দুনিয়াবী আলোচনা এবং দুনিয়াদারদের সাথে চলাফেরা করলে দুনিয়ার মুহব্বত বৃদ্ধি পায়
, ১৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২১ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
কাজেই দুনিয়ার একটা তাছীর রয়েছে, ক্রিয়া রয়েছে। মূলতঃ প্রত্যেক জিনিসের একটা তাছীর রয়েছে। এজন্যই তাসাউফের মূল বিষয় হচ্ছে- সংসর্গ তাছীর করে। অর্থাৎ ছোহবত তাছীর করে। এটা অত্যন্ত ফিকিরের বিষয়, যেমন- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা আমার পরে এই পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে, হেজাজ ভূমি থেকে কাফেরদেরকে সরিয়ে দিবে। একমাত্র মুসলমান ছাড়া এখানে যেন কেউ বসবাস না করে, একমাত্র মুসলমান ছাড়া যেন এই পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে কেউ বসবাস না করে। কাউকে তোমরা অনুমতি দিওনা।”
আমিরুল মু’মিনিন খলীফাতুল মুসলিমিন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার পবিত্র খিলাফত কালে সে আইনটা জারী করেছিলেন। উনার যামানায় কোন কাফির সেখানে বসবাস করতো না, সকলকে উনি বের করে দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক যে, একমাত্র মুসলমানরাই সেখানে বসবাস করবে, অন্য কেউ বসবাস করতে পারবে না। যাতে বেদ্বীন ও বদ্দ্বীনদের বদ্ তাছীর না পড়ে, যদিও উনাদের প্রতিক্রিয়া করা সম্ভব ছিলনা, তথাপিও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পবিত্র আদেশ মুবারক উনার মধ্যে এটাই বলে দিয়েছেন বা নছীহত মুবারক করেছেন যে, দুনিয়া খুব কঠিন জিনিস, তার তাছীর ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক কিছু ক্রিয়া করবেই, সেজন্য সকলকে সাবধান থাকতে বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়, হযরত মীর্জা মায্হার জান জানান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মায়ের পেট থেকে ত্রিশ পারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয ছিলেন। কিতাবে লেখে- দু’জন ব্যক্তি মায়ের পেট থেকে ত্রিশ পারার হাফিয হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। একজন হলেন- হযরত বখ্তীয়ার ক্বাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, দ্বিতীয় জন হলেন- হযরত মীর্জা মায্হার জান জানান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি বাদশাহ্ আলমগীরের আত্মীয় ছিলেন, উনি ওলীয়ে মাদারজাত, হাফিযে মাদারজাত, বিরাট বুযুর্গ। উনি উনার পীর সাহেব হযরত নূর মুহম্মদ বাদায়ুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে একদিন গিয়েছিলেন, রীতিমত নিয়মিত যাওয়া-আসা করতেন। একদিন পীর সাহেব বললেন, মীর্জা সাহেব আপনার শরীর থেকে শরাবের গন্ধ আসছে, তার কি কারণ? আপনার শরীর থেকে শরাবের গন্ধ আসছে, তার কি কারণ হে মীর্জা সাহেব? পীর সাহেব নিজেও জানতেন যে, হযরত মীর্জা মাযহার জান জানান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি শরাব পান করা তো দূরের কথা, কোনদিন দেখেনওনি। আর মীর্জা সাহেব নিজেও ফিকির করতেছিলেন যে, ব্যাপারটি কি ঘটে গেল? আমার শরীর থেকে শরাবের গন্ধ বের হচ্ছে কেন? অনেক ফিকির করার পর বললেন, হুযূর বেয়াদবী মাফ করবেন, আমি যখন আপনার দরবার শরীফ উনার উদ্দেশ্যে পথ দিয়ে আসছিলাম, তখন বাতাস উল্টো দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। একটা শরাবখোর শরাব পান করে মাতাল হয়ে, আমি রাস্তার যেদিক দিয়ে আসতেছিলাম, তার বিপরীত দিক থেকে সে হেঁটে যাচ্ছিল। তার শরীরের বাতাসগুলো আমার শরীরে লেগেছিল। সম্ভবতঃ সে কারণেই আপনি আমার শরীর থেকে শরাবের গন্ধ পাচ্ছেন। যখন উনি এটা বললেন, তখন হযরত নূর মুহম্মদ বাদায়ূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী ছিলেন, তিনি বললেন যে, হ্যাঁ তাই হবে, সেই শরাবখোরের শরীরের বাতাস আপনার শরীরে লেগেছে, যার কারণে আপনার শরীর থেকে শরাবের গন্ধ বের হচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ্)
এখন চিন্তা এবং ফিকিরের বিষয় এই যে, একটা শরাবখোরের শরীর থেকে শরাবের বাতাস লাগার কারণে একজন মহান আল্লাহ পাক উনার খালেছ অলী, যিনি অলীয়ে মাদারজাত, হাফেজে মাদারজাত, উনার শরীর থেকে যদি শরাবের গন্ধ বের হতে পারে, তাহলে দুনিয়ার গন্ধ আমাদের শরীর থেকে কতটুকু বের হবে? সেটাই ফিকিরের বিষয়।
অতএব, আমাদের শরীর থেকে দুনিয়ার গন্ধ কতটুকু বের হবে, সেটা আমাদের ফিকির করতে হবে। যেহেতু দুনিয়ার মধ্যে আমরা রয়েছি এবং দুনিয়ার মধ্যে আমরা মশগুল, আমাদের অন্তরের মধ্যে দুনিয়ার মুহব্বত রয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের শরীর থেকে দুনিয়ার মুহব্বত কতটুকু আসতে পারে, এটা ফিকিরের বিষয়। যেহেতু দুনিয়ার একটা তাছীর বা ক্রিয়া রয়েছে।
কাজেই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই এই তাছীর এবং ক্রিয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ তার অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহব্বত দূর করে দিতে হবে।
বর্তমান যামানায় অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহব্বত দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে, খলীফাতুল্লাহ খলীফাতু রসুলুল্লাহ সাইয়্যিদুনা রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র ছোহবত মুবারক এখতিয়ার করা, সর্বক্ষেত্রে উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা। কারণ, উনাদের মুহব্বত ঈমান আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে উনাদের পবিত্র ছোহবত মুবারক এখতিয়ার করার মাধ্যমে খালিছ হিদায়েত এবং আল্লাহওয়ালা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
তাসনীম আহমদ খান
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পুরুষদের ন্যায় মহিলাদেরও দ্বীনী তা’লীম গ্রহণ করা ফরযে আইন
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
জন্মের তৃতীয় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)