নছীহতে ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মুমিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে,
قَالُوْا بَلٰى قَدْ جَاءَنَا نَذِيْـرٌ فَكَذَّبْـنَا وَقُـلْنَا مَا نَـزَّلَ اللّٰـهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْـتُمْ إِلَّا فِـيْ ضَلَالٍ كَبِيْرٍ ﴿৯﴾ وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَـعْقِلُ مَا كُنَّا فِيْ أَصْحَابِ السَّعِيْـرِ ﴿১০﴾ فَاعْتَـرَفُـوْا بِذَنْبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيْـرِ ﴿১১﴾ إِنَّ الَّذِيْنَ يَـخْشَوْنَ رَبَّـهُمْ بِالْغَـيْبِ لَـهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيْـرٌ ﴿১২﴾ سورة الملك
তখন অপরাধীরা বলবে, অবশ্যই আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিলেন। অতঃপর আমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি এবং আমরা বলেছি, মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছুই নাযিল করেননি। (তখন সেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলবেন) তোমরা তো ভীষণ বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলে! (অপরাধীরা আফসোস করে বলবে) যদি আমরা (সতর্ককারী) উনাদের কথা শুনতাম অথবা বুঝতাম অর্থাৎ বুঝার চেষ্টা করতাম, তাহলে তো আমরা জাহান্নামী হতাম না! তারা তাদের গুনাহর কথা স্বীকার করবে। তখন (হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম বলবেন) জাহান্নামীদেরকে, দূর হয়ে যা (হতভাগা জাহান্নামীর দল)! নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে না দেখে ভয় করবে অর্থাৎ ভয় করে গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকবে, তাদের জন্য থাকবে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান। [সূরা মুলক শরীফ: ৯-১২]
এভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামের ভয়াবহ আযাবের বাস্তব রূপ বর্ণনা করে বান্দা-বান্দীদেরকে সতর্ক করেছেন। আর তা সহজে উপলব্ধির জন্য সতর্ককারীও পাঠিয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পাঠাবেন। এই সতর্ককারীগণ উনাদের নছীহত মুবারক যারা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে গুনাহর কাজ থেকে বিরত থাকবেন, উনাদের জন্য মৃত্যুর পর আর কোনো আফসোস থাকবে না। উনারাই প্রকৃত ঈমানদার।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فَاٰمِنُـوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَالنُّـوْرِ الَّذِيْ أَنْـزَلْنَا ۚ وَاللّٰـهُ بِـمَا تَـعْمَلُوْنَ خَبِيْـرٌ ﴿৮﴾ سورة التغابن
তোমরা ঈমান আনো মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম উনার প্রতি এবং সেই নূর উনার প্রতি যা মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেছেন। তোমরা যা আমল করো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। [সূরা তাগাবুন শরীফ: ৮]
ঈমানদার উনাদেরকে সুসংবাদ প্রদানের লক্ষ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يَـوْمَ يَـجْمَعُكُمْ لِيَـوْمِ الْـجَمْعِ ۖ ذٰلِكَ يَـوْمُ التَّـغَابُنِ ۗ وَمَنْ يُـؤْمِنْ بِاللّٰـهِ وَيَـعْمَلْ صَالِـحًا يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّـئَاتِهٖ وَيُدْخِلْهٗ جَنَّاتٍ تَـجْرِيْ مِنْ تَـحْـتِهَا الْأَنْـهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْـهَا أَبَدًا ۚ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ﴿৯﴾ سورة التغابن
তিনি (মহান আল্লাহ পাক) সেই দিন তোমাদেরকে একত্রিত করবেন, একত্রিত করার দিনে। সেটা হচ্ছে লাভ-লোকসানের দিন। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবেন, আমলে ছলেহ করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার গুনাহ-খতাগুলো ক্ষমা করবেন এবং উনাকে এমন জান্নাত উনার মধ্যে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়, অনন্তকাল সেখানে অবস্থান করবেন। আর এটাই উনার জন্য বিরাট সফলতা। [সূরা তাগাবুন শরীফ: ৯]
সুতরাং যারা ঈমান এনে আমলে ছলেহ করবেন উনারা লাভ-লোকসানের দিন বিরাট সফলতা অর্জন করবেন। সেদিনের অবস্থা সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يَـوْمَئِذٍ تُـعْرَضُوْنَ لَا تَـخْفٰى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ ﴿১৮﴾ فَأَمَّا مَنْ أُوْتِـيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ فَـيَـقُوْلُ هَاؤُمُ اقْـرَءُوْا كِتَابِيَهْ ﴿১৯﴾ سورة الحاقة
যেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে সেদিন তোমাদের কোনো গোপন বিষয় গোপন থাকবে না। অতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে; তখন তিনি বলবেন, এই নাও, আমার আমলনামা পড়ো। [সূরা হাক্কাহ শরীফ: ১৮-১৯]
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে দুনিয়াতে মানুষ একজন আরেকজনকে যেভাবে রেজাল্ট কার্ড দেখায়, ঠিক ক্বিয়ামতের দিন সেভাবে নেককার বান্দাগণ উনাদের আমলনামা একে অপরকে দেখাবেন। উনারা আরো বলবেন,
إِنِّـيْ ظَـنَـنْتُ أَنِّـيْ مُلَاقٍ حِسَابِيَهْ ﴿২০﴾ فَـهُوَ فِـيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ ﴿২১﴾ فِـيْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ ﴿২২﴾ قُطُوْفُـهَا دَانِـيَةٌ ﴿২৩﴾ كُلُوْا وَاشْرَبُـوْا هَنِيْـئًا بِـمَا أَسْلَفْتُمْ فِـي الْأَيَّامِ الْـخَالِيَةِ ﴿২৪﴾ سورة الـحاقة
নিশ্চয়ই আমার বিশ্বাস ছিলো যে, আমি এই হিসাবের সম্মুখীন হবো। অতঃপর তিনি সন্তুষ্টচিত্তে উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ জান্নাতে বসবাস করবেন। যার (জান্নাতের) ফলসমূহ নিকটেই থাকবে। (জান্নাতীদেরকে বলা হবে) বিগতদিনে যা আমল করেছেন তার প্রতিদান স্বরূপ তৃপ্তি সহকারে খান এবং পান করুন। [সূরা হাক্কাহ শরীফ: ২০-২৪]
আর বাম হাতে আমলনামা গ্রহণকারীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَأَمَّا مَنْ أُوْتِـيَ كِتَابَهٗ بِشِمَالِهٖ فَـيَـقُوْلُ يَا لَيْـتَنِيْ لَـمْ أُوْتَ كِتَابِيَهْ ﴿২৫﴾ وَلَـمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ ﴿২৬﴾ يَا لَيْـتَـهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ ﴿২৭﴾ مَا أَغْنٰى عَنِّـيْ مَالِيَهْ ﴿২৮﴾ هَلَكَ عَنِّـيْ سُلْطَانِيَهْ ﴿২৯﴾ خُذُوْهُ فَـغُلُّوْهُ ﴿৩০﴾ ثُـمَّ الْـجَحِيْمَ صَلُّوْهُ ﴿৩১﴾ ثُـمَّ فِـيْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْـعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ ﴿৩২﴾ إِنَّهٗ كَانَ لَا يُـؤْمِنُ بِاللّٰـهِ الْعَظِيْمِ ﴿৩৩﴾ وَلَا يَـحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْـنِ ﴿৩৪﴾ فَـلَيْسَ لَهُ الْيَـوْمَ هَاهُنَا حَـمِيْمٌ ﴿৩৫﴾ وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِيْـنٍ ﴿৩৬﴾ لَّا يَأْكُلُهٗ إِلَّا الْـخَاطِئُـوْنَ ﴿৩৭﴾ سورة الـحاقة
আর যার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, হায় আফসোস! আমাকে যদি আমার আমলনামা দেওয়া না হতো! আমার হিসাব যদি জানতে না পারতাম! হায় আফসোস! যদি আমার (মৃত্যুর) ফায়ছালা হয়ে যেত। আমার মাল-সম্পদ তো আমার কোনো কাজে আসেনি। আমার কর্তৃত্বও আমার থেকে হালাক (ধ্বংস) হয়ে গিয়েছে! (ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বলা হবে) তাকে পাকড়াও করো, গলায় বেড়ি পরাও। তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। অতঃপর তাকে সত্তর হাত লম্বা শিকলে আবদ্ধ করো। নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করেনি অর্থাৎ বিশ্বাস করে আমল করেনি। মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াতে উৎসাহিত করেনি। আর এখানে তার জন্য কোনো বন্ধু নেই। গিসলীন (শরীর থেকে নির্গত এক ধরনের পুঁজ) ব্যতীত কোনো খাদ্যও নেই। ইহা পাপীরা ব্যতীত অন্য কেউ খাবে না। নাঊযুবিল্লাহ! [সূরা হাক্কাহ শরীফ: ২৫-৩৭]
উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ ছাড়াও আরো অনেক পবিত্র আয়াত শরীফের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি নেককার বান্দা-বান্দীদেরকে সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন আর বদকারদেরকে সতর্ক করেছেন।
কাজেই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে উনার আদেশ-নিষেধ মুতাবিক আমল করবে, তাদেরকেই ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে এবং তারা বিরাট সফলতা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে গুনাহর কাজ থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুতাবেক বেশি বেশি নেক কাজ করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘শরয়ী পর্দা’ মেয়েদের অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)