ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ফতওয়া বিভাগ
কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব, আর এর চেয়ে কমে কাটা ও মু-ন করা হারাম হওয়ার অকাট্য দলীলসমূহ:
(১২৩)
دارھی کتروانا یا مندوانا حرام ھے- کتروانے سے یہ مراد ھے کہ اتنی کتروائے کہ ایک مشت سے کم رہ جائے ایک مشت کی مقدار حدیث سے ثابت ھے
অর্থ: দাড়ি ছাটা অথবা মু-ানো হারাম। ছাটার দ্বারা উদ্দেশ্য এই যে, ছেটে একমুষ্ঠির কম রাখা। দাড়ির একমুষ্ঠি পরিমাণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম খ- ১৫৪ পৃষ্ঠা)
(১২৪)
دارھی رکھنا و اجب ھے- طرھر مند و انے و الافاسق ھے- اس کے پیچھے نماز مکروہ ھے
অর্থ: দাড়ি রাখা ওয়াজিব আর দাড়ি মু-নকারী ফাসিক্ব। তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম খ-, ১৫৫ পৃষ্ঠা)
(১২৫)
দাড়ি সম্পর্কে প্রখ্যাত আলেম, আলেমে রব্বানী, হাফিজুল হাদীছ, হযরত রুহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত হলো- “এক কব্জা পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয, কেননা ফরয ত্যাগ করা হারাম। (ফতওয়ায়ে আমীনিয়া ১ম খ-, ৯০ পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: দাড়ি সম্পর্কে উপরোক্ত দলীলসমূহ ছাড়াও আমাদের নিকট আরো দলীল মওজুদ রয়েছে, ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় তা পেশ করা হলো না। তবে প্রয়োজনে আমরা তা পেশ করতে সক্ষম ইনশাআল্লাহ!)
মোঁছ মু-নকারীদের বক্তব্য খ-ন:
মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ৩২তম সংখ্যায় মোঁছ বা গোঁফ সম্পর্কে ভূমিকায় মোটামুটি বিস্তারিত দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। যাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, “মোঁছ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন বা মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। পক্ষান্তরে মোঁছ মু-ন না করে, কেটে ছোট বা খাটো করে রাখা সুন্নত। আর এটাই অধিক গ্রহণযোগ্য বা মোখতার মত।
সমাজে কিছু কিছু লোক রয়েছে, যারা নিজ মোঁছ মু-ন করে এবং মোঁছ মু-ন করা সুন্নত বলে ফতওয়া দেয়। আর দলীল হিসেবে তারা কতিপয় পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনা পেশ করে থাকে। নিম্নে তাদের বক্তব্যগুলোর দলীলভিত্তিক খ-নমূলক আলোচনা করা হলো-
(১) যারা মোঁছ মু-ন করা সুন্নত বলে থাকে, তারা প্রথমতঃ দলীল হিসেবে এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وفروا اللحى واحفوا الشوارب
তাদের বক্তব্য হলো- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “ইহ্ফা” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার শাব্দিক অর্থ হলো “ভালরূপে মু-ন করা”। অতএব, মোঁছ মু-ন করাই যুক্তিযুক্ত।
সঠিক জবাব: উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যদিও “ইহ্ফা” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, আর আহলে লোগাতগণ যদিও তার অর্থ করেছেন “ভালরূপে মু-ন করা” কিন্তু মোঁছের ব্যাপারে আহলে লোগাতগণের অর্থ গ্রহণযোগ্য নয় বরং অনুসরণীয় মুহাদ্দিছ বা হাদীছ বিশারদ উনাদের দেয়া অর্থই অধিক গ্রহণযোগ্য। আর মুহাদ্দিছীনে কিরাম বা হাদীছ বিশারদ যেমন- ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাজুল মুহাদ্দিছীন হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি, রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সাইয়্যিদুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ আরো অনেকেই “ইহ্ফা” শব্দের অর্থ করেছেন, “ছোট করা বা অধিক খাটো করা। (ফাতহুল বারী, শরহে মুসলিম, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত)
অতএব, “ইহফা” শব্দের লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ যদিও “মু-ন করা” কিন্তু মোঁছের ক্ষেত্রে লোগাতী অর্থ গ্রহণযোগ্য নয় বরং মুহাদ্দিছীন উনাদের দেয়া “ইস্তেলাহী” অর্থই গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও মোঁছ খাটো বা ছোট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, মু-ন করা নয়। তাই ফক্বীহগণের রায় হলো- মোঁছ খাটো বা ছোট করা সুন্নত। আর মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। কেউ কেউ আকৃতি-বিকৃতি হওয়ার কারণে হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, যদি “ইহ্ফা” শব্দের দ্বারা “মু-ন করা” বুঝানো হতো, তবে ফক্বীহগণ মোঁছ মু-ন করা বিদয়াত বা হারাম ফতওয়া দিতেন না।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মোঁছ মু-নের পক্ষে উক্ত দলীল মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং সম্পূর্ণই অগ্রাহ্য ও বাতিল। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ফতওয়া বিভাগ থেকে সংকলিত। )
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)