ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
, ১০ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ফতওয়া বিভাগ
গোঁফ ভিজা পানি পান করার হুকুম:
অনেকের ধারণা গোঁফ বা মোঁছ ভিজা পানি পান করা মাকরূহ বা নিষেধ, যার কারণে অনেকে মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলে। অথচ তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ শরীয়ত তথা ফিক্বাহ্র নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেই এ ধরনের কথা উল্লেখ নেই। বরং মোঁছ ভিজা পানি পান করা সম্পূর্ণ জায়িয ও হালাল। তাছাড়া মোঁছ যতই চেছে ফেলা হোক না কেন তার চিহ্ন অবশ্যই কিছু না কিছু অবশিষ্ট থাকবে। কাজেই কোন অবস্থাতেই মোঁছ ভিজানো ছাড়া পানি পান করা সম্ভব নয়। অতএব, এরূপ ভুল ধারণা বা রসমের বশবর্তী হয়ে মোঁছ চেছে ফেলা জায়িয নয় বরং মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। যেটা উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
দাড়ি ও গোঁফে খেযাব ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ ফায়সালা:
মূলত: দাড়িতে খেযাব ব্যবহার করা সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাতম মিশ্রিত মেহেদী বা মেন্দী পাতা দ্বারা সাদা দাড়িকে রঙ্গিন করতেন। কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারকের মধ্যে কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি। আর এটাই সর্বসম্মত ও গ্রহণযোগ্য মত। যা বিশুদ্ধ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত।
কেননা বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুযায়ী দেখা যায়- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক অর্থাৎ সাদা চুল ও মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক অর্থাৎ দাড়ি মুবারকের সংখ্যা ছিল মোট- ১৪ মতান্তরে ২০টি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যিনি যেভাবে দেখেছেন, তিনি সেভাবেই বর্ণনা করেছেন। তবে ২০টির বেশী কেউ বর্ণনা করেননি। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّمَا كَانَ شِيْبُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوًا مِّنْ عِشْرِيْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক অর্থাৎ চুল মুবারক ২০টির মত সাদা হয়েছিলেন।
উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক ও মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারকসহ মোট ২০টি সাদা হয়েছিলেন। তাও আবার একস্থানে নয় বরং বিভিন্ন স্থান মিলিয়ে, যার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক ও মহাসম্মানিত নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক কালোই দেখা যেতো। খেয়াল না করলে পাকা চুল বা দাড়ি মুবারক দেখা যেতো না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে মাত্র ২০টি চুল ও দাড়ি মুবারক উনার জন্যে খেযাব ব্যবহার করার প্রশ্নই উঠে না। কারণ খেযাব ব্যবহার করা হয় সাদা চুলের জন্যে।
নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এ কথাটি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ قَتَادَةَ قَالَ: قُلْتُ حَضْرَتْ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ هَلْ خَضَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: لَمْ يَبْلُغْ ذٰلِكَ، إِنَّمَا كَانَ شَيْبًا فِي صُدْغَيْهِ
অর্থ: হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন- আমি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক অর্থাৎ চুল মুবারক এবং নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক বা দাড়ি মুবারক খেযাব ব্যবহার করার অবস্থায় পৌঁছেনি। উনার মহাসম্মানিত নূরুল হায়া’ মুবারক অর্থাৎ কান মুবারক দ্বয়ের পাশে মাত্র কয়েকখানা মহাসম্মানিত নূরুল ফাতাহ মুবারক বা চুল মুবারক সাদা হয়েছিল। (তিরমিযী শরীফ)
কাজেই হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা দ্বারাও স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি।
আর যারা বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেযাব ব্যবহার করেছেন, উনাদের এরূপ বলার কারণ হলো- চুল বা দাড়ি সাদা হওয়ার পূর্বে সাধারণতঃ কিছুটা লালচে রং ধারণ করে থাকে। সম্ভবতঃ যারা খেযাবের পক্ষে বলেছেন, উনারা উক্ত লালচে রং দেখেই বলেছেন।
তবে খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনিসহ অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা খেযাব ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সে খেযাব ছিল কাতম মিশ্রিত মেহদী বা মেন্দি। অর্থাৎ মেহদী পাতার সাথে কাতম নামক গাছের পাতা মিশ্রিত করে, তার দ্বারা খেযাব লাগানো হতো, ওটা ব্যবহারে দাড়ি লাল বা জাফরানী রং ধারণ করতো।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)