ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
, ১৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০১ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ফতওয়া বিভাগ
দাড়ি ও গোঁফে খেযাব ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ ফায়সালা:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ سِيرِينَ قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ هَلْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَضَبَ فَقَالَ لَمْ يَبْلُغِ الْخِضَابَ كَانَ فِى لِحْيَتِهِ شَعَرَاتٌ بِيضٌ. قَالَ قُلْتُ لَهُ أَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَخْضِبُ قَالَ فَقَالَ نَعَمْ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ.
অর্থ: হযরত ইবনে শীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? জবাবে তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারক খেযাব ব্যবহারের পর্যায়ে পৌঁছেনি। কারণ উনার মাত্র কয়েকটি মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক অর্থাৎ চুল মুবারক এবং নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক বা দাড়ি মুবারক সাদা হয়েছিল। অতঃপর উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, কাতম মিশ্রিত মেন্দি দ্বারা খেযাব ব্যবহার করেছেন। (মুসলিম শরীফ)
অতএব, দাড়ি বা চুল রঙ্গিন করার জন্যে মেহদী পাতার খেযাব ব্যবহার করা জায়িয ও সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। কিন্তু কালো খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক মাকরূহ তাহরীমী।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ أُتِىَ بِأَبِى قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيِّرُوا هَذَا بِشَىْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পিতা হযরত আবূ কুহাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসেন এমতাবস্থায় যে, উনার চুল ও দাড়ি মুবারকগুলো সাদা হয়ে গিয়েছিল। উহা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সাদা রংকে অন্য কোন রং দ্বারা পরিবর্তন করে নিন, তবে কালো রং থেকে বেঁচে থাকুন। (মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُونُ قَوْمٌ فِي آخِرِ الزَّمَانِ يَخْضِبُونَ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আখিরী যামানায় এমন কিছু লোক বের হবে, যারা কবুতরের পালকের ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (আবূ দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ خَضَّبَ بِالسَّوَادِ سَوَّدَ اللهُ وَجْهَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি কালো খেযাব ব্যবহার করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারাকে কালো করে দিবেন। (তবারানী শরীফ)
কালো খেযাব সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরহে শামায়েলে তিরমিযীতে উল্লেখ করেন-
ذَهَبَ أَكْثَرُ الْعُلَمَاءِ إِلٰى كَرَاهَةِ الْخِضَابِ بِالسَّوَادِ، وَرَجَحَ الثَّوْرِىُّ إِلٰى أَنَّهَا كَرَاهَةُ تَحْرِيم
অর্থ: অধিকাংশ আলিম উনাদের মতে, কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ। হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মাকরূহ তাহরীমী।
মিশকাত শরীফ উনার শরাহ আশয়াতুল লুময়াতে উল্লেখ আছে-
خضاب بحناء باتفاق جائز است- ومختاردر سواد حرمت است
অর্থ: মেন্দী দ্বারা খেযাব দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। আর গ্রহণযোগ্য মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চুল বা দাড়িতে কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক মাকরূহ তাহরীমী।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)