ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২)
, ২৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০১ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১৬ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ফতওয়া বিভাগ
হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে গোঁফ বা মোঁছের আহকাম:
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহে গোঁফ বা মোঁছের ব্যাপারে যতগুলো শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার প্রত্যেকটির দ্বারাই গোঁফ ছেটে খাট বা ছোট করে রাখার নির্দেশ পাওয়া যায়। হলক্ব বা চেছে ফেলা নয়। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- قَصُّ الشَّارِبِ মোঁছ কাটা حُدُّوا شَوَارِبَكُمْ তোমাদের মোঁছ ধর (খাট কর) اِنْهَكُوا الشَّوَارِبَ মোঁছ কাট جُزُّوا الشَّوَارِبَ মোঁছ ভালরুপে ছোট করো أَحْفُوا الشَّوَارِبَ মোঁছ অধিক খাট করো। উল্লেখিত হাদীছ শরীফের একটির দ্বারাও حلق الشَّارِبِ বা গোঁফ বা মোঁছ চেছে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায় না। মূলতঃ গোঁফ বা মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলায় আকৃতি বিকৃতি হয়, যা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। আর তাই কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব হবে না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউ নিজ গোঁফ বা মোঁছ মু-ন করতেন। মূলতঃ সকলেই গোঁফ বা মোঁছ ছোট ছোট করে রাখতেন।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে-
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا راى رجلا طويل الشوارب ياخذ شفرة سواكا فيضع الشوال تحت الشارب ويقص عليه. (كشف الغمة(
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই কোন লম্বা মোঁছ বিশিষ্ট লোক দেখতেন, তখনই তিনি কেচি গ্রহণ করে মোছের নীচে মেছওয়াক রেখে মোঁছের বর্ধিতাংশ কেটে দিতেন। (কাশফুল গুম্মাহ)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, গোঁফ বা মোঁছ কেটে বা ছোট করে রাখতে হবে, গোঁফ মু-ন বা চাছা যাবে না। মূলতঃ কারো কারো মতে আকৃতি বিকৃত হওয়ার কারণে, গোঁফ বা মোঁছ সম্পূর্ণ মু-ন করা হারাম। আর অধিকাংশ ফক্বীহগণের মতে গোঁফ বা মোঁছ মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী। কেউ কেউ ইহফা শব্দের উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যে, মোঁছ হলক্ব বা চেছে ফেলাই সুন্নত। কারণ ‘ইহফা’ শব্দটি মোবালেগা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ হলো- ভালরূপে মু-ন করা। মূলতঃ তাদের এ কথাটি শুদ্ধ নয়, কারণ অধিকাংশ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মোঁছ খাট করার কথা বলা হয়েছে। আর অনুসরণীয় মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, যেমন- হযরত ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের কিতাবসমূহে ‘ইহফা’ শব্দের অর্থ করেছেন, অধিক খাট করা।
অতএব, ‘ইহফা’ শব্দের লোগাতী অর্থ যদিও মু-ন করা, কিন্তু মোঁছের ক্ষেত্রে লোগাতী অর্থ গ্রহণযোগ্য হবে না বরং মুহাদ্দিসগণের ইছতেলাহী অর্থই গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ এখানে ইহফা শব্দের অর্থ হলো- অধিক খাট করা। তাছাড়া ‘ইহফা’ শব্দের অর্থ- বারবার বা বেশী বেশী খাট করাও হতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, আরবী এমন অনেক শব্দ রয়েছে, যার লোগাতী অর্থ সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ বাদ দিয়ে ইস্তেলাহী বা পারিভাষিক অর্থ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে যায়। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
যার লোগাতী অর্থ হলো- কাফিররা ধোঁকাবাজী করলো, মহান আল্লাহ পাক তিনিও ধোঁকাবাজী করলেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম ধোঁকাবাজ। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
অর্থাৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কাফিরদের প্রসঙ্গে মকর শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শানেও মকর শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। মাকারুন শব্দের লোগাতী অর্থ হচ্ছে, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা ইত্যাদি। অতএব, মকর শব্দটি যখন কাফিরদের প্রসঙ্গে আসবে তখন তার লোগাতী অর্থই গ্রহণ করতে হবে, আর মকর শব্দটি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার শানে ব্যবহৃত হবে, তখন তার লোগাতী অর্থ বাদ দিয়ে ইস্তেলাহী অর্থ গ্রহণ করতে হবে। কেননা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার শানেও উক্ত শব্দের লোগাতী অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে সেটা হবে স্পষ্ট কুফরী।
সুতরাং উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হলো- “কাফিররা ধোঁকাবাজী করলো, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হেকমত বা কৌশল করলেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম হেকমতওয়ালা”
অনুরূপ দাড়ির ক্ষেত্রে ইহফা শব্দের লোগাতী অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং মুহাদ্দিসগণের দেয়া ইস্তেলাহী বা পারিভাষিক অর্থই গ্রহণযোগ্য। কেননা যদি ইহফা শব্দের লোগাতী অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে তা হবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আমলের বিপরীত। কারণ উল্লেখিত কেউ নিজ মোঁছ মু-ন করেছেন বলে প্রমাণিত নেই। তাছাড়া অসংখ্য হাদীছ শরীফে মোঁছ খাট করার কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং উনাদের আমল ও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ “মোঁছ খাট করো” দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মূলতঃ ইহ্ফা শব্দের দ্বারাও মোঁছ খাট করার কথা বলা হয়েছে, মু-ন করার কথা নয়। অতএব, মোঁছ ছোট বা খাট করে রাখাই সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। আর চেছে ফেলা হলো- মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১)
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯)
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৮)
১৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৭)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)