ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯)
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১১ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ফতওয়া বিভাগ
একমুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে দাড়ি কর্তন ও মু-নকারী ইমামের পিছনে নামায পড়ার হুকুম:
কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি চাছা ও কাটা হারাম।
শরীয়ত উনার ফায়সালা হলো- যারা সর্বদা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করে অথবা সর্বদা হারাম কাজে লিপ্ত, শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তারা ফাসিকের অর্ন্তভুক্ত। আর সর্বসম্মতিক্রমে ফাসেকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
অতএব, যারা দাড়ি এক মুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে কাটে বা ছাটে, তারা ফরয তরক করা বা হারাম কাজে লিপ্ত থাকার কারণে ফাসেকের অন্তর্ভুক্ত। এরূপ ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
ফাসিকের পরিচয় ও তার আহকাম:
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে-
وَالْفَاسِقُ مَنْ فَعَلَ كَبِيْرَةً اَوْ اَصَرَّ عَلٰى صَغِيْرَةً.
অর্থ: ফাসিক ঐ ব্যক্তি, যে কবীরা গুণাহ করে অথবা ছগীরা গুণাহ বারবার করে। (ফতওয়ায়ে শামী ৪র্থ খ- পৃষ্ঠা ৫৩১)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَايَؤُمُّ فَاجِرٌ مُؤْمِنًا
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ফাসিক ব্যক্তি মু’মিন ব্যক্তিদের ইমামতী করবে না। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
আর তাই ফিক্বাহের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে, ফাসিক ব্যক্তি ইমামতী করার উপযুক্ত নয়। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তাই এরূপ (ফাসিক) ইমামকে অনতিবিলম্বে ইমামতী পদ থেকে সরিয়ে দেয়া আবশ্যক। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৬৫)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তি কবীরা গুণাহে লিপ্ত অথবা সর্বদা ছগীরা গুণাহ করে থাকে, অর্থাৎ যে ব্যক্তি ফরয, ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বিনা শরয়ী ওজরে তরক করে, শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সে ব্যক্তি ফাসিক। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
অতএব, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি মু-ন করা বা ছাটা যেহেতু হারাম ও কবীরা গুণাহ, সেহেতু এক মুষ্ঠির কমে যারা দাড়ি কাটে বা ছাটে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তারাও ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। এরূপ ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি রাখা নাজায়িয, হারাম। এজন্যে দাড়ি মু-ন বা কর্তনকারী ফাসিক। আর ফাসিক ব্যক্তি ইমামতী করা মাকরূহ তাহরীমী। তাই এরূপ ব্যক্তিকে ইমাম বানানো উচিত নয়। (আহসানুল ফতওয়া, পৃষ্ঠা ২৬০)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, দাড়ি মু-ন করা হারাম, দাড়ি মু-নকারী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ফাসিক। তাই এরূপ ব্যক্তিকে তারাবীহ (বা অন্যান্য নামাযের জন্যে) ইমাম হিসাবে নিয়োগ করা জায়িয নেই। এরূপ (ফাসিক) ইমামের পিছনে তারাবীহ (বা অন্যান্য নামায) পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩৫৩, অনুরূপ ফতওয়ায়ে শামী ১ম খ-, ৫২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)
উক্ত কিতাবে এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ আছে যে, দাড়ি মু-নকারী ব্যক্তি প্রকাশ্য ফাসিক (যার ফাসিকী সুস্পষ্ট) “মালা বুদ্দা মিনহু” কিতাবে উল্লেখ আছে, দাড়ি এক মুষ্ঠি হওয়ার পূর্বে মু-ন করা হারাম। (পৃষ্ঠা-১৩০) ....... দ্বীনদার লোক উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ফাসিক ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত দেয়া মাকরূহ তাহরীমী।
“নূরুল ইযাহ” কিতাবে উল্লেখ আছে, ফাসিক ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত দেয়া মাকরূহ তাহরীমী, পৃষ্ঠা-৬২)। তাই দাড়ি মু-নকারী ব্যক্তিকে আযান ও ইক্বামতের অনুমতি দেয়া জায়েয নেই, (বরং) মাকরূহ তাহরীমী। “জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ফাসিক ব্যক্তিকে মুয়াজ্জিন হিসাবে নিয়োগ করা মাকরূহ তাহরীমী, পৃষ্ঠা-৪৪। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ৩য় খ-, পৃষ্ঠা ১৫)
এখানে উল্লেখ্য যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি রাখা, দাড়ি মু-ন করারই নামান্তর।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তনকারী বা মু-নকারী ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া যেরূপ মাকরূহ তাহরীমী, অনুরূপ এরূপ ব্যক্তির আযান ও ইক্বামতও মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)