْخُـلُوْا فِـي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَـتَّبِـعُـوْا خُطُوَاتِ الشَّيْـطَانِ ۚ إِنَّـهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِـيـْنٌ ﴿২০৮﴾ سورة البقرة
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বাক্বারা শরীফ: ২০৮]
মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তার ধোঁকায় পড়ে তার অনুসরণ করে দ্বীন ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া থেকে বিরত থেকো না। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নিয়ামত স্বরূপ দ্বীন ইসলাম নিয়ে আমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক এনেছেন।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْـنَكُمْ وَأَتْـمَمْتُ عَلَـيْكُمْ نِـعْمَتِـيْ وَرَضِـيْـتُ لَكُـمُ الْإِسْلَامَ دِيْـنًا ﴿৩﴾ سورة المائدة
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত মুবারক পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্ট হলাম। [সূরা মায়িদা শরীফ: ৩]
মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেই মনোনীত করেছেন এবং এই পবিত্র দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি রুজু না হওয়া পর্যন্ত কখনোই এই দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া যাবে না। দ্বীন ইসলামে দাখিল হওয়া মানেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হওয়া। কেননা তিনিই দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর উনার দিকে রুজু হওয়া মানেই উনাকে পেয়ে খুশি মুবারক প্রকাশ করা।
একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উপরোক্ত আয়াত শরীফ পাঠ করছিলেন তখন উনার কাছে এক ইহুদী বসা ছিল। সেই ইহুদী ব্যক্তি বলল, যদি এই আয়াত শরীফ আমাদের ধর্মে নাযিল হতো তাহলে আমরা নাযিলের দিনটিকে ঈদ হিসেবে ঘোষণা করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত শরীফ? সে বলল, اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ الخ এই আয়াত শরীফ। তখন তিনি বললেন, হে ইহুদী! তোমার তো জানা নেই, এই আয়াত শরীফ দুই ঈদের দিন অর্থাৎ জুমুয়াহ এবং আরাফার দিন নাযিল হয়েছে। নতুন করে আর ঈদ ঘোষণা করার দরকার নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দ্বীন ইসলামকে মনোনীত করে পরিপূর্ণভাবে নাযিল করে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং বান্দাদেরকেও খুশি প্রকাশ করতে বলেছেন। কারণ এই দ্বীন ইসলাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রচিত পবিত্র না’ত শরীফে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, “আপনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ, পবিত্র মক্কা শরীফ ও সারা দুনিয়াবাসীদের মাঝে হক্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য মহাসম্মানিত নবী এবং রসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে”। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এ সমস্ত দলীল আদিল্লাহ দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক হয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ হবে উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করা। আর হাক্বীক্বী খুশি প্রকাশ করা হবে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করে তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা, আমল-আখলাক্ব, স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করতে হবে। কাজেই, উনার দিকে রুজু না হয়ে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা কখনো সম্ভব হবে না। উনার আদর্শ মুবারকই সম্মানিত দ্বীন ইসলামের বিধান তথা সম্মানিত শরীয়ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হয়ে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য কারো মতো নন; উনারা বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক উনার অধিকারিণী
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)