ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪)
, ০৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ফতওয়া বিভাগ
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল দ্বারা একমুষ্ঠি দাড়ির প্রমাণ:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশাল ভা-ার হতে সবচেয়ে অধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল মুবারক দ্বারাও একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ির আহকাম প্রমাণিত হয়। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يَقْبِضُ عَلَى لِحْيَتِهِ فيَأْخُذُ مَا فَضَلَ عَنِ الْقُبْضَةِ.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকেও বর্ণিত যে, তিনি দাড়ি নিজ মুষ্ঠিতে আবদ্ধ করে বর্ধিতাংশ কেটে ফেলতেন। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা)
এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ন্যায় ফিৎরী হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকারী বা রাবী। স্বয়ং উনাদের আমলও একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ির প্রমাণ বহন করছে। যার দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, ফিৎরাতের বর্ণনা সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাড়ি লম্বা করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাতে একমুষ্ঠির কথা উল্লেখ না থাকলেও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কর্তৃক দাড়ি কাট-ছাঁট করার ক্ষেত্রে একমুষ্ঠি পরিমাণের এক ইঞ্চিও এদিক ওদিক অর্থাৎ কম-বেশি না করা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, একমুষ্ঠি পরিমাণের শর্তও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অবশ্যই উদ্দেশ্য ছিল। মূলতঃ একমুষ্ঠি পরিমাণের আমলই উনাদের দৃষ্টিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল মুবারক। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত রয়েছে।
অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারক দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করতে হবে। আর দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
ফক্বীহগণের মতে দাড়ির শরয়ী মেক্বদার বা পরিমাপ:
দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ সম্বলিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমলের ভিত্তিতে হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা-ছাটা নাজায়িয বা হারাম। আর দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব বাহরূর রায়েক ২য় খ- ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-
الاخذ من اللحية وهى ما دون القبضة كما يفعله بعض المغارية والفحشة الرجال فلم يبحه احد.
অর্থ: একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা, যেটা পাশ্চাত্যবাসী ও দুশ্চরিত্র লোকদের আমল। এটাকে কেউই জায়িয বলেননি। অর্থাৎ সকলেই একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা হারাম বলেছেন।
শরাম্বলালিয়া কিতাবের ২৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-
واما الاخذ من اللحية هى دون القبضة كما يفعله بعض المغاوبة ومخنثة الرجال فلم يبحه احد.
অর্থ: একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা যেরূপ পাশ্চাত্যবাসী ও নপুংষকরা করে থাকে, ইহা কারো মতেই জায়িয নয়।
আর শরীয়ত উনার ফায়সালা হলো- হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, কমপক্ষে দাড়ি একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ আশয়াতুল লুময়াত-এ সুস্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ আছে যে-
وكزاشتن ان بقدر قبضة واجب است.
অর্থ: দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা ওয়াজিব।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা করা বা রাখা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা-ছাটা সম্পূর্ণ হারাম। এটাই আমাদের অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহ উনাদের ফতওয়া। আর এটাই দাড়ির শরয়ী মেক্বদার বা পরিমাপ। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)