নছীহতে কায়িম মাকামে উম্মাহাতুল মু’মীনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
ধৈর্যশীলদের জন্য বেহিসাব প্রতিদান রয়েছে-১
২৬শে শা’বান, ১৪৪১ হিজরী (ইয়াওমুল আহাদ)
, ২৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
إِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ ﴿৪৬﴾ سورة الأنفال
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ধৈর্যধারণকারী উনাদের সাথে রয়েছেন। [সূরা আনফাল শরীফ: ৪৬]
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّـمَا يُـوَفَّـى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَـيْـرِ حِسَابٍ ﴿১০﴾ سورة الزمر
নিশ্চয়ই ছবরকারীগণকে উনাদের প্রতিদান বেহিসাবে প্রদান করা হবে। [সূরা যুমার শরীফ: ১০]
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِـيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْمُسْلِمُ الَّذِيْ يـُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِـرُ عَلٰى أَذَاهُمْ أَفْضَلُ مِنَ الَّذِيْ لَا يـُخَالِطُهُمْ وَلَا يَصْبِـرُ عَلٰى أَذَاهُمْ. (رواه الترمذي ، وابن ماجه)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে মুসলমান মানুষের সাথে চলাফেরা করে, মেলামেশা করে এবং তাদের জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে, সে ব্যক্তি উত্তম হবে ঐ ব্যক্তি থেকে যে মানুষের সাথে চলাফেরা করে না, মেলামেশা করে না এবং তাদের জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে না।
[তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ]
কোনো মুসলমান ব্যক্তি মানুষের সাথে চলাফেরা করার কারণে কেউ যদি তাকে গালি দেয়, দোষারোপ করে, যুলুম-অত্যাচার করে অথবা মারধর করে, আর সে তাদের মন্দ ব্যবহার সহ্য করে; তাহলে সে (যে ব্যক্তি সহ্য করল) ঐ ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে, যে ব্যক্তি মানুষের সাথে চলাফেরা করে না এবং তাকে মানুষের কোনো দূর্ব্যবহারও সহ্য করতে হয় না। অর্থাৎ মানুষের সাথে চলাফেরা করা এবং এর কারণে মন্দ ব্যবহার সহ্য করা হুসনুল খুলক্বের অন্তর্ভূক্ত।
উল্লেখ্য, প্রতিটি নেক কাজেই কষ্ট রয়েছে, কষ্ট ছাড়া নেকী অর্জন করা যায় না। মানুষ দূর্ব্যবহার মুখের দ্বারা করতে পারে, হাতের মাধ্যমে করতে পারে অথবা অন্যভাবেও করতে পারে। যে ব্যক্তি এগুলো সহ্য করবে, সে ব্যক্তি গায়েবী মদদ লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ اَنَّ رَجُلًا شَتَمَ اَبَا بَكْرٍ عَلَیْهِ السَّلاَمُ وَالنَّبـِىُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ يَـتَـعَجَّبُ وَيَـتَـبَسَّمُ فَـلَمَّا اَكْثَـرَ رَدَّ عَلَيْهِ بَـعْضَ قَـوْلِهٖ فَـغَضِبَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَامَ فَـلَحِقَهٗ اَبُـوْ بَكْرٍ عَلَیْهِ السَّلاَمُ وَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَشْتُمُنِـىْ وَاَنْتَ جَالِسٌ فَـلَمَّا رَدَدْتُ عَلَيْهِ بَـعْضَ قَـوْلِهٖ غَضِبْتَ وَقُمْتَ قَالَ كَانَ مَعَكَ مَلَكٌ يَـرُدُّ عَلَيْهِ فَـلَمَّا رَدَدْتَ عَلَيْهِ وَقَعَ الشَّيْطَانُ ثُـمَّ قَالَ يَا اَبَا بَكْرٍ ثَـلٰثٌ كُلُّهُنَّ حَقٌّ مَا مِنْ عَـبْدٍ ظُلِمَ بِـمَظْلَمَةٍ فَـيُـغْضِىْ عَنْـهَا لِلّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ اِلَّا اَعَزَّ اللّٰهُ نَصْرَهٗ وَمَا فَـتَحَ رَجُلٌ بَابَ عَطِـيَّةٍ يُرِيْدُ بِـهَا صِلَةً اِلَّا زَادَ اللّٰهُ بِـهَا كَـثْـرَةً وَمَا فَـتَحَ رَجُلٌ بَابَ مَسْئَـلَةٍ يُرِيْدُ بِـهَا كَـثْـرَةً اِلَّا زَادَ اللّٰهُ بِـهَا قِلَّةً. (رواه ابو داود، احمد)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে গালমন্দ করলো। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উনার কাছেই) বসা ছিলেন। তিনি (লোকটির গালমন্দ শুনে) বিস্ময় প্রকাশ করলেন এবং মৃদু হাসতে লাগলেন। লোকটি যখন বেশি গালমন্দ শুরু করলো তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তার কোনো কোনো কথার প্রতিউত্তর করলেন। এতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট হলেন এবং উঠে গেলেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার পিছনে পিছনে গেলেন এবং বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! লোকটি আমাকে গালমন্দ করছিল আর আপনি সেখানেই উপবিষ্ট ছিলেন। যখন আমি তার কোনো কোনো কথার প্রতিউত্তর করলাম তখন আপনি অসন্তুষ্ট হলেন এবং উঠে আসলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার সাথে একজন ফেরেশতা ছিলেন যিনি ঐ লোকটির (মন্দ কথার) জবাব দিচ্ছিলেন। যখন আপনি তার জবাব দিলেন, তখন (ফেরেশতা চলে গেলেন) শয়তান হাজির হয়ে গেল।
[আবূ দাঊদ শরীফ, আহমাদ শরীফ]
মহান আল্লাহ পাক তিনি ধৈর্যশীলের কাছে একজন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম পাঠিয়ে দেন, যিনি ধৈর্যশীলের পক্ষ থেকে উত্তর দিতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই ধৈর্য ধারণ করার দ্বারা তার জন্য ফযীলত-মর্যাদা থাকবে, শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে, প্রতিদান থাকবে, আর উত্তর দিলে কোনো প্রতিদান থাকবে না।
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)