দুধের ভেজালে জীবন সংকটে
, ২৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১১ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) তাজা খবর
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা ইউনিয়নের গ্রাম চকচকিয়া। দিনের আলোতে বড়াল নদীর পাশের ছিমছাম পরিবেশ। রাতে দেখা মেলে ভয়ঙ্কর চিত্রের। ক্রেতা সেজে সন্ধ্যার কিছু পরে গ্রামে ঢুকতেই নাকে এলো কেমিক্যালের ঝাঁঝালো গন্ধ। সঙ্গী স্থানীয় একজন মুচকি হেসে বললেন, এই গন্ধ মানেই কারখানা চলছে। প্রায় আধা কিলোমিটার হাঁটাপথ পেরিয়ে গোডাউন আকৃতির একটি টিনশেড ঘরে ঢুকেই চক্ষু চড়কগাছ। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কস্টিক সোডার প্যাকেট, স্কিমড মিল্ক পাউডার, চিনির বস্তা। আরেকপ্রান্তে ডিটারজেন্ট প্যাকেট ও পামওয়েলের ড্রাম। কয়েকজন শ্রমিক ব্যস্ততার সঙ্গে এগুলো পরিমাণমতো নিয়ে পানি মিশিয়ে বানাচ্ছেন দুধের মতো এক ধরনের সাদা তরল। এটিই নাকি আসল দুধ। কাজ শেষে তরলগুলো ড্রাম থেকে প্লাস্টিকের বড় ক্যান ও সিলভারের বোতলে ভরা হচ্ছে। এক কোণায় রাখা আছে ক্রেতার অর্ডারের তালিকা। তাদের তৈরি এই পণ্যগুলো ভোরের আলো ফোটার আগেই ট্রাকে করে চলে যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সরেজমিন ঘুরে নিজ চোখে দেখার পরও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে ক্রেতা সেজে কথা বলে মিলেছে আরও রোমহর্ষক তথ্য। চকচকিয়ার মতো এই ইউনিয়নের আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রতিরাতেই এই সাদা দুধ ব্যবসার আড়ালে চলে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার ফরিদপুর ছাড়াও বেড়া, সাঁথিয়া, ভাঙ্গুড়া ও সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান দুধ উৎপাদনকারী এলাকা। দিনে প্রায় ৪ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয় সেখানে। এখান থেকে সরকারি দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাসহ বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ করে থাকে।
দুধ সংগ্রহের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে স্থাপন করেছে প্রচুর শীতলীকরণ ও সংগ্রহ কেন্দ্র। দীর্ঘসময় ভালো রাখার জন্য দুধ এসব শীতলীকরণ কেন্দ্রে রাখা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ভেজালকারীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু শীতলীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাত করে মোটা টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সেখানে ভেজাল দুধ সরবরাহ করে।
ফরিদপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কায়সার রুহুল আমিন জানান, সেখানে ১২৭টি নিবন্ধিত দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির বেশিরভাগ বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় দুধ সরবরাহ করে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরও ব্যক্তিগত দুই সহস্রাধিক দুগ্ধ উৎপাদনের খামার রয়েছে। শুধু এই বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৪টি দুধ সংগ্রহ পয়েন্ট রয়েছে। উৎপাদিত দুধের প্রায় ৭০ শতাংশ এসব প্রতিষ্ঠান নেয়। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ দুধ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন।
পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, সুজানগর, আটঘড়িয়া এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও কাজীপুর উপজেলার ঘোষ ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার ২০০ কেজি (২৮০ মণ) ছানা তৈরি করেন। ওই পরিমাণ ছানা তৈরিতে এক হাজার ৪০০ মণ দুধের প্রয়োজন হয়। ঘোষ ও ব্যবসায়ীরা ছানা তৈরির পর ছানার পানি ফেলে না দিয়ে তা বড় বড় ড্রামে সংরক্ষণ করেন। পরে এই পানিই নকল দুধে পরিণত হয়। প্রতিটি কারখানায় সব সময় দুই থেকে পাঁচ হাজার লিটার ছানার পানি মজুত রাখা হয়।
ডেমরা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব এক প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি চক্র গরুর দুধের বদলে এখন এই কেমিক্যালের দুধ বানিয়ে পুরো গ্রামের সুনাম নষ্ট করে দিচ্ছে। আগে মানুষ এখানকার খাঁটি দুধের সুনাম করতো। আর এখন শুধু ভেজালের জন্যই নামডাক। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট মাঝে মাঝে আসে। জরিমানা করে চলে যায়। কিন্তু কারখানাগুলো আবার চালু হয়ে যায়। সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে এদের থামানো সহজ নয়।
এদিকে এই গ্রামে খাঁটি দুধ উৎপাদনকারীদের অবস্থাও শোচনীয়। গবাদি পশু পালনকারী মিরাজুল নামের এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কষ্ট করে দুধ উৎপাদন করি। কিন্তু এই ভেজাল দুধের কারণে দামের দিক থেকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারি না। মাঝেমধ্যে সংগ্রহ কেন্দ্রগুলোও খাঁটি দুধ কিনতে চায় না। কারণ তারা আসলের সঙ্গে ভেজাল দুধ মিশিয়ে বেশি লাভ করতে চায়!
শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির খামারি আব্দুল আলিম নামের একজন বলেন, গো-খাদ্যের তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো ৪.৫০ স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাটের (ননিযুক্ত) দুধ প্রতি লিটার ৫২-৫৭ টাকা দরে কিনছে। এই মানের দুধ খুব কম উৎপন্ন হয়। খোলা বাজারে প্রতিলিটার দুধ ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে দুধের চাহিদা বেশি থাকায় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ কম থাকার সুবিধা নিচ্ছে অসৎ এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এরাই নকল দুধ ও ঘি বাজারজাত করে এই শিল্পের বারোটা বাজাচ্ছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভারতে সালমান রুশদির ইসলামবিদ্বেষী বই বিক্রি শুরু, মুসলমানদের প্রবল প্রতিবাদ ক্ষোভ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দখলদার সেনাদেরকে হ্যান্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে টার্গেট
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সচিবালয়ের আগুন ১০ ঘণ্টা পর নির্বাপণ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মিশরের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দখলদার সন্ত্রাসী ইসরায়েল
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আমাদের ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের ছাড় নয় -আসিফ মাহমুদ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সন্ত্রাসীদের সামরিক অবস্থানে রকেট ফায়ারিং
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আফ্রিকার মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কাজাখস্তানে বিমান দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত, ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ভারতের সংসদে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান, ওয়াইসিকে আদালতে তলব
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জাহাজে ৭ জনকে হত্যা করেছে ইরফান, দাবি র্যাবের
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চিকিৎসার জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাড়ে ৪ মাসেও সরকারের কাজ প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি -নুর
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)