ইতিহাস
দেশে দেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন (চীন)
, ২৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘তোমরা জ্ঞান লাভ করো, যদি তা চীন দেশেও থেকে থাকে। ’ সাধারণত, এখানে চীন অর্থ দূরবর্তী স্থানকে বোঝানো হয়েছে। যেহেতু আরব দেশ থেকে পূর্ব দিগন্তে বহুদূরে অবস্থিত চীন দেশ, তাই জ্ঞানলাভের জন্য চীনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
চীনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারের ইতিহাস অত্যন্ত সুপ্রাচীন। চীনা ভাষায় সে দেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন সম্পর্কিত যেসব তথ্যসূত্র পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায়, ৬২২ সালের কাছাকাছি কোনো একটা সময়ে (হিজরী ৩য় সনে) চীন উপকূলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা আগমন মুবারক করেন। ইতিহাস মতে, হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত কায়েস ইবনে হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ওরযাহ ইবনে আসাসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু কায়েস ইবনুল হারেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা অগ্রগামী দলে ছিলেন। আর উক্ত সুমহান দলের নেতৃত্ব মুবারক প্রদানকারী হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চীনের ক্যান্টন বন্দরে অবস্থান মুবারক করেন। সে স্থানে উনার নির্মিত ‘হুয়াশেং মসজিদ’ আজও বিদ্যমান। হুয়াশেং মসজিদের পাশেই হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র মাজার শরীফ। অন্য দুইজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র মাজার শরীফ উপকূলীয় ফু-কীন প্রদেশের চুয়ান-চু বন্দরের নিকটবর্তী লিং নামক পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।
তবে চীনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারের আরও ব্যাপক সূচনা ঘটে উমাইয়া শাসকদের সময়ে। এ সময় চীনাদের সঙ্গে আরবীয়দের কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে যখন তৎকালীন চীনা শাসক সোয়ানসোংকে সিংহাসনচ্যুত করা হয় তখন তার পুত্র তৎকালীন আব্বাসীয় শাসক মানসুরের কাছে সাহায্য চায়। মানসুর তার সাহায্যে ৪ হাজার সৈন্য প্রেরণ করে এবং তাদের সাহায্যে শাসক সোয়ানসোং আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ৪ হাজার মুসলমান সৈন্যরা পরবর্তীতে চীনেই স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন এবং দ্বীন ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এ সময়কালের ৬০০ বছর পর পুনরায় আরও একটি কাফেলা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্য চীনে গমন করে। তারা সবাই ছিলো আরব, ইরান ও তুরস্কের নাগরিক। হিজরী সপ্তম শতকে কুখ্যাত মঙ্গোলীয় আক্রমণের শিকার হয়ে তারা চীনে অবস্থান করেন। উনাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উত্তর ও পশ্চিম চীনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রসারতা লাভ করে। ১৩ শতকে চীনের সারা ইউনান প্রদেশের মানুষ মুসলমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
১৪ শতকের একজন ঐতিহাসিক লিখেছে, ‘তালিফোর সব অধিবাসী মুসলমান। ’ ইবনে বতুতা বলেছে, ‘প্রায় সব শহরেই মুসলিম মহল্লা বিদ্যমান। ’ ১৫ শতকের মুসলিম বণিক আলী আকবর বলেছে, ‘পিকিং শহরে প্রায় ৩০ হাজার মুসলমান বাস করে। ১৭ শতকের শুরুতে চীনা ইহুদিদের একটি বিরাট দল মুসলমান হয়ে যায়। ১৮ শতকে কিন লং জিঙ্গারিয়ার বিদ্রোহ দমন করার পর সেখানে যে ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করে, তারা সবাই পার্শ্ববর্তী মুসলিম জনবসতির মাধ্যমে মুসলমান হয়ে যান। শানতোং অঞ্চলে একক দুর্ভিক্ষের সময় মুসলমানদের কাছে আশ্রিত প্রায় ১০ হাজার বালক মুসলমান হয়। এছাড়া, কুয়ান তোং অঞ্চলে দুর্ভিক্ষে প্রায় ১৫ হাজার চীনা বালক সম্মানিত ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত হয়ে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে।
চীনারা মুসলমান হয়ে নিজেদের ভাবধারাকে সত্য, সুন্দরের পথে চালিত করে। ফলে দ্বীনি ক্ষেত্রেও লেগেছে পরিবর্তনের সুবাতাস। লানঝু নদী তীরে অবস্থিত মসজিদে তাই আজ নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। ১১টি প্রদেশের রাজধানী শহর ঝিয়াংয়ের মসজিদ গুলোতে আজ মুসলমানদের ভিড়। এসব দৃশ্য চীনে সম্মানিত ইসলামী ঐতিহ্যের পুনরুত্থানেরই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৩)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শের আলী খান আফ্রিদী: ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া একজন মুসলিম বীর
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১২)
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক হিসেবে ‘কুস্তি’ লড়াইকে যেভাবে ধরে রেখেছিলো উসমানীয়রা
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকালের একটি ঘটনা
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইংল্যান্ড কত সম্পদ এ অঞ্চল থেকে লুট করেছিলো?
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফির-মুশরিকদের আসল চরিত্র
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শাসক আকবরের যে আমল কখনো কোনভাবেই নষ্ট হয়নি এবং হয় না
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইংরেজদের আতঙ্ক বাংলার বীর মুহম্মদ তকী খাঁ’র বীরত্ব
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উত্তর আফ্রিকায় যেভাবে মুসলিম শাসনের ভিত শক্তিশালী হয়েছিলো
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত নূরুল ফাতহ মুবারক এবং কাশ্মিরের হযরতবাল মসজিদ সম্পর্কিত একটি মশহুর ঘটনা
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উসমানীয় সালতানাতের ঐতিহ্যবাহী সিপাহী ইউনিট
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)