ইতিহাস
দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন (১)
, ২৮ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১২ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
এখানে আমরা সারা বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে যে মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে তা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
রাশিয়ার বন্দী মুসলিম:
মধ্য এশিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে মুসলমানদের বসতি গড়ে উঠেছিল দ্বীন ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগ থেকেই। খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে মুসলমানরা মধ্য এশিয়ায় এসে পৌঁছেন।
বসরার শাসনকর্তা ইবনে আমীর আমু দরিয়ার উত্তাল তরঙ্গ মালা অতিক্রম করে বলখ, তুখারিস্থান প্রভৃতি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে।
খলীফায়ে সাদিস, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত আমলে ইরান ও খোরাসানের শাসনকর্তা জিয়াদের পুত্র বোখারা বিজয় করেন।
খলীফায়ে ছালিছ, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার একজন আওলাদ পাক আলাইহিস সালাম তিনি সমরখন্দ ও তিরমিজ দখল করেন ৬৭৪ খ্রি. সালে। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৮টি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কাজাখিস্তান, কিরমিজিয়া, তাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং আজারবাইজান- ‘এই ছয়টি প্রজাতন্ত্রে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়।
উমাইয়া যুগে মধ্য এশিয়া বিজিত হলেও তথাকার দখল ততটা দৃঢ় ছিল না। আব্বাসীয় যুগে (৭৫০-১২৫৮) এই অঞ্চলে অনেকগুলো স্থানীয় শাসক বংশের অভ্যুদয় ঘটে।
এদের মধ্যে ছিলো খোরাসানের তাহেরী বংশ (৮২০-৮৭২), সিজিস্থানের সাফফারী বংশ (৮৬৭-৯০৮), মধ্যে এশিয়া ও পারস্যের সামানী বংশ (৮৭৪-৯৯৯)। এদের রাজধানী ছিল বোখারা। তা ছাড়াও গজনী বংশ (৯৬২-১১৮৬), বুরাইদ বংশ (৯৪৫-১০৫৫) এবং সেলজুক তুর্কীদের বংশ (১০৫৫-১১৯৪) এতদঅঞ্চলের শাসনকার্য চালায়। এসব বংশের শাসন পরিচালনার সময়েই মধ্য এশিয়ায় দ্বীন ইসলাম প্রচার এবং প্রসারের ব্যাপ্তি ঘটে।
ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ শতকে মধ্য এশিয়ায় শুরু হয় মোঙ্গল বর্বরতা। মোঙ্গল শাসনের পর মধ্য এশিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে এখানকার মুসলিম শক্তি এবং প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীকালে রুশ আগ্রাসন ত্বরান্বিত হয়।
ষোড়শ শতকের দিকে রাশিয়ার দৃষ্টি পড়ে মধ্য এশিয়ার দিকে। ইউরোপে ফরাসী, জার্মানী এবং ইংরেজদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে রাশিয়া মধ্য এশিয়ায় তার প্রভাব বিস্তারে মনোনিবেশ করে। ১৮৮৪ সালের মধ্যেই এখানকার বেশ কয়েকটি অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া। রাশিয়ায় কমিউনিষ্ট বিপ্লবের পর প্রথমে ফারিজম এবং উজবেকে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র স্থাপন করা হয়। পরে এর নাম দেয়া হয় উজবেকিস্তান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯২৫ সালে তুর্কমেনিস্তান, ১৯২৯ সালে কিরমিজিয়া, ১৯৩৬ সালে তাজাকিস্তান প্রজাতন্ত্রগুলো স্থাপন করা হয়।
১৯১৭ সালের বলসেভিক বিপ্লব সাধিত হবার পূর্ব পর্যন্ত মুসলিম অধ্যুষিত প্রজাতন্ত্রগুলোতে দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার ও প্রসার অব্যাহত ছিল। যদিও রাশিয়ার জার সরকার মুসলমানদের উপর প্রচ- দমননীতি চালাতে ভুলেনি। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সময় লেনিন মুসলমানদের তার সমর্থনে রাখার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায়। এজন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মুসলিম নির্যাতনের জন্য সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেনি লেনিন। মুসলিমরা এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বলসেভিক বিপ্লব সংঘটিত হলো। লেনিন হলো রাষ্ট্রের প্রধান- একনায়ক সরকার। এতক্ষণে লেনিনের কথিত মুসলিম প্রীতি এবং সমাজতন্ত্রের ধোঁকাবাজি চরিত্র ফুটে উঠলো। মুসলমানদের জবাই করার পরিকল্পনা নেয়া হলো রাষ্ট্রের পক্ষ হতে। ১৯২০ সাল হতে ১৯৩০ সালের মধ্যে রুশ নেতৃবৃন্দ মার্কসবাদও লেনিনবাদ প্রতিষ্ঠাব্রতে অবতীর্ণ হবার জন্য দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানদের উৎখাতের কাজ শুরু করল। ১৯২০ সালের সূচনাতেই এই হত্যাযজ্ঞের কাজটি আরম্ভ হয়। মুসলিম এলাকাগুলোর প্রতিভাধর মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরী করে তাদের হত্যা করা হয়। লাখ লাখ মুসলমানকে জবাই করা হলো সমাজতন্ত্রের স্বার্থে।
বিপ্লবের পূর্বে একদল বিভ্রান্ত মুসলমান যারা লেনিনকে মুসলিম এলাকাগুলোর স্বাধীনতা ফিরে পাবার শর্তে সমর্থন করেছিল তারাও রেহাই পেল না হত্যাযজ্ঞের হাত হতে। নাউযুবিল্লাহ! (চলবে)
-মুহম্মদ আহাদুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)